বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির পকেট থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যয় হয় যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এত অধিক ব্যয়ের মূল কারণ- বাংলাদেশে কোনোরূপ উন্নত মানের প্রাইভেট বা বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা কিংবা সরকার নিয়ন্ত্রিত জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা না থাকা।
বাংলাদেশে দেখা যায়, রোগীরা চিকিৎসকদের কাছ থেকে নূ্যনতম পাঁচ মিনিট পরামর্শ সময় না পাওয়ায় রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের ওপর আস্থা হারান, এমনকি নামিদামি চিকিৎসকের ওপরও। রোগীর উপসর্গের বর্ণনা শেষ করার আগেই চিকিৎসক রোগীকে একটি ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন। কোন ওষুধ কোন উপসর্গ উপশমের জন্য দিয়েছেন, কখন সেবন করতে হবে খাবার আগে না পরে তা চিকিৎসক বুঝিয়ে বলার আগেই পরবর্তী রোগী পরামর্শ কক্ষে প্রবেশ করেন। কোনটা কোন রোগের ওষুধ এবং এসব ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মিথস্ট্ক্রিয়া রোগী জানার সময় পান না, রোগী ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কিত পুরো তথ্য না জানার অসন্তোষ নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বার ত্যাগ করেন। সামান্য সমস্যা হলে রোগী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অনেক সময়ে অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

কভিড-১৯ সংক্রমণ ও চিকিৎসা

চীনের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের নভেম্ব্বর মাসে নভেল করোনা কভিড-১৯ ভাইরাস আত্মপ্রকাশ করে এবং দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে কভিড-১৯ এর কারণে প্রথম মৃত্যু ঘটে ৮ মার্চ ২০২০। করোনা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মাগুরার চিকিৎসক ডা. খলিলুর রহমান তার অভিজ্ঞতার আলোকে তিন পর্যায়ে ভাগ করে করোনা রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে একটি ছোট লেখা লিখেছিলেন, তা শিক্ষণীয় বলে কিছু অংশ পুনঃউল্লেখ করছি।

'কভিড-১৯ একটি স্পর্শকীয় ভাইরাস যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে বা আশপাশের ৩-৬ ফুটের মধ্যে অবস্থিত বস্তু থেকে ব্যক্তির অসতর্কতার কারণে ছড়িয়ে পড়ে। স্টেফাইলো কক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত ৩-১৪ দিনের মধ্যে কভিড-১৯ উপসর্গ প্রকাশ পায় তিন পর্যায়ে।

প্রথম পর্যায়ে ১-৩ দিন : শুরু হয় সাধারণ জ্বর, গায়ে-মাথায় সামান্য ব্যথা ও শুস্ক কাশি দিয়ে, যোগ হয় নাক দিয়ে হালকা পানি পড়া, হাঁচি-কাশি ও তৃতীয় দিনে মৃদু শ্বাসকষ্ট। চুলকানি ও হাঁচি-কাশি অ্যালার্জির লক্ষণ।

দ্বিতীয় পর্যায় ৪-৬ দিন : হঠাৎ জ্বর বেড়ে ১০২০ থেকে ১০৪০ ফারেনহাইট ওঠে, শুকনো কাশির সঙ্গে শ্নেষ্ফ্মা যুক্ত হয়। সর্বত্র মৃদু ব্যথা বিশেষত গলায়, শ্বাসকষ্ট ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায়, শ্নেষ্ফ্মাসহ হাঁচি-কাশি বৃদ্ধি এবং খাওয়ায় অরুচি ও অনিদ্রা যোগ হয়। নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রকাশমান এবং রোগীর অস্বস্তি রোধের সঙ্গে ভীতি সঞ্চারও লক্ষণীয়।

তৃতীয় পর্যায় : রক্তে অপিজেন সংমিশ্রণ বিভ্রাটে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ও কফ-শ্নেষ্ফ্মা বৃদ্ধি, বুকের ভেতর গড়গড় শব্দ শোনা যায় এবং স্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকায় অসুবিধা হয়, রোগী ক্রমে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।'

করোনা রোগীর চিকিৎসা ও ব্যয়

প্রথম পর্যায়ে রোগীকে আলাদা ঘরে রেখে আলাদাভাবে দেখাশোনা করাই মূল কাজ। এলাকার একজন সাধারণ চিকিৎসক বা জেনারেল প্রাকটিশনারের নিয়মিত পরামর্শ নিলে ভালো হয়। প্রায় সত্তুর থেকে আশি ভাগ রোগী নিরাময় হন নিজ বাড়িতে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ও স্নেহ-ভালোবাসায়। বোকামি করতে হবে না একই ওষুধ অকারণে বেশি দামে কিনে, এতে ভালোর চেয়ে অন্য সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

দিনে ১টা বা ২টা করে ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিনে এক থেকে তিনবার সেবন যুক্তিসঙ্গত। প্যারাসিটামলের সঙ্গে অন্য উপাদান যেমন- ক্যাফেইন বা ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত না থাকা ভালো, এতে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মতো উৎপাদিত, জিনেরিক নাম জি-প্যারাসিটামল, প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য সত্তর পয়সা। অন্য দিকে বাণিজ্যিক নামে বাজারজাতকৃত নাপা, নাপা প্লাস, নাপা এপট্রা প্রভৃতি এবং অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত উপাদানসহ প্রস্তুত প্রতি ট্যাবলেট দুই টাকা থেকে আড়াই টাকায় বিক্রি হয়। এতে রোগ দ্রুত সারে না, কিন্তু অর্থের অপচয় হয়।

হাঁচি-কাশি অর্থাৎ অ্যালার্জি নিবারণের অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ ৪ মিলিগ্রামের ক্লোরোফেনারামিন অথবা জি-অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট দিনে একটি করে খেলে ভালো উপকার হয়। প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য মাত্র পঁচিশ পয়সা। গরম চা, মধু ও আদায় গলায় আরাম পাওয়া যায়। চুষে চুষে জি-ভিটামিন সি-২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট দিনে ৩-৪টা খাওয়া যেতে পারে, প্রতি ট্যাবলেট জি ভিটামিন সি'র মূল্য এক টাকা ত্রিশ পয়সা। অনেকে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রামের একটি বা দুটি জিঙ্ক ট্যাবলেট গ্রহণের পরামর্শ দেন, খরচ প্রতি ট্যাবলেট এক টাকা।

কোয়ারেন্টাইন রুমে, যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকার জন্য নির্ধারিত, অবশ্যই এক বোতল ১০০ মিলিলিটারের জাইনানল বা জি-ক্লোরহেপাডিন থাকা দরকার জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ১০০ মিলিলিটারের মূল্য ১০০ টাকা। সাবানও ব্যবহার করবেন। ভালো উপকার পাওয়া যায় গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা টিংচার আয়োডিন কিংবা ইউক্যালিপট্যাস তেল মিশিয়ে গরম বাষ্প নিলে। অন্য সমস্যা যেমন- পেট বা বুক জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিড ভাব লাগলে দিনে একটি বা দুটি ২০ মিলিগ্রামের জি-ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল সেবন করলে নিরাময় নিশ্চিত। খরচ- প্রতি ক্যাপসুলের মূল্য তিন টাকা।

প্রথম পর্যায়ে নিরাময়ে ব্যর্থ ২০ শতাংশ রোগীকে অবশ্যই নিকটবর্তী সরকারি বা বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হতে হবে। তবে ভর্তির আগে নিশ্চিত হতে হবে, সেখানে ছোট অপিজেন পালস অপিমিটার যন্ত্র এবং রোগীকে প্রয়োজনমাফিক সরাসরি অপিজেন দেওয়ার সুবিধা আছে কিনা। রক্তে পরিমিত অপিজেন সংমিশ্রিত না হলে রোগীকে মুখ বা নাক দিয়ে অপিজেন কিছুক্ষণ দিতে হয়। দেখতে হবে অপিজেন সংমিশ্রণ ৯২ শতাংশ- ৯৫ শতাংশের মধ্যে যেন থাকে।

অতিরিক্ত অপিজেন অপচয়, ক্ষতিকরও

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক তারিক আলম করোনা পজিটিভ দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগীদের প্রতিদিন একটি অ্যান্টি-হেলমিনথিক আইভারম্যাকটিন যার প্রতি ট্যাবলেটের মূল্য পাঁচ টাকা এবং ১০০ মিলিগ্রামের ডপিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবলেট দিনে দু'বার পাঁচ দিন সেবন করিয়ে রোগ নিরাময় লক্ষ্য করেছেন।

হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি প্রথম দিনে ইনজেকশন মিথাইল প্রেডনিশোলন ২৫০ মিলিগ্রাম দুটি কিংবা ইনজেকশন ডেপামেথাসন ৪ মিলিগ্রাম মূল্য প্রতি ইনজেকশন মাত্র ১৫ টাকা দিনে দু'বার তিনদিন, খরচ ৯০ টাকা।

নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য কো-এমপিক্লেভ ১-২ গ্রাম দিনে তিনবার কিংবা এরিত্রোমাইসিন বা এজিথ্রোমাইসিন অথবা ক্যাপসুল সেফেপিম মূল্য ২০ টাকা, পাঁচদিন সেবনের জন্য দেওয়া হয়। দিনে কয়েকবার গরম জলের বাষ্প বা মেশিনের মাধ্যমে সালবুটামল সল্যুশন .০৫ এমজি মূল্য প্রতি ভায়াল ৮০ টাকা কিংবা বুডিসোনাইড .০৫ এমজি অথবা এন-এসিটিল সংমিশ্রণে নেবুলাইজার ব্যবহারে শ্নেষ্ফ্মা বের করায় খুব উপকার পাওয়া যায়।

ব্যয়বহুল অ্যান্টিভাইরাল রেমডেসিভির ব্যবহারে নিরাময়ে তিনদিন সাশ্রয় করায়। অন্য অ্যান্টি-ভাইরাল ব্যবহারে সুফলের প্রমাণ নেই। অর্থের অপচয় মাত্র। শিক্ষিত পেশাজীবীরাও প্রতারিত হচ্ছেন অপ্রমাণিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় কিনে। তাদের জ্ঞানচক্ষু কবে উন্মোচিত হবে?

আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৮-১০ দিন ভালো নার্সিং সেবা ও নিয়মিত চিকিৎসা পেলে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রায় সব রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, অনধিক ১০ শতাংশ রোগী বিভিন্ন জটিলতা ও একাধিক বিকল অঙ্গের সমস্যা নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেন। তৃতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং মূলত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে চিকিৎসা করাতে হয়। করোনা রোগে মৃত্যুহার ২-৩ শতাংশ সীমিত।

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা

সারা পৃথিবীতে এমনকি উন্নত বিশ্বের চিকিৎসকরা সহজে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সুলভ ওষুধ থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে অধিকতর মূল্যের ওষুধ লেখেন। নতুন ওষুধের ভুল প্রয়োগ প্রায়শই লক্ষণীয় ঘটনা। এই সমস্যা রহিত করার লক্ষ্যে প্রায়ই পরামর্শ প্রকাশ করে থাকেন আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিটি 'নাইস' বা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এপেলেন্স। সময় মতো চিকিৎসা না হলে বা চিকিৎসা বিভ্রাট হলে কভিড-১৯ রোগের মূল সমস্যা- হাসপাতালে ভর্তির সময় বা ভর্তির ৪৮ ঘণ্টা আগে বাড়ি ও এলাকার পরিবেশ থেকে অর্জিত নিউমোনিয়া অথবা হাসপাতালে অন্য কারণে আগত রোগীরা হাসপাতালের পরিবেশ থেকে অর্জিত সংক্রমণ দ্রুত ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। সে সমস্যার দ্রুত চিকিৎসার জন্য মে, ২০২০ প্রকাশিত আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ কমিটি নাইসের সুপারিশগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত পাঁচদিন সেব্য। তবে ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষত ফুসফুসের সমস্যায় ২-৩ সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।


নিউমোনিয়ার চিকিৎসা

স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে অর্জিত পরিমিত ও তীব্র নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় মুখে ডপিসাইক্লিন ২০০ মিলিগ্রাম প্রথম দিনে এবং দ্বিতীয় দিন থেকে ১০০ মিলিগ্রাম করে বা কো-এমপিক্লেব ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে তিনবার সঙ্গে ক্লেরিথ্রোমাইসিন ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে দু'বার সেবন করতে হবে। রোগের তীব্রতা বেড়ে গেলে লেভোফোক্লাসিন ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে একবার বা দু'বার পাঁচদিন সেব্য। মুখে সেব্য অ্যন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্তঃশিরা পদ্ধতিতে ওপরে উল্লেখিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

হাসপাতালে অর্জিত প্রতিহত নিউমোনিয়া হওয়ার অধিকতর আশঙ্কা না থাকলে আগে উল্লেখিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মুখে পাঁচ দিন সেব্য নতুবা হাসপাতালে অর্জিত নিউমোনিয়ার তীব্রতা, প্রদাহ কিংবা ভেন্টিলেটর সম্পৃক্ত বা উদ্বুদ্ধ নিউমোনিয়া অথবা চিকিৎসা প্রতিহত হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা থাকলে নিম্নলিখিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আন্তঃশিরায় দ্রুত ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হচ্ছে-

পিপারসিলিন মিশ্রিত টেজোব্যাকটাম, প্রতিবার ৪.৫ গ্রাম করে দিনে তিনবার ইনজেকশন দেওয়া শুরু করে, প্রয়োজনে একই মাত্রায় দিনে চারবার দেওয়া যেতে পারে। সেফটাডিজিম ২ গ্রাম করে দিনে তিনবার আন্তঃশিরায় ইনজেকশন। কোনো কারণে ওপরে উল্লেখিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে লেভোফ্লোপাসিন ৫০০ মিলিগ্রাম দিনে দু'বার বা ততোধিক বার আন্তঃশিরায় দেওয়া যুক্তিযুক্ত।

মেথিসিলিন প্রতিহতকরণে সমর্থ স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়স প্রদাহে অবশ্য দেয়- ভ্যানকোমাইসিন প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ২০ মিলিগ্রাম হিসেবে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম দিনে তিনবার আন্তঃশিরায় বা টাইকোপ্লানিন প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ৬ মিলিগ্রাম দিয়ে শুরু দিনে তিনবার করে পরে দিনে একবার দিলে কার্যকর হয়। লিনেজোলিড ৬০০ মিলিগ্রাম দিনে দু'বার মুখে সেব্য কিংবা বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে একবার ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওষুধের মূল্যের প্রতি ক্লিনিসিয়ান বা বিশেষজ্ঞদের নজর রাখা উচিত।

দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, নাইসের মতো সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশগুলো দেশের ক্লিনিশিয়ান বা বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ না করায় দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিহতকরণ জীবাণু প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে।

আইসিইউ রোগীর চিকিৎসা ব্যয়

মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে আসা একজন আইসিইউ রোগীর চিকিৎসা ব্যয় কত? শরীরে করোনা রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে ২৩ মে ২০২০ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ৭৮ বছর বয়স্ক বিকল কিডনি রোগী জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ২৪ মে ২০২০ তারিখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জিআর-র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় কভিড-১৯ পজিটিভ প্রমাণিত হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রিয়াল টাইম পিসিআর-এ করোনা পজিটিভ প্রমাণিত হয়। ৩০ মে রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ে, মানসিক আচরণে বিশৃঙ্খলা ও আচ্ছন্ন ভাব দেখা যায়, রক্তে অপিজেন মিশ্রণ ৮৫ শতাংশ নেমে এলে রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। রোগীকে ওই অবস্থায় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে করোনা নির্ধারিত আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। দু'জন বিশেষজ্ঞ- অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার মামুন মুস্তাফী এবং আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদ সার্বক্ষণিকভাবে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা রোগীর পাশে বসে থেকে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, অপিজেন সংমিশ্রণ ৯৪-৯৬ শতাংশ নিশ্চিত করার জন্য প্রতি মিনিটে নূ্যনতম ছয় লিটার অপিজেন সরবরাহ এবং তারা ৯ রকমের অ্যান্টিবায়োটিক ১০ দিনে বিধি-ব্যবস্থা দিয়েছেন।

এত ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। সম্ভবত নিজেদের ওপর আস্থার অভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ (?) বয়স্ক রোগী বিধায় রোগীর অবস্থার দ্রুত উন্নতির জন্য বিশেষজ্ঞরা ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক বদলিয়েছেন। স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন। তার বুকের এপ-রেতে উভয় দিকে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তার রক্তের মৌলিক পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল তবে সি রি-অ্যাকটিভ প্রোটিন বা সিআরপি ও ডি-টাইমার বৃদ্ধি পায়। সালবুটামল ও বুডেসোনাইড দিয়ে নেবুলাইজার শুরু করা হয়। অধ্যাপক তারিক আলমের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় অ্যান্টিহেলমিনথিক ইভারম্যাকটিন ও অ্যান্টিবায়োটিক ডপিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড দিয়ে। স্টেস্নড পদ্ধতিতে প্রতিদিন ডায়ালাইসিস করানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমোটোলজির অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমদ খানের পরামর্শে তিনবার প্লাজমা ট্রান্সফিউশন দেওয়া হয়। প্লাজমা ট্রান্সফিউশনে রোগী উজ্জীবিত হন, প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক হানিফও একই পরামর্শ দিয়েছিলেন।

জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরী সপ্তাহে তিন বার হেমোডায়ালাইসিস নিচ্ছেন বিগত চার বছর যাবত। সঙ্গে পাচ্ছেন উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসা। গত বছর রোগী তিন মাস চিকিৎসা করিয়ে হেপাটাইটিস সি মুক্ত হয়েছেন। তার একটা পুরোনো মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন রয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনা আক্রান্ত সব গণস্বাস্থ্য কর্মী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের খরচে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে সব পরীক্ষা ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। কর্মীকে কেবল খাওয়া খরচ বহন করতে হয়।

গণস্বাস্থ্য আইসিইউতে প্রতিদিনের চার্জ

সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক চার্জ ভিন্ন হয়। যেমন- গণস্বাস্থ্য বীমাবিহীন ২৫ হাজার টাকা, ধনী বা উচ্চবিত্ত ২০ হাজার টাকা, উচ্চমধ্যবিত্ত ১৮ হাজার টাকা, মধ্যবিত্ত ১৫ হাজার টাকা, নিম্নবিত্ত ১৩ হাজার টাকা, দরিদ্র আট হাজার টাকা, অতি দরিদ্র তিন হাজার টাকা। এই প্যাকেজে সব ওষুধের মূল্য, অপিজেন, রোগ নির্ণয় বিল, আইসিইউ ভাড়া, যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ফি ধরা আছে। অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। বিশেষজ্ঞরা দিনে-রাতে যতবারই রোগীকে পরিদর্শন করবেন ও পরীক্ষা করবেন অতিরিক্ত কোনো ফি চার্জ হবে না।

রোগ নির্ণীত হওয়ার পর রোগীকে প্রথম দশ দিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে রোগীকে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী করোনামুক্ত বা কভিড-১৯ নেগেটিভ হন ১৩ জুন ২০২০। তবে এখনও কভিড-উত্তর পরিশ্রান্তি রোগে ভুগছেন এবং হাসপাতালে আছেন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন চার্জ

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনের শ্রেণিভিত্তিক দৈনিক চার্জ ভিন্ন হয়। যেমন- গণস্বাস্থ্য বীমাবিহীন সাত হাজার টাকা, ধনী বা উচ্চবিত্ত ছয় হাজার টাকা, উচ্চমধ্যবিত্ত পাঁচ হাজার টাকা, মধ্যবিত্ত চার হাজার ৫০০ টাকা, নিম্নবিত্ত তিন হাজার টাকা। দরিদ্র শ্রেণি ও অতি দরিদ্র শ্রেণি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন পাবেন না।

বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় অত্যাধিক যা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, যা আগে বলা হয়েছে, নিজ পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য ব্যয় পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রয়োজনে প্রথম দুই সপ্তাহ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রোগীর আর্থিক বিবেচনায় হয় কেবিনে কিংবা দরিদ্র রোগীকে সরাসরি জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় যার চার্জ খুবই কম।

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে অবস্থান কালে খরচ বিশ্নেষণ করে দেখা যেতে পারে। সর্বমোট ব্যয় হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ২৩ টাকা ১৪ পয়সা। এর মধ্যে ৫৩ দিনে হাসপাতালে অবস্থান ব্যয়- নিবিড় পরিচর্যা শয্যা বা আইসিইউতে ১০ দিনে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। কেবিনে ৪৩ দিন অবস্থানে এক লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা। মোট ব্যয় তিন লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা।

এপ-রে ও অন্যান্য রোগ নির্ণয় : যেমন- বুকের এপ-রে ১৮ বার, আলট্রাসনোগ্রাফি একবার, বুক ও মস্তিস্কের সিটি স্ক্যান একবার, ইসিজি তিনবার, ইকোকার্ডিওগ্রাম একবার। মোট ব্যয় ১৭ হাজার ৪০০ টাকা।

প্যাথলজি ও অন্যান্য পরীক্ষা :যেমন- মৌলিক রক্ত পরীক্ষা ২০ বার, পায়খানা-প্রস্রাব রুটিন পরীক্ষা তিনবার, প্রস্রাব বিশ্নেষণ গ্রাম স্টেইন দু'বার, কফ পরীক্ষা চারবার, গ্রাম স্টেইন পরীক্ষা ১৮ বার, পায়খানা বিশ্নেষন তিনবার, ব্লাড কালচার (রক্তের বিশ্নেষণ ও জীবাণু তথ্য সংগ্রহ) ১৮ বার, সিরাম ইউরিয়া ইলেকট্রলাইসিস ১৪ বার, সিরাম এলবুনিন একবার, সিরাম ম্যাগনেসিয়াম একবার, ভিটামিন ডি চারবার, ডি টাইমার ছয়বার, রক্ত মিলানো (রক্তের ক্রস ম্যাচ) তিনবার, রক্তে ট্রপোনিন (হূৎপিণ্ডের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ) ১২ বার, সিআরপিাটিন চারবার, যকৃতের কার্যকারিতা পরীক্ষা একবার, লিপিড প্রোফাইল রক্তে চর্বির বিশ্নেষণ ১৮ বার, সিরাম ক্রিয়েটিনিন (কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা) একবার, কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ একবার, ইউরিক অ্যাসিড দু'বার, সিরাম ক্যালসিয়াম দু'বার, সিরাম ফসফরাস একবার, আরবিএস বা রক্তে শর্করা পরীক্ষা তিনবার, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ একবার। মোট ব্যয় ৭৯ হাজার ৯০ টাকা।

এই খরচের মধ্যে রোগীর আত্মীয়-স্বজনের আসা-যাওয়া, খাওয়াদাওয়া, সেবিকা (আয়া) রাখা বিভিন্ন শ্রেণির বেতনবিহীন কর্মীদের চাহিদা, বকশিশ প্রভৃতির খরচ হিসেবে ধরা হয়নি।

ওষুধ ও অপিজেন বাবদ ব্যয় : বাংলাদেশে ওষুধের মূল্য নির্ধারণের জন্য দুটি নিয়ম প্রচলিত আছে। ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি অনুসরণ করে সব ওষুধের পরিবর্তে মাত্র ১১৭টি ওষুধের মূল্য স্থির করে দিয়ে থাকে সরকার যা এমআরপি বলে পরিচিত। বাকি সব ওষুধের মূল্য ওষুধ কোম্পানিগুলো সরাসরি নির্ধারণ করে থাকে কোম্পানির মর্জি মতো অধিক মূল্যে, এটাকে আইপি পদ্ধতি বলা হয়। এখানেই সব সমস্যা। এই পদ্ধতি ১৯৯৪ সালে চালু হয়, যা আজও চালু আছে।

অপিজেন নিবিড় পরিচর্যার প্রধান প্রয়োজন দ্রুত পর্যাপ্ত শরীরের প্রয়োজনমাফিক সংমিশ্রণ অর্থাৎ প্রতি মিনিটে গড়ে ৬-১০ লিটার অপিজেনের ক্রমাগত অবাধ অব্যাহত সরবরাহ অর্থাৎ আইসিইউ প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই একজন রোগীকে অপিজেন দিতে হবে, তাতে দৈনিক অপিজেন ব্যয় হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার লিটার, গড়ে ১২ হাজার লিটার। ৭-১০ দিন পরে কম অপিজেন খরচ হয়। প্রতি ঘন মিটার বা ১০০০ লিটার অপিজেনের ক্রয় মূল্য ৪৭ টাকা। মেডিকেল গ্যাস হিসেবে ব্যবহার উপযোগী অপিজেনের জন্য উৎপাদক জার্মানির বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডসে ফ্যাক্টরিতে যাতায়াত, খালি সিলিন্ডার অপিজেনে ভর্তি করা, শ্রমিক সেবা, মূসক প্রভৃতি খরচ যোগ করলে প্রতি এক হাজার লিটার অপিজেনের ব্যয় দাঁড়ায় ৭০ টাকা। আইসিইউতে ১০ দিনে ব্যয় আট হাজার ৪০০ টাকায় অপিজেন এবং কেবিনে ৪৩ দিনে দৈনিক অপিজেন ব্যয় অনূর্ধ্ব তিন হাজার লিটার অর্থাৎ ২১০ টাকা প্রতিদিন।

৫৩ দিনে অপিজেন বাবদ ব্যয় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা; অ্যান্টিবায়োটিক বাবদ ২৪,৬৪৫.০০টাকা; অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টিহেলমিনথিক; ট্যাবলেট ফেভিনাভির, ট্যাবলেট আইভার-ম্যাকটিন, ট্যাবলেট ভরিকোনাজল প্রভৃতি ২১ হাজার ২৯০ টাকা; ষ্টেরয়েড বাবদ দুই হাজার ৯৪৪ টাকা; রক্ত জমাট বাঁধা নিবারক অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট বাবদ এক হাজার ৩৮৪ টাকা ১৪ পয়সা; এলবুমিন, প্লাজমা, ভিটামিন প্রভৃতি বাবদ ২৫ হাজার ৯৮৭ টাকা। অন্যান্য ওষুধ বাবদ দুই হাজার ৬৮৩ টাকা; অন্যান্য চিকিৎসা (ভেপোরাইজেশন, নেবুলাইজেশন, ফিজিওথেরাপি প্রভৃতি) বাবদ ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এই আট খাতে মোট ব্যয় এক লাখ পাঁচ হাজার ১৩৩ টাকা ১৪ পয়সা।

শেষের কথা

প্রথমত, নিজ বাসায় পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসায় আলাদা ঘরে থেকে সাধারণ চিকিৎসায় প্রায় ১০০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। খরচ খুবই কম। গণ স্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের জি-প্যারাসিটামল (মূল্য প্রতি ট্যাবলেটের সত্তর পয়সা, জি-অ্যান্টিহিস্টামিন পঁচিশ পয়সা, জি-ভিটামিন সি এক টাকা ত্রিশ পয়সা) ও স্টিম বাষ্প দিনে কয়েকবার ব্যবহার করুন, মধুও খাবেন।

দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলে হাসপাতাল বিশেষে খরচ দৈনিক দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে নিরাময়ের হার দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ৯০ শতাংশ।

তৃতীয়ত, আইসিইউতে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ব্যয় দিনে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। নামিদামি অপ্রমাণিত ও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহারে এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরীক্ষায়। দেশের সব আইসিইউতে পর্যাপ্ত সেবার ব্যবস্থা নেই। আইসিইউতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যাপ্ত জুনিয়র চিকিৎসক ও নার্স সব আইসিইউতে নেই; ব্যবহূত ওষুধের কার্যকারিতা ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত এবং তারা দ্রুত দৌড়ে সেবা দিতে অভ্যস্ত নন। দেশের সেরা আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদকে দ্রুত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তিনি গণস্বাস্থ্য আইসিইউর দায়িত্বে আছেন। তিনি অত্যন্ত নিবেদিত এবং কানাডা, ব্রিটেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আইসিইউ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজীব মোহাম্মদ ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ডিপ্লোমা ইন ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন অর্জন করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সিসিইউ, লিভা আইটিইই (আইসিইউ) ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি আইসিইউতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত হাসপাতালগুলোর এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও বিশেষ কর্মদক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরেছেন। আইসিইউতে রোগী থাকলে তিনি দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা সময় হাসপাতালে কাটান। আইসিইউ বিশেষজ্ঞরা জুনিয়র চিকিৎসক বা নার্সদের ফোন পাওয়ার পর কত দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছেন তার ওপর আইসিইউ রোগীর জীবন নির্ভরশীল। তাকে দ্রুত ডাকার জন্য তিনি হাসিমুখে সব জুনিয়রকে ধন্যবাদ জানান, তাদের সঙ্গে নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে রোগী দেখেন, রোগী পরীক্ষা করা শেখান এবং পরে আলাদাভাবে প্যারামেডিক, ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার এবং রোগীর আত্মীয়স্বজনকে সযত্নে রোগীর সমস্যা বুঝিয়ে বলেন। স্মরণ রাখতে হবে চিকিৎসক ও সেবিকাদের অক্লান্ত সেবার পরও আইসিইউতে মৃত্যুহার খুব বেশি, ৫০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে।

চতুর্থত, ওষুধ কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত আইপি প্রথা অনতি বিলম্বে বাতিল করে সরকার ১৯৮২ সালের 'জাতীয় ওষুধনীতি ১৯৮২'-এর পুরো অনুসরণ করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার এবং অপারেশনের দর স্থির করে দিয়ে পুরোপুরি কার্যকর করে ওষুধের সর্বোচ্চ ক্রয়মূল্য বা এমআরপি ধার্য করলে ক্রয়ে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার চার্জ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ কমবে।

পঞ্চমত, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এবং সব ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশনের নিয়মাবলি সহজ হওয়া প্রয়োজন। সরকার নূ্যনতম যন্ত্রপাতির তালিকা স্থির করে দেবে, কয়জন ডাক্তার, কয়জন ডিপ্লোমা পাস নার্স থাকতে হবে- এ নিয়ে সরকারের কাগজে নির্দেশনা কেবল দুর্নীতি বাড়াবে, বহু রিজেন্ট সাহেদ তৈরী করছে এবং আরও নতুন করে তৈরি হবে। প্রাইভেট প্রাকটিসে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ফি চিকিৎসক নিজে স্থির করবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের নাক না গলানোই উত্তম।

ষষ্ঠত, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে সব নাগরিকের সুলভে সহজে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতা। বাংলাদেশে সামাজিক শ্রেণিভিত্তিক জাতীয় স্বাস্থ্যবীমা বিবেচনার সময় এসেছে। কয়জন চিকিৎসক, কয়জন নার্স (সেবিকা) টেকনিশিয়ান দিয়ে ক্লিনিক চালাবেন তা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা স্থির করবেন। ব্যক্তি মালিকরা লাভ ও সেবা দুটিই ভালো বোঝেন।

লেখকদ্বয় যথাক্রমে ট্রাস্টি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মেডিকেল অফিসার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল