- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- নতুন বাস্তবতায় চাই নতুনতর ব্যবস্থা
যন্ত্রপাঠযোগ্য পাসপোর্ট
নতুন বাস্তবতায় চাই নতুনতর ব্যবস্থা
করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে যন্ত্রপাঠযোগ্য বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া হচ্ছে না- সোমবার সমকালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের ভাষ্যে বিস্মিত হওয়ার অবকাশ নেই। শুধু পাসপোর্ট আবেদন জমা নেওয়া নয়, গত মার্চ থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও সীমিত রয়েছে অনেক সেবা। কিন্তু এখন যখন সব সেবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হচ্ছে, তখনও পাসপোর্ট আবেদন জমা বন্ধ থাকার বিষয়টি বিস্ময়কর বটে। সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের এই যুক্তি আমরা উড়িয়ে দিতে চাই না যে, এতে করে যেমন পাসপোর্টগ্রহীতা তেমনই তাকে সেবাদানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চোখের মণি ও একাধিক আঙুলের ছাপ নিতে গিয়ে সংক্রমণ অস্বাভাবিক নয়। আমরা জেনেছি, ইতোমধ্যে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কয়েকজন করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি করোনা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত নতুন পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ থাকবে? এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশ কী করছে, খতিয়ে দেখা জরুরি। একই সঙ্গে সংক্রমণ রোধেও নেওয়া যেতে পারে নানা ব্যবস্থা। আমরা দেখছি, বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ সনদ চাওয়া হচ্ছে; পাসপোর্ট আবেদন জমা ও ছাপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা করা যায় না? এছাড়া যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিরাপদ দূরত্বে থেকেও চোখের মণি বা আঙুলের ছাপ নেওয়া নিশ্চয়ই সম্ভব। প্রবাদে রয়েছে, প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জননী। পাসপোর্ট নিঃসন্দেহে জরুরি প্রয়োজন। চিকিৎসা, শিক্ষা ছাড়াও অনেকের কর্মসংস্থানের জন্যও বিদেশ ভ্রমণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে। এই অনিশ্চয়তায় থাকার অবকাশ নেই। আমরা চাই সংশ্নিষ্টরা প্রযুক্তির সহায়তা ও উদ্ভাবনী শক্তির সহায়তা গ্রহণ করুন। হতে পারে, করোনা পরিস্থিতির কারণে পাসপোর্ট গ্রহণ ও প্রদান প্রক্রিয়ায় স্থায়ী স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার নতুন দুয়ার খুলে যাবে। মনে রাখতে হবে, নতুন আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ থাকলেও চাহিদা থেমে থাকবে না। বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশি প্রবাসে অবস্থান করছেন, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় তারা ছুটি নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন না বা জরুরি প্রয়োজনে এক দেশ থেকে থেকে অন্য দেশে যেতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে যদি একজন প্রবাসীও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমআরপি না পান, তার দায় কে নেবে? মনে রাখা জরুরি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বড় অংশ দেশের শ্রমজীবী মানুষ। তারা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বিদেশে যান এবং পরিবার ও দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠান। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি এমনিতেই নাজুক, এর মধ্যে যদি পাসপোর্টের কারণে কাউকে কর্মহীন থাকতে হয়, তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চাইব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করে সংশ্নিষ্টরা যত দ্রুত সম্ভব জরুরি প্রয়োজন যাদের, তাদের হাতে এমআরপি তুলে দিতে আরও উদ্যোগী ও উদ্যমী হবেন। ভুলে যাওয়া যাবে না, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দিনে ১৮-২০ হাজার পাসপোর্ট প্রদান করা হতো, সেখানে প্রায় শূন্যে নেমে আসার কারণে করোনা পরিস্থিতি পার হলেও জমে যাবে আবেদনের পাহাড়। সেই চাপ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা এখন থেকেই ভাবতে বলি আমরা। প্রয়োজনে চোখের মণি ও আঙুলের ছাপ নেওয়া ছাড়া বাকি ধাপগুলো সম্পন্ন করে রাখা যেতে পারে। আবার তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যার-তার হাতে এমআরপি যাতে না পৌঁছায়, সে ব্যাপারেও থাকতে হবে পূর্ণ সতর্ক। আমরা জানি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ, নানা উগ্রপন্থি ও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা, বহির্বিশ্বে আমাদের জনশক্তির বাজার ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সঠিকতা কতটা স্পর্শকাতর বিষয়। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অপাত্রের হাতে যদি যন্ত্রপাঠযোগ্য পাসপোর্ট পৌঁছায়, তা হবে আরও বিপর্যয়কর। আমরা চাই, সতর্কতা থাকুক, থাকুক সক্রিয়তাও। করোনাভাইরাস এক নতুন বাস্তবতা। নতুন বাস্তবতা মেনেই আমাদের গ্রহণ করতে হবে নতুনতর ব্যবস্থা।
মন্তব্য করুন