- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- আরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমরা
আরও ধন্যবাদ দিতে চাই আমরা
শৈশবের আনন্দ পরিণত বয়সে সুখস্মৃতির খাতায় ঠাঁই নেয়। শৈশবের ক্রীড়ামোদ যেন সারাজীবনের মনঃশারীরিক সুস্থতারও রসদ। কিন্তু এখনকার শৈশব অনেকাংশেই সেটুকু বঞ্চিত। শৈশবের আনন্দের ক্ষেত্রগুলো যেন হয়ে পড়ছে অবরুদ্ধ। যখন আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খেলার মাঠ দখলের খবর দেখতে পাই, তখন ঢাকার বাবুবাজারের খেলার মাঠ ফিরে পাওয়ায় শিশু-কিশোররা 'থ্যাঙ্ক ইউ মেয়র' লেখা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে তা সুখবার্তা। তাদের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পথরেখা সৃষ্টিকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে আমরাও ধন্যবাদ জানাই। বাবুবাজার এলাকায় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে উচ্ছ্বসিত শিশু-কিশোরদের এই আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এ রকম আনন্দবঞ্চিত অসংখ্য শিশু-কিশোরের কথা। দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর সন্নিকটে এই মাঠটির হঠাৎ দেয়াল ভেঙে গত মাসে সেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি কনটেইনার রাখার ফলে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় শিশু-কিশোররা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এই মাঠ তাদের খেলার জন্য উপযুক্ত করে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করলেন। মঙ্গলবার মাঠটি ফিরে পায় তার পুরোনো রূপ। আমাদের স্মরণে আছে, ২০১৪ সালে দেশের সব খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আমরা জানি, শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটানোর জন্য যেমন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন শরীর চর্চারও। শরীর চর্চার জন্য খেলার মাঠ অন্যতম অনুষঙ্গ।
এমনিতেই আমাদের পর্যাপ্ত মাঠ নেই, এর মধ্যে যাও আছে সেগুলোতেও পড়েছে শকুন-দৃষ্টি। বলবানদের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানও। আমরা দেখেছি, হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার পরও খেলার মাঠ দখলের অপচেষ্টা থেমে নেই। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সচেতন অনেকেই এ ব্যাপারে সোচ্চার থাকার পরও কার্যত খেলার মাঠ রক্ষায় সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরগুলোর সদিচ্ছা না থাকায় একদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না, অন্যদিকে দখলবাজিও থামছে না। যে কোনো উন্নয়ন কাজ কিংবা স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত বলে আমরা মনে করি। নগর কিংবা শহরাঞ্চলে শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদন তথা শারীরচর্চার পথটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অনেকাংশেই হচ্ছে ব্যাহত। আমরা জানি, সরকার শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার চর্চাকে উৎসাহিত করার কথা বলে এলেও সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই এ ক্ষেত্রে বৈরী ভূমিকা পালন করছে।
গত অক্টোবরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করায় আমরা ওই মেয়রকেও ধন্যবাদ জানাই। একসময় রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ছিল খেলার মাঠ। কালের বিবর্তনে সেগুলোর অনেকটাই আজ দখলের শিকার। শুধু রাজধানী নয়, দেশের সর্বত্র দখলকৃত খেলার মাঠ উদ্ধার করে সংস্কারে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। শৈশবের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পথ যাতে সংকুচিত না হয় এবং শিশু-কিশোরদের মানসিক-শারীরিক বিকাশের অপরিহার্য প্রয়োজনে যথাযথ দৃষ্টি দিতেই হবে। শৈশবের সুখটুকু কেড়ে নেওয়ার মতো সব ধরনের অপচেষ্টার পথ রুদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করার দায় সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভুলে গেলে চলবে না। অপরিকল্পিত নগরায়ণ কিংবা ব্যক্তি বা মহল বিশেষের লোভাতুর থাবায় যেন মাঠ-পার্ক হারিয়ে না যায়, এর জন্য সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বশীলদের ভূমিকাই মুখ্য। আমরা চাই, রাজধানীসহ সারাদেশে খেলার মাঠ দখলমুক্ত হোক। খেলার পরিবেশ বজায় থাকুক। আমরা আরও বেশি ধন্যবাদ দিতে চাই।
মন্তব্য করুন