- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- আমিরাত-বাহরাইনের পথে সৌদি আরব?
আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক
আমিরাত-বাহরাইনের পথে সৌদি আরব?

ফিলিস্তিন-ইসরায়েলি অকার্যকর শান্তি প্রচেষ্টার কার্যকর ব্যাখ্যা বোধ হয় এই যে, যতটা না শান্তি এটি তার চেয়ে বেশি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে আবদ্ধ। ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তির মাধ্যমে কেউ ভাবতে পারে, এবার বুঝি শান্তি দ্রুত আসছে, প্রক্রিয়া দূরে সরছে।
ফিলিস্তিনিরা সব সময় আলোচনার টেবিল থেকে চলে যায়, তখন সম্ভাবনা ক্ষীণতর হতে থাকে। ১৯৯৯ সালে ফিলিস্তিনিদের যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল, দিন দিন সেটা আরও কমেছে। যদিও ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব আরও বেশি চাইছেন। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের ক্ষতি সত্যিই অসহনীয় বেদনার। তবে ফিলিস্তিনিসহ আমাদের উচিত হবে আবেগকে এক পাশে রেখে বাস্তবতা অনুধাবন করা।
ইসরায়েলের কথা বলাই বাহুল্য। অবৈধ স্থাপনা সম্প্রসারণ ও অব্যাহত হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল একটি সম্ভাব্য চুক্তির পথ অসম্ভব করে তুলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত যখন ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে তার সীমানা বৃদ্ধিকরণ স্থগিত করার কথা বলে, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে এর মধ্যে কোনো ফায়দা রয়েছে। অথচ নেতানিয়াহু বলছেন, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের অংশ করার পরিকল্পনা এখনও আছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল শান্তি চুক্তিকে উৎসাহিত করার বদলে আরও নিরুৎসাহিত করছে।
কথা হলো, সৌদি আরবও কি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের পথ অনুসরণ করবে? সৌদি আরব একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে অবস্থানের প্রশ্নে অযৌক্তিক কিছু করার কথা নয়।
তবে রিয়াদ তার অবস্থান পরিস্কার করেছে। সেটা আমরা দেখেছি ২০০২ সালে 'আরব পিস ইনিশিয়েটিভ'-এ সৌদি আরব অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আরব লীগ অনুমোদিত ২০০২ সালের ওই চুক্তি (আরব পিস ইনিশিয়েটিভ) অনুসারে, ফিলিস্তিনের যেসব জায়গা ইসরায়েল দখল করেছে, সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দেশটির সঙ্গে আরব ও এই অঞ্চলের ইসলামী দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হবে। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি 'আরব পিস ইনিশিয়েটিভ'কে ভেঙে দিয়েছে। সৌদি আরবের এ অবস্থান সত্ত্বেও একটা মতদ্বৈধতা রয়েছে। কেউ বলছেন, সৌদি আরব কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
কিছু মানুষ এটা চিন্তা করতে পারে যে, ইসরায়েলের ব্যাপারে ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান একই। সেটা সত্য নয়, ন্যায্যও নয়। ইরান চায় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের দাপ্তরিক অবস্থান সব সময়ই যুক্তিপূর্ণ। তারা ইহুদি ধর্মবিরোধী নয়। রিয়াদ সবসময়ই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ দখলের বিরোধী; যে ভূখণ্ড জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত। কয়েক দশক ধরে সৌদি আরব শান্তির সপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, সৌদি সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই যারা লজ্জাকরভাবে ইহুদি ধর্মবিরোধী। তবে গত চার বছরে স্কুল কারিকুলামে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। এসব সংস্কার বিশেষ করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের নতুন আইন ও মুক্ত আলোচনার উদ্যোগ ও অন্য ধর্মের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির যে ভার্চুয়াল বিপ্লব সংঘটিত হয়ে গেছে, তা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে আসেনি বললেই চলে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেই ইহুদিসহ সৌদি আরব ও বাইরের অন্য ধর্মের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। শেখ মোহাম্মদ আল ইসার (যিনি নিজেও সৌদি আরবীয়) নেতৃত্বাধীন মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগও দ্ব্যর্থহীনভাবে ইহুদি গণহত্যা অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করে ইসলামের অধিকতর মুক্তমত ও সহনশীলতার শিক্ষার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি একটি হাস্যকর 'বিশ্নেষণ' পড়েছি। যেখানে বলা হয়, আরব উপসাগরীয় ছোট্ট দেশ বাহরাইন কখনও সৌদি আরবের সবুজ সংকেত ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি করতে পারবে না। এটি কেবল বাহরাইনের জন্য অবমাননাকরই নয় বরং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে হাস্যকরও বটে। কারণ এ ব্যাপারে রিয়াদ যেমন মানামাকে নির্দেশ দিতে পারে না, তেমনি বাহরাইনের সঙ্গে সৌদি আরবের এমন কোনো সম্পর্কও নেই।
এমনকি যদি ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধানও হয় এবং পুরো অঞ্চলের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় তারপরও কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যার অপনোদন যেমন করতে হবে তেমনি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবও ঝেড়ে ফেলতে হবে। তা সহজ হবে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের মাধ্যমে ইসরায়েলি পাঠ্যপুস্তক ও গণমাধ্যমে আরব সম্পর্কে যেসব বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে তার যেমন সমাপ্তি ঘটতে সাহায্য করবে, তেমনি আরব বিশ্বের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। আরব নিউজে 'মাইনরিটি রিপোর্ট' নামে আমরা একটি সিরিজ শুরু করেছি, যেখানে আরব অঞ্চলের সব সংখ্যালঘুর ব্যাপারে আলোচনা থাকবে। সেখানে ফোকাস হবে আরব ইহুদি। শান্তির পক্ষে আমরা।
আরব নিউজ থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
আরব নিউজের প্রধান সম্পাদক
ফিলিস্তিনিরা সব সময় আলোচনার টেবিল থেকে চলে যায়, তখন সম্ভাবনা ক্ষীণতর হতে থাকে। ১৯৯৯ সালে ফিলিস্তিনিদের যা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল, দিন দিন সেটা আরও কমেছে। যদিও ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব আরও বেশি চাইছেন। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের ক্ষতি সত্যিই অসহনীয় বেদনার। তবে ফিলিস্তিনিসহ আমাদের উচিত হবে আবেগকে এক পাশে রেখে বাস্তবতা অনুধাবন করা।
ইসরায়েলের কথা বলাই বাহুল্য। অবৈধ স্থাপনা সম্প্রসারণ ও অব্যাহত হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল একটি সম্ভাব্য চুক্তির পথ অসম্ভব করে তুলেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত যখন ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে তার সীমানা বৃদ্ধিকরণ স্থগিত করার কথা বলে, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে এর মধ্যে কোনো ফায়দা রয়েছে। অথচ নেতানিয়াহু বলছেন, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের অংশ করার পরিকল্পনা এখনও আছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েল শান্তি চুক্তিকে উৎসাহিত করার বদলে আরও নিরুৎসাহিত করছে।
কথা হলো, সৌদি আরবও কি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের পথ অনুসরণ করবে? সৌদি আরব একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে অবস্থানের প্রশ্নে অযৌক্তিক কিছু করার কথা নয়।
তবে রিয়াদ তার অবস্থান পরিস্কার করেছে। সেটা আমরা দেখেছি ২০০২ সালে 'আরব পিস ইনিশিয়েটিভ'-এ সৌদি আরব অগ্রণী ভূমিকা রাখে। আরব লীগ অনুমোদিত ২০০২ সালের ওই চুক্তি (আরব পিস ইনিশিয়েটিভ) অনুসারে, ফিলিস্তিনের যেসব জায়গা ইসরায়েল দখল করেছে, সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দেশটির সঙ্গে আরব ও এই অঞ্চলের ইসলামী দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হবে। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি 'আরব পিস ইনিশিয়েটিভ'কে ভেঙে দিয়েছে। সৌদি আরবের এ অবস্থান সত্ত্বেও একটা মতদ্বৈধতা রয়েছে। কেউ বলছেন, সৌদি আরব কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না বা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
কিছু মানুষ এটা চিন্তা করতে পারে যে, ইসরায়েলের ব্যাপারে ইরান ও সৌদি আরবের অবস্থান একই। সেটা সত্য নয়, ন্যায্যও নয়। ইরান চায় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের দাপ্তরিক অবস্থান সব সময়ই যুক্তিপূর্ণ। তারা ইহুদি ধর্মবিরোধী নয়। রিয়াদ সবসময়ই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে অবৈধ দখলের বিরোধী; যে ভূখণ্ড জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত। কয়েক দশক ধরে সৌদি আরব শান্তির সপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, সৌদি সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই যারা লজ্জাকরভাবে ইহুদি ধর্মবিরোধী। তবে গত চার বছরে স্কুল কারিকুলামে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। এসব সংস্কার বিশেষ করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের নতুন আইন ও মুক্ত আলোচনার উদ্যোগ ও অন্য ধর্মের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির যে ভার্চুয়াল বিপ্লব সংঘটিত হয়ে গেছে, তা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে আসেনি বললেই চলে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেই ইহুদিসহ সৌদি আরব ও বাইরের অন্য ধর্মের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। শেখ মোহাম্মদ আল ইসার (যিনি নিজেও সৌদি আরবীয়) নেতৃত্বাধীন মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগও দ্ব্যর্থহীনভাবে ইহুদি গণহত্যা অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করে ইসলামের অধিকতর মুক্তমত ও সহনশীলতার শিক্ষার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি একটি হাস্যকর 'বিশ্নেষণ' পড়েছি। যেখানে বলা হয়, আরব উপসাগরীয় ছোট্ট দেশ বাহরাইন কখনও সৌদি আরবের সবুজ সংকেত ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি করতে পারবে না। এটি কেবল বাহরাইনের জন্য অবমাননাকরই নয় বরং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে হাস্যকরও বটে। কারণ এ ব্যাপারে রিয়াদ যেমন মানামাকে নির্দেশ দিতে পারে না, তেমনি বাহরাইনের সঙ্গে সৌদি আরবের এমন কোনো সম্পর্কও নেই।
এমনকি যদি ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধানও হয় এবং পুরো অঞ্চলের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় তারপরও কিছু ভুল ধারণা রয়েছে, যার অপনোদন যেমন করতে হবে তেমনি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবও ঝেড়ে ফেলতে হবে। তা সহজ হবে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের মাধ্যমে ইসরায়েলি পাঠ্যপুস্তক ও গণমাধ্যমে আরব সম্পর্কে যেসব বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে তার যেমন সমাপ্তি ঘটতে সাহায্য করবে, তেমনি আরব বিশ্বের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। আরব নিউজে 'মাইনরিটি রিপোর্ট' নামে আমরা একটি সিরিজ শুরু করেছি, যেখানে আরব অঞ্চলের সব সংখ্যালঘুর ব্যাপারে আলোচনা থাকবে। সেখানে ফোকাস হবে আরব ইহুদি। শান্তির পক্ষে আমরা।
আরব নিউজ থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
আরব নিউজের প্রধান সম্পাদক
মন্তব্য করুন