- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভব
শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভব
সমকালীন প্রসঙ্গ

আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সংসদীয় কমিটি একটি সমীক্ষা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সুপারিশটি সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবসম্মত। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সিভিএফ সভাপতির কাছে এর আগেই দাবি জানানো হয়েছিল। অবশ্য ২০১৬ সালে সিভিএফের এক সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। গত ডিসেম্বরে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সংগঠন (সিভিএফ)-সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমরা জানি, ইতোমধ্যে আলবেনিয়া, কঙ্গো, আইসল্যান্ড, প্যারাগুয়ের মতো দেশ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে ফেলেছে। আমাদেরও না পারার কোনো কারণ নেই। এ বছরেই প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের জ্বালানি বিষয়ক কর্মসূচি ও 'সোলারজিস'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি বর্গমিটারে ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে চার ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া ৭২ শতাংশ এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৯ ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে।
সমস্যাটি অন্য জায়গায়। কথায় আছে, সরষের ভেতরেই ভূত থাকে। গলদটি হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত বিষয়ক মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) প্রণয়ন ও পরিমার্জনে। এই কাজে যুক্ত ছিল জীবাশ্ম জ্বালানির সমর্থক ও বিনিয়োগকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান টেপকো ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান প্রাইসকুপার হাউস। সেই কারণে এ পরিকল্পনায় ২০৪১ সালে মাত্র ৩ দশমিক ৮ থেকে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এত কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণ হিসেবে বলা হয় যে, সৌরবিদ্যুৎ থেকে রাতে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না এবং সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর্যাপ্ত জমি বাংলাদেশের নেই। এটি খোঁড়া যুক্তি, কারণ ২০১৬ সালে প্রকাশিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে দেশে প্রায় ১৮ লাখ একর অকৃষি খাসজমি আছে। এর মধ্যে ১০ লাখ একর ব্যবহারযোগ্য অকৃষি খাসজমি। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে তিন একর জমির দরকার হলে শুধু খাসজমিতেই সাড়ে তিন লাখ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া চাষযোগ্য কৃষিজমি আছে দুই কোটি ১১ লাখ একর। সমন্বিত কৃষি-বিদ্যুৎ (এগ্রিভোল্টাইক্স) প্রবর্তন করলে প্রতি ১০ একর কৃষিজমিতে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। উপরন্তু, বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে যেসব ব্যাটারি (ইএসএস) পাওয়া যায়, তা বাংলাদেশের জন্য যথাযথ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আমরা সংরক্ষণের সক্ষমতা আরও অর্জন করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কেলি ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে শুধু সৌরবিদ্যুৎ থেকেই ৫৩ হাজার থেকে এক লাখ ৫৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া বায়ুকল থেকে দেড় লাখ, বায়োগ্যাস থেকে সাড়ে তিন হাজার ও ভূতাপ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। গত ২৯ জুলাই সমকালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দীপাল চন্দ্র বড়ুয়াও বাংলাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অগ্রগতি বিবেচনায় নিলে ২০৫০ সাল নয় বরং ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব।
কিন্তু এ জন্য প্রথমেই বিদ্যুৎ-গ্রাহকদের বিনামূল্যে নেট-মিটারিং ব্যবস্থা করে দেওয়া দরকার, যাতে বিদ্যুতের ভোক্তারাই ভোক্তা-উদ্যোক্তায় পরিণত হন। আশার কথা হলো, এ ধরনের উদ্যোগের বিপরীতে জাতিসংঘ পরিচ্ছন্ন উন্নয়ন ব্যবস্থা (সিডিএম) থেকে অর্থ পাওয়া যায়। প্রাপ্ত অর্থ যাতে সহজে ভোক্তা-উদ্যোক্তাদের কাছে র্পৌছাতে পারে তার ব্যবস্থা করা দরকার। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় সিডিএম কমিটির শাখা জেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা দরকার। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কেন্দ্র ভাড়া ও অন্যান্য ভর্তুকি বন্ধ করে সৌরবিদ্যুতের উদ্যোক্তাদের নগদ ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, সৌরবিদ্যুতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ন্যায্য দাম দিতে হবে যাতে এ ধরনের উদ্যোগ লাভজনক হয়। দুনিয়াজুড়ে সৌরবিদ্যুতের দাম অবিশ্বাস্য হারে কমে আসছে। গত ১০ বছরে ভারতে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ ১৭ টাকা থেকে ২ টাকা ৬৭ পয়সায় নেমে এসেছে। কিন্তু সেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি ইউনিটের জন্য সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা উচিত।
তৃতীয়ত, সৌরবিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় মডিউল, ইএসএস ও অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক্ক, সম্পূরক শুল্ক্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাতিল করা দরকার, যাতে এসবের খরচ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে আসে। এই উদ্যোগের ফলে সরকারের যে সামান্য আর্থিক ক্ষতি হবে সেটি আবার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্র ভাড়া থেকে বেঁচে যাবে। পরিবেশ-প্রতিবেশের যে উপকার হবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই ভূমিকা রাখবে।
চতুর্থত, বিদ্যমান সাবস্টেশনগুলো ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তাবান্ধব নয়। একটি এক মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ পাঠাতে হলে তা কোনোক্রমেই লাভজনক হবে না। তাই প্রত্যেক গ্রাম বা গ্রামের কাছাকাছি স্বল্প-ভোল্টের সঞ্চালন সাবস্টেশন নির্মাণ করতে হবে যাতে গ্রামভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদকরা সহজেই জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেন।
তবে সবকিছুর আগে দরকার বিদ্যুৎ খাত বিষয়ক মহাপরিকল্পনার আগাপাছতলা পুনর্বিন্যাস। এই পুনর্বিন্যাসের জন্য দরকার আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সুবিদিত দেশি বিশেষজ্ঞ- যারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দেশের জলবায়ু, ভূমি, নদী, বন, কৃষি, মানুষ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার ভাবনা মাথায় নিয়ে একটি বাস্তবভিত্তিক বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, যা পরিবেশসম্মত, সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে মিলেমিশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এই কাজটুকু করতে পারলেই শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করার ধারণাটি বাস্তবে রূপ নিতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না; ২০৫০ সালের আগেই আমরা এ লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবো।
সদস্য সচিব, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা
বিষয়ক কর্মজোট
আমরা জানি, ইতোমধ্যে আলবেনিয়া, কঙ্গো, আইসল্যান্ড, প্যারাগুয়ের মতো দেশ শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে ফেলেছে। আমাদেরও না পারার কোনো কারণ নেই। এ বছরেই প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের জ্বালানি বিষয়ক কর্মসূচি ও 'সোলারজিস'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতি বর্গমিটারে ঘণ্টায় গড়ে সাড়ে চার ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া ৭২ শতাংশ এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৯ ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারে।
সমস্যাটি অন্য জায়গায়। কথায় আছে, সরষের ভেতরেই ভূত থাকে। গলদটি হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত বিষয়ক মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) প্রণয়ন ও পরিমার্জনে। এই কাজে যুক্ত ছিল জীবাশ্ম জ্বালানির সমর্থক ও বিনিয়োগকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান টেপকো ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান প্রাইসকুপার হাউস। সেই কারণে এ পরিকল্পনায় ২০৪১ সালে মাত্র ৩ দশমিক ৮ থেকে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এত কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কারণ হিসেবে বলা হয় যে, সৌরবিদ্যুৎ থেকে রাতে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না এবং সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর্যাপ্ত জমি বাংলাদেশের নেই। এটি খোঁড়া যুক্তি, কারণ ২০১৬ সালে প্রকাশিত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে দেশে প্রায় ১৮ লাখ একর অকৃষি খাসজমি আছে। এর মধ্যে ১০ লাখ একর ব্যবহারযোগ্য অকৃষি খাসজমি। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে তিন একর জমির দরকার হলে শুধু খাসজমিতেই সাড়ে তিন লাখ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া চাষযোগ্য কৃষিজমি আছে দুই কোটি ১১ লাখ একর। সমন্বিত কৃষি-বিদ্যুৎ (এগ্রিভোল্টাইক্স) প্রবর্তন করলে প্রতি ১০ একর কৃষিজমিতে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। উপরন্তু, বিদ্যুৎ সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে যেসব ব্যাটারি (ইএসএস) পাওয়া যায়, তা বাংলাদেশের জন্য যথাযথ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আমরা সংরক্ষণের সক্ষমতা আরও অর্জন করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কেলি ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির গবেষণার প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে শুধু সৌরবিদ্যুৎ থেকেই ৫৩ হাজার থেকে এক লাখ ৫৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়া বায়ুকল থেকে দেড় লাখ, বায়োগ্যাস থেকে সাড়ে তিন হাজার ও ভূতাপ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। গত ২৯ জুলাই সমকালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট দীপাল চন্দ্র বড়ুয়াও বাংলাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নবায়নযোগ্য জ্বালানির অগ্রগতি বিবেচনায় নিলে ২০৫০ সাল নয় বরং ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব।
কিন্তু এ জন্য প্রথমেই বিদ্যুৎ-গ্রাহকদের বিনামূল্যে নেট-মিটারিং ব্যবস্থা করে দেওয়া দরকার, যাতে বিদ্যুতের ভোক্তারাই ভোক্তা-উদ্যোক্তায় পরিণত হন। আশার কথা হলো, এ ধরনের উদ্যোগের বিপরীতে জাতিসংঘ পরিচ্ছন্ন উন্নয়ন ব্যবস্থা (সিডিএম) থেকে অর্থ পাওয়া যায়। প্রাপ্ত অর্থ যাতে সহজে ভোক্তা-উদ্যোক্তাদের কাছে র্পৌছাতে পারে তার ব্যবস্থা করা দরকার। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় সিডিএম কমিটির শাখা জেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করা দরকার। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কেন্দ্র ভাড়া ও অন্যান্য ভর্তুকি বন্ধ করে সৌরবিদ্যুতের উদ্যোক্তাদের নগদ ভর্তুকি দেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, সৌরবিদ্যুতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ন্যায্য দাম দিতে হবে যাতে এ ধরনের উদ্যোগ লাভজনক হয়। দুনিয়াজুড়ে সৌরবিদ্যুতের দাম অবিশ্বাস্য হারে কমে আসছে। গত ১০ বছরে ভারতে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ ১৭ টাকা থেকে ২ টাকা ৬৭ পয়সায় নেমে এসেছে। কিন্তু সেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতি ইউনিটের জন্য সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা উচিত।
তৃতীয়ত, সৌরবিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় মডিউল, ইএসএস ও অন্যান্য সরঞ্জামের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক্ক, সম্পূরক শুল্ক্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাতিল করা দরকার, যাতে এসবের খরচ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে আসে। এই উদ্যোগের ফলে সরকারের যে সামান্য আর্থিক ক্ষতি হবে সেটি আবার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্র ভাড়া থেকে বেঁচে যাবে। পরিবেশ-প্রতিবেশের যে উপকার হবে তা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই ভূমিকা রাখবে।
চতুর্থত, বিদ্যমান সাবস্টেশনগুলো ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তাবান্ধব নয়। একটি এক মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ পাঠাতে হলে তা কোনোক্রমেই লাভজনক হবে না। তাই প্রত্যেক গ্রাম বা গ্রামের কাছাকাছি স্বল্প-ভোল্টের সঞ্চালন সাবস্টেশন নির্মাণ করতে হবে যাতে গ্রামভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদকরা সহজেই জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেন।
তবে সবকিছুর আগে দরকার বিদ্যুৎ খাত বিষয়ক মহাপরিকল্পনার আগাপাছতলা পুনর্বিন্যাস। এই পুনর্বিন্যাসের জন্য দরকার আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সুবিদিত দেশি বিশেষজ্ঞ- যারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দেশের জলবায়ু, ভূমি, নদী, বন, কৃষি, মানুষ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার ভাবনা মাথায় নিয়ে একটি বাস্তবভিত্তিক বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, যা পরিবেশসম্মত, সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে মিলেমিশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এই কাজটুকু করতে পারলেই শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়ন করার ধারণাটি বাস্তবে রূপ নিতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না; ২০৫০ সালের আগেই আমরা এ লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবো।
সদস্য সচিব, বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা
বিষয়ক কর্মজোট
মন্তব্য করুন