কাজী আনিস আহমেদের 'চল্লিশ কদম' নামে নির্মেদ উপন্যাসটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বচ্ছ ও নির্ভার অনুবাদে মূল উপন্যাসের সমস্ত ইঙ্গিত, কৌতুক ও খরতা অবধারিতভাবে ধরা পড়েছে। সারা পৃথিবীর কথাসাহিত্যেই বিষয়কে বিষয়ান্তরে সম্প্রসারিত করার ঐতিহ্য অনেক দিন ধরেই প্রতিষ্ঠিত। প্রসঙ্গের জোড় খুলে তাকে সম্ভাবনার দশ দিগন্তের দিকে মুক্ত করে দেওয়ার অভিপ্রায় আমাদের সময়ের শক্তিমান লেখকদের একটি স্বাভাবিক অর্জন, এটা আমরা জানি। বাংলা ভাষাতেও এর নজির রয়েছে। কম হলেও আছে। অনুবাদের সুবাদে 'চল্লিশ কদম' এই ধারায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বাখতিন 'কার্নিভালাইজড লিটারেচার'-এর যে লক্ষণের কথা বলেছেন, আদর্শ আর আঘাতের যে সমন্বয়ের নজির তিনি দেখেছিলেন ভলতেয়ারের রচনায়, কাজী আনিস আহমেদের এ উপন্যাসের পরতে পরতে তার পরিচয় আছে। এই লেখা, 'কার্নিভালাইজড লিটারেচার'-এর মতোই লোকজীবনের ভেতর থেকে সূত্র অর্জন করেছে। যদিও, উপন্যাসের মতো চঞ্চল শিল্পমাধ্যমের কোনো স্থায়ী সংজ্ঞা দেওয়া এখনও অসম্ভব, কারণ প্রথমত তা মহাকাব্যের মতো মৃত পরিসর নয়, আর দ্বিতীয়ত উপন্যাসের ভেতরে ভেতরে এত সমারোহময় জটিলতা যে প্রতি মুহূর্তে তার বিস্ম্ফোরণ ঘটছে। উপন্যাস একইসঙ্গে কথার যুগল মুহূর্তকে স্পর্শ করে বহুস্বরের দিগন্তে উড়াল দেয়। এ স্তরান্তরের মাধ্যম হলো সংলাপ। প্রত্যক্ষ আর অপ্রত্যক্ষ সংলাপ। উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিবাচনিক হয়ে ওঠে ভাষা আর এই দ্বৈতস্বর তার ভেতরে ধারণ করে, ছড়িয়ে দেয় বহুস্বরের বৈভব।
বাখতিনের উপন্যাসতত্ত্বের আরেকটি বড় কথা হলো ব্যক্তি আর সমাজ-সময়-ইতিহাসের সম্পর্কের বিন্যাস। ব্যক্তি যে প্রথমত স্বতন্ত্র সে কথা জানিয়ে বাখতিনের সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে হবে তার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, সমাজের আওতায়, ইতিহাসের নিরিখে। তাহলেই একটি সামগ্রিক স্বর আর স্তরান্তরের বুনট টের পাওয়া সম্ভব হবে। দেবেশ রায় ব্যাখ্যা করে বলেছেন এভাবে- 'টনি মরিসন যখন অ্যাফ্রো-আমেরিকান অতীত নিয়ে বা কার্টেজার যখন অস্‌উইথস্‌-এর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নিয়ে বা বাংলাদেশের অনেক ঔপন্যাসিক যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নয় মাসের বর্বরতা নিয়ে উপন্যাস লেখেন, তখন সেগুলো ব্যক্তির কাহিনি হয় না, ব্যক্তির বিকাশের বা ধ্বংসের কাহিনি থাকে না, তখন সেগুলো হয়ে ওঠে ব্যক্তিত্ববিনাশী এক সিস্টেমের সশস্ত্র আক্রমণের কাহিনি এবং সিস্টেমের বিজয়গাথা।'
'চল্লিশ কদম'-এর তাৎপর্য এখানেই। সময়ের পরিপ্রেক্ষিত রক্ষা করেই কয়েকটি চরিত্রের বৈচিত্র্যময় বিকাশের নিপুণ আখ্যান এই লেখা। ব্যক্তি পরিসরের আলোছায়াময় বনান্ধকার পটভূমি হিসেবে লেখকের প্রিয়। সম্পর্কের মধ্যে রহস্য ঘনিয়ে নিয়ে তাতে অল্পবিস্তর টোল দিতে দিতে চলে তার লেখা। সেখানে বিপর্যয় থাকে, ক্ষত থাকে, অসূয়া আর অসহায়তা থাকে, কিন্তু কাহিনির প্রসন্ন অবসানের চলন থেকে বেরোননি তিনি। ভাষায় সব সময় পরিশীলিত স্বচ্ছতা বজায় রেখে মন্দ্রস্বরে কাহিনি বলে গেছেন। এ প্রসন্ন ধরনটি অর্জন করা খুব সহজ নয়। মাঝে মাঝেই কৌতুকের চলন অর্জন করায় তা আরও ধারালো হয়েছে। শিকদার সাহেব তার স্ত্রীর অবৈধ প্রেমিক ডসনকে বাড়ি থেকে বের করতে পারছিলেন না। ইয়াকুব মোল্লা সেই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করলেন। কাজেই 'হপ্তাখানেক পরে মোল্লা যখন গোটা কয় দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে হাজির হলো, আর বলল কতগুলো ছোটোখাটো ভুলচুক শুধরে দিতে হবে। শিকদার সাহেব তাকে আর প্রত্যাখ্যান করতে পারল না। মোল্লার পরামর্শে তিনি সায় দিলেন বটে, তবে বললেন যে অন্তত নৈতিক সৌজন্যের কিছুটা লক্ষণ যেন বজায় থাকে। নিজের জমিজমা অনেক লোকেই যে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারে না, এ নিয়ে বিস্তর লম্বা লম্বা আলোচনা চালাতে লাগলেন তারা। ওই ধানক্ষেতগুলোকে বরং ইটের ভাটা তৈরি করে দিলেই ভালো হয় নাকি? আর তারা তাদের এসব ফেরেব্বাজি থেকে যে মুনাফা হবে তা কীভাবে কাজে লাগাবেন তা নিয়েও অনেক কথাবার্তা বললেন।'
গোটা উপন্যাসে এই শান্ত কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রবণ চলনটি সব সময় অক্ষুণ্ণ থেকেছে। শিকদার সাহেবের সারা জীবনের নানা ঘটনার নির্বাচিত যে পরিচয় আমাদের সামনে ধরে দিয়েছেন লেখক, তা সুনির্বাচিত ও সুসম্পাদিত বলেই একবারের জন্যও কোনো অংশ অতিরিক্ত বা উদ্বৃত্ত বলে মনে হয় না। শিকদারের মৃত্যু থেকে শুরু হয়ে, ক্রমশ, উপন্যাসের ঘটনা সচেতনভাবে পেছনের দিকে এগিয়ে গেছে। মৃত শিকদার সাহেবের ভাবনার বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসের তাৎপর্যময় শুরু করেছেন লেখক এইভাবে- 'আগের সন্ধ্যাতেই মারা যাওয়ার পর শিকদার সাহেব এখন মাটির ছয় ফিট তলায় শুয়ে আছেন। মারা যে গেছেন সে সম্বন্ধে তিনি নিজে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না বটে, তবে যারা তাকে কবর দিয়েছিল তারা অবশ্য পুরোপুরি নিঃসন্দিগ্ধই ছিল। সাদা কাফনে আপাদমস্তক ঢাকা, সেখানে শুয়ে শুয়ে এখন আর তার মুনকার আর নাকির এই দুই ফেরেশতার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই।' কারণ ইয়াকুব মোল্লা তাকে বলেছেন, 'সব মুসলমানকেই তার কবরে জেরা করতে আসেন দুজন ফেরেশতা, মুনকার আর নাকির। একজন পরপর লিখে নেয় মৃত ব্যক্তি জীবদ্দশায় কী কী সৎকাজ করেছিল। অন্যজন ফিরিস্তি নেয় সব পাপ কাজের।' আর 'মুনকার আর নাকির হড়বড় করে তক্ষুণি এসে হাজির হয়, যখন দাফনকারীদের শেষজন কবর থেকে সবে চল্লিশ কদম দূরে গেছে।' জীবন আর মৃত্যুর মধ্যবর্তী বিহ্বল চল্লিশ কদম এ উপন্যাসের সচেতন অবলম্বন।
একজন মানুষের চরিত্রে যে কত পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ থাকে, ছায়া থাকে, অনিশ্চয়তা থাকে এবং অসহায়তাও থাকে, তা শিকদার সাহেবের জীবনের নানা ঘটনার চকিত মোচড়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন লেখক। ডসনের সঙ্গে তার প্রাথমিক বন্ধুত্বে যে আন্তরিকতা ছিল, শেষে তাই পরিণত হলো বিমূঢ় বৈরিতায়। এর স্বাভাবিক সূত্র তার চেয়ে দশ বছরের ছোট 'সুন্দরী' স্ত্রী। ডসনের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্কের আলোছায়াময় বর্ণনা এ উপন্যাসের ধ্রুপদি সম্পদ। এ সম্পর্কটিকে কখনোই উচ্চকিত করেননি লেখক, উপেক্ষাও করেননি। শিকদার সাহেবের সদ্যোজাত সন্তান প্রসঙ্গে ধারাবাহিক অনিশ্চয়তার সৌন্দর্য রহস্যময়ভাবে রক্ষা করেছেন। উপন্যাসে অতিবাস্তবতার শীর্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন এ সন্তানের জন্ম প্রসঙ্গে জামশেদপুরবাসীর প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন লেখক। বর্ণনাটি এই রকম- 'জামশেদপুরে সব কাহনেরই দুটো ভাষ্য থাকে। একটা ছড়ায় মুখে মুখে, আরেকটা বয়ে নিয়ে যায় চিমনির ধোঁয়া। দুপুরের দিকেই জামশেদপুরের বিভিন্ন চিমনি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সব খুঁটিনাটি উগরে দিতে লাগল, আর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া কাহনটার রঙের পর রং ছড়াতে লাগল। যে মেয়েরা রসুইঘরে খানা পাকায় তারা এমন সব তথ্য জানে, যা তাদের সবজান্তা স্বামীদের অজানা থাকে।... এমনিতে সাধারণ ধোঁয়া হয় ধূসর, আজ তাদের রং হলো বিদঘুটে অসুখে ভোগা, সবুজ, কিংবা হয়তো বাদল মেঘই দিনের আলোকে আশ্চর্য সব রঙে প্রসারিত করে দিয়েছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলী কিন্তু আকাশে উঠছে বলে মনে হচ্ছিল না, বরং তারা নিচু হয়ে বাড়িঘরের ওপর ঝুলে রইল, আর অন্যান্য চিমনির ঘোরার সঙ্গে মিশে গেল, অন্যকোনো রান্নাঘরে সুরুত করে ঢুকে পড়ার আগে।' আত্মস্থ ও আশ্চর্য এ বর্ণনাটি ইঙ্গিতের সামর্থ্যে, বিষয়ের সঙ্গে সান্নিধ্যের সাফল্যে বিশ্বসাহিত্যে এ জাতীয় যেকোনো বর্ণনার সমকক্ষ বলেই আমার মনে হয়েছে।
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন একবার, একবার কেন, তার লেখালেখি নিয়ে সব উচ্চারণের মর্মে থাকত এই সিদ্ধান্ত যে, বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাস আসলে তার গদ্যের ইতিহাস। 'আড়াইজন' লেখককে যে শিরোধার্য করেছিলেন তিনি, তা তাদের মৌলিক গদ্যঘরানার জন্যই। 'চল্লিশ কদম'-এর গদ্য, এমনকি অনুবাদেও, এই মৌলিক ধরনটি অগোচর রাখেনি। ভাষায় প্রত্যক্ষ খরতা না রেখেও যে ভাঙন তৈরি করা যায়, সাদা কথার ভেতরে ভেতরে ধরিয়ে দেওয়া যায় সুদূরতম বৈভব, এই লেখা তার অন্যতম সফল নজির। মনে হয়, বিভিন্ন চরিত্র আর ঘটনার স্তর বুনতে বুনতে লেখক আমাদের জীবনের যে সমাধানহীনতা, তাকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন। জীবন তার নিজস্ব গতিতে একটি স্বাধীন অর্থ রচনা করে, জীবনের নানা ঘটনা আর নানা আয়োজনের স্তর পরপর দেখাতে দেখাতে এই বিশ্বমুহূর্তের আদলে আলো ফেলাই লেখকের লক্ষ্য বলে আমার মনে হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি সম্পর্ক, প্রতিটি বর্ণনা আমাদের এই যে ভুবনজোড়া জীবনপ্রবাহ তার নিশ্চিন্ত অংশ হয়ে ধরা দিয়েছে।
উপন্যাসে চরিত্রের ঘনঘটা নেই, কিন্তু প্রতিটি চরিত্র নিজের মতো করে স্বাভাবিক, চারপাশের ব্যস্ততা সশরীরে ধারণ করেও ব্যক্তিগতভাবে বিচরণশীল। এটাই আধুনিক উপন্যাসের মহত্তম লক্ষণ। সময়ের প্রখর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিমানুষকে বিবেচনা করে সেই দ্বান্দ্বিক ফলাফলটুকু শব্দে শব্দে ধরে দেওয়া।
লেখক গল্প বলাতেও দক্ষ। মনে রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ নিজে তার উপন্যাস নিয়ে কথা বলার সময় বহুবারই ব্যবহার করেছেন গল্প শব্দটি। আধুনিক উপন্যাসে গল্প কখনোই অচ্ছুৎ ছিল না। 'চল্লিশ কদম'-এ গল্পের চারু বিন্যাসটিও মাঝেমধ্যে টোল দিয়ে ব্যবহার করেছেন লেখক। শিকদার সাহেবের মেয়ের জন্মের পরে জামশেদপুরবাসীর কথোপকথনটি এর সফলতম উদাহরণ-
'শুনেছ নাকি?'
'হাঁ, ভারি দুঃখের। মহিলা ভারি ভালো মানুষ। আর শিকদার সাহেবও এত সহৃদয় সদয় মানুষ যে তাদের বরাতেই যে এমন জিনিস ঘটল। এটাই দুঃখের।'
'তাদের এমন বদনসিব হওয়ার কথা ছিল না।'
'না, না মোটেই না।'
'বাচ্চা কি মরা জন্মেছিল? নাকি জন্মাবার পরেই মারা যায়?'
'মরা জন্মাবে কী করে? দাইবুড়ি তো বলে সে নাকি এক বাচ্চার কান্না শুনেছিল।'
'বাচ্চার কান্না কে শুনেছে? সম্ভবত মা-ই কাঁদছিল।'
'তোমার কি মনে হয় দাইবুড়ি কোনো বাচ্চার কান্না শুনে বুঝতে পারে না? গত ষাট বছর ধরেই তো ও বাচ্চা ভিউ বিয়োবার বেলায় হাত লাগিয়ে আসছে।'
'ওই কুচুটে বুড়ির তো চোখ দুটি কবেই গিয়েছিল। এখন হয়তো কানও গেছে।'
'আর বাচ্চার কবরটা? দেখোনি ওদের উঠোনে তালগাছের তলায় জমিটা কেমন ঢিবির মতো উঁচু হয়ে আছে?'
'বাচ্চাকে ওরা তো কবর দেবেই, তবে প্রশ্ন হলো- কখন মরার আগে না পরে?'
'এমন ভীষণ কথা ভুলেও ভেবো না। খামোখা ওরা অমন ভীষণ কাজ করতেই বা যাবে কেন?'
'তোমার কী মনে হয়? মনে আছে ঠিক কতদিন আগে ওলা ওঠার মড়ক লেগেছিল, আর ডসন, তখন কোথায় থাকত তাকি ভুলে মেরে দিয়েছ নাকি?'
'হাঁ হাঁ, এখন যখন তুমি কথাটা পাড়লে, তখন আমারও কেমন যেন মনে হচ্ছে বাচ্চাটাকে গোড় দেওয়ার জন্য ওরা এমন হুড়োহুড়ি বাঁধিয়ে দিয়েছিল কেন? তাছাড়া এই দুঃখের সময় সমবেদনা জানাতে গাঁয়ের সব্বাই তো গিয়েছিল, শুধু ডসন বাদে।'
'আমি তার বাড়িতেও গেছিলাম, কিন্তু সে তো তখন বাড়িতেই ছিল না।'
লোকে কথাকাটাকাটি করল, জল্পনাকল্পনা করল, কিন্তু সত্যি যে কী ঘটেছিল তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কেউই তো দিতে পারেনি।'
সত্যি যে কী, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আমরা কেউই কি দিতে পারি? গত কয়েক দশকের বিশ্বতত্ত্ব তো সত্যের সব রকম চেহারাই ছারখার করে দিয়েছে। এখন খোঁজ পড়েছে উত্তরসত্যের। এটা প্রতিষ্ঠিত করা গেছে যে সত্যের ভর সব সময় স্থান-কাল-পাত্রের ওপরেই। উত্তরসত্যের ধারণাটিও যে দ্রুত ছিন্নভিন্ন হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
সত্যের এই অধরা আপেক্ষিকতা মেনেই আমরা জীবনযাপন করি। আমাদের জীবনের, আমাদের যাপনের এই অসমাপ্ত অন্তঃসঞ্চার কাজী আনিস আহমেদের এই মিতপরিসর উপন্যাসে আলোকময় হয়ে উঠেছে। অনুবাদের সবল স্বাচ্ছন্দ্যের কথা আবারও বলা দরকার। এত আসক্তিহীন অনুবাদ মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়েরও খুব বেশি নেই। মোস্তাফিজ কারিগরের নিপুণ প্রচ্ছদ আর অলংকরণ বইটিকে উজ্জ্বলতর করেছে।

কবি