- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- শেয়ারবাজার শক্তিশালী হোক বিনিয়োগকারীর অর্থে
অর্থনীতি
শেয়ারবাজার শক্তিশালী হোক বিনিয়োগকারীর অর্থে

অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার লেনদেন সম্পর্কে কোনো কোনো পত্রিকা এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছে, আলোচিত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন, যা মোটেও ঠিক নয়। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মূলধন সপ্তাহের শুরুতে যা ছিল, শেষের দিনে তা থেকে মোট এক হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা কমেছে। বাজার মূলধন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে এ রকম শিরোনাম দেওয়ার কথা নয়। আমি মনে করি, একটি কোম্পানির এক লাখ শেয়ার তালিকাভুক্ত করা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাজার মূলধন কী? একটি নির্দিষ্ট দিনে বাজার মূলধন অনুযায়ী, সেই কোম্পানির সমুদয় শেয়ারের মূল্য হলো ওই কোম্পানির বাজার মূলধন। শেয়ারের দাম ওঠানামা করার সঙ্গে বাজার মূলধনও বাড়বে-কমবে। আমরা যে এক লাখ শেয়ারের কথা বললাম মনে করি প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ২০০ টাকা। তাহলে দাঁড়ায়, ওই কোম্পানির বাজার মূলধন দুই কোটি টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির ১০০ শেয়ার ১৫০ টাকায় বিক্রি হলো। ফলে কোম্পানিটির বাজার মূলধন হলো দেড় কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫০ লাখ টাকা কমেছে। অথচ শেয়ার লেনদেন হয়েছে মাত্র ১০০টি।
বাজার মূলধনের অন্তর্নিহিত মূল্য নেই। শেয়ার বাজারের সূচক তৈরিতে এর ভূমিকা রয়েছে। শেয়ারের দর ওঠানামা গতি-প্রকৃতি অনুধাবন করতে এই সূচকের যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এসব কিছুতে সূচকের গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতে এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, যে পরিমাণ বাজার মূলধন কমেছে, ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে হারিয়েছে। ডিএসইতে এখন বোধহয় গড়ে দৈনিক এক হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়, সেখানে প্রতিদিন ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হওয়াটা উদ্বেগজনক বৈকি। তথ্য অনুযায়ী, এমন বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মাত্র ২৩-২৫ লাখ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শতকরা দু'জনও নয়। গত দুটি বিপর্যয়ের ফলে বহু সাধারণ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শেয়ারবাজার থেকে। তবে সঞ্চয় বিভাগ থেকে ক'দিন আগে জানানো হয়েছে, বিনিয়োগকারীর ভিড় বাড়ছে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, শেয়ার মার্কেট অত্যন্ত স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। যে কোনো গুজব, যে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা, যে কোনো রাষ্ট্রীয় অঘটন শেয়ারবাজারে বিপর্যয় নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ২০০৪ সালের নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। তখন ভারতের বামপন্থিরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জয়লাভ করল। যেহেতু কমিউনিস্টরা রয়েছে, অতএব পুঁজিবাদ থাকবে না- এ রকম অলীক কল্পনায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই শেয়ারবাজারে এমন বিপর্যয় নামল, মার্কেটই বন্ধ হয়ে গেল। কমিউনিস্টরা একাই সেই সংসদে ছিল না। শেয়ারবাজার এসব কিছুই বিবেচনায় আনল না। শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ এমন কিছু কাজ করে বসল এবং এর বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের শেয়ারবাজার ছোট। তা ছাড়া নানা নেতিবাচক ঘটনার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার বিমুখ হয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ফলে শেয়ারবাজারের পদক্ষেপ এখন বেশ ইতিবাচক। যদি শেয়ারবাজার ডিমিউচুয়ালাইজড না হতো, তাহলে এতদিনে আরও বিপর্যয় হতো, যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে। বাজারে ভালো শেয়ার আনতে হবে; মন্দ শেয়ারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
এক সময়ে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সম্ভবত ৩৪-৩৫ লাখ হয়েছিল। শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট সবার দায়িত্ব হবে এই সংখ্যা বাড়ানো। এর সংখ্যা যত বাড়বে, আইপিওর সংখ্যা বাড়ানোও তত সহজ হবে। এখানে আর একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পুঁজিবাজারের বড় ভূমিকা ছিল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা। শিল্প এবং বিভিন্ন অবকাঠামোয় এই পুঁজি সরবরাহ করা হতো। ফলে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হতো শুধু চলতি লেনদেনের জন্য। কেননা, স্থায়ী পুঁজি তো বিনিয়োগকারীরা সবরাহ করে থাকেন। আগে অর্থ বিনিয়োগ করা হতো কোনো পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানের জন্য। পুঁজির বিনিয়োগ মানে সম্পদ বৃদ্ধি সেটি ব্যবহারের জন্য হোক বা সেবার জন্য হোক। আমরা লক্ষ্য করেছি, যতবার শেয়ারবাজার খুব ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, ততবার কোনো কোনো শেয়ারবাজার বিশ্নেষক উচ্চ স্বরে বলেছেন, অধিক পরিমাণ টাকা সরবরাহ করা হোক। ব্যাংক তাদের ভান্ডার উজাড় করে দিক শেয়ার কেনার জন্য। শেয়ারের মূল্যের সীমারেখা হবে আকাশছোঁয়া। তা ঠিক নয়। বক্তব্য এ রকম হওয়া উচিত, অধিক পরিমাণে শেয়ার বাজারে আনা উচিত এবং আইপিওর সংখ্যা যেন বাড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিনিয়োগকারীদের অর্থ যেন সম্পদ বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়, জনগণের অর্থ রাষ্ট্রের সম্পদ বৃদ্ধির প্রবাহে সম্পৃক্ত হয়।
সম্ভবত, প্রায় দুই যুগ হয়ে গেল কয়েকটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত তারা একটি শেয়ারও বাজারে ছাড়েনি। এ ব্যাপারে অনেক কথা বলা হয়েছে বটে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু শেয়ার রয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বহুবার এমন কথা দিয়েছিলেন, শেয়ার জনগণের মাঝে আইপিওর মাধ্যমে ছাড়া হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে মুহিতের বড় অবদান, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন কর্মকর্তারা নবউদ্যমে কাজ শুরু করেছেন বলে তারা দাবি করছেন। আমরা আশা করব, শেয়ারবাজার অধিক সক্রিয় হবে, শক্তিশালী হবে বিনিয়োগকারীদের অর্থে, ব্যাংকের ঋণে নয়। শেয়ারবাজারের উন্নতির লক্ষ্যে, স্থিতিশীল করার স্বার্থে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক ফলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; শেয়ারবাজার, ব্যাংক ও বীমা খাত বিশ্নেষক
বাজার মূলধনের অন্তর্নিহিত মূল্য নেই। শেয়ার বাজারের সূচক তৈরিতে এর ভূমিকা রয়েছে। শেয়ারের দর ওঠানামা গতি-প্রকৃতি অনুধাবন করতে এই সূচকের যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এসব কিছুতে সূচকের গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতে এ রকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, যে পরিমাণ বাজার মূলধন কমেছে, ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে হারিয়েছে। ডিএসইতে এখন বোধহয় গড়ে দৈনিক এক হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়, সেখানে প্রতিদিন ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হওয়াটা উদ্বেগজনক বৈকি। তথ্য অনুযায়ী, এমন বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা মাত্র ২৩-২৫ লাখ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শতকরা দু'জনও নয়। গত দুটি বিপর্যয়ের ফলে বহু সাধারণ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শেয়ারবাজার থেকে। তবে সঞ্চয় বিভাগ থেকে ক'দিন আগে জানানো হয়েছে, বিনিয়োগকারীর ভিড় বাড়ছে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, শেয়ার মার্কেট অত্যন্ত স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। যে কোনো গুজব, যে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা, যে কোনো রাষ্ট্রীয় অঘটন শেয়ারবাজারে বিপর্যয় নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ২০০৪ সালের নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। তখন ভারতের বামপন্থিরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জয়লাভ করল। যেহেতু কমিউনিস্টরা রয়েছে, অতএব পুঁজিবাদ থাকবে না- এ রকম অলীক কল্পনায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই শেয়ারবাজারে এমন বিপর্যয় নামল, মার্কেটই বন্ধ হয়ে গেল। কমিউনিস্টরা একাই সেই সংসদে ছিল না। শেয়ারবাজার এসব কিছুই বিবেচনায় আনল না। শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষ এমন কিছু কাজ করে বসল এবং এর বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের শেয়ারবাজার ছোট। তা ছাড়া নানা নেতিবাচক ঘটনার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার বিমুখ হয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ফলে শেয়ারবাজারের পদক্ষেপ এখন বেশ ইতিবাচক। যদি শেয়ারবাজার ডিমিউচুয়ালাইজড না হতো, তাহলে এতদিনে আরও বিপর্যয় হতো, যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে। বাজারে ভালো শেয়ার আনতে হবে; মন্দ শেয়ারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
এক সময়ে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সম্ভবত ৩৪-৩৫ লাখ হয়েছিল। শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট সবার দায়িত্ব হবে এই সংখ্যা বাড়ানো। এর সংখ্যা যত বাড়বে, আইপিওর সংখ্যা বাড়ানোও তত সহজ হবে। এখানে আর একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পুঁজিবাজারের বড় ভূমিকা ছিল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা। শিল্প এবং বিভিন্ন অবকাঠামোয় এই পুঁজি সরবরাহ করা হতো। ফলে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হতো শুধু চলতি লেনদেনের জন্য। কেননা, স্থায়ী পুঁজি তো বিনিয়োগকারীরা সবরাহ করে থাকেন। আগে অর্থ বিনিয়োগ করা হতো কোনো পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানের জন্য। পুঁজির বিনিয়োগ মানে সম্পদ বৃদ্ধি সেটি ব্যবহারের জন্য হোক বা সেবার জন্য হোক। আমরা লক্ষ্য করেছি, যতবার শেয়ারবাজার খুব ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, ততবার কোনো কোনো শেয়ারবাজার বিশ্নেষক উচ্চ স্বরে বলেছেন, অধিক পরিমাণ টাকা সরবরাহ করা হোক। ব্যাংক তাদের ভান্ডার উজাড় করে দিক শেয়ার কেনার জন্য। শেয়ারের মূল্যের সীমারেখা হবে আকাশছোঁয়া। তা ঠিক নয়। বক্তব্য এ রকম হওয়া উচিত, অধিক পরিমাণে শেয়ার বাজারে আনা উচিত এবং আইপিওর সংখ্যা যেন বাড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিনিয়োগকারীদের অর্থ যেন সম্পদ বৃদ্ধিতে ব্যয় হয়, জনগণের অর্থ রাষ্ট্রের সম্পদ বৃদ্ধির প্রবাহে সম্পৃক্ত হয়।
সম্ভবত, প্রায় দুই যুগ হয়ে গেল কয়েকটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত তারা একটি শেয়ারও বাজারে ছাড়েনি। এ ব্যাপারে অনেক কথা বলা হয়েছে বটে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু শেয়ার রয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বহুবার এমন কথা দিয়েছিলেন, শেয়ার জনগণের মাঝে আইপিওর মাধ্যমে ছাড়া হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে মুহিতের বড় অবদান, স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন কর্মকর্তারা নবউদ্যমে কাজ শুরু করেছেন বলে তারা দাবি করছেন। আমরা আশা করব, শেয়ারবাজার অধিক সক্রিয় হবে, শক্তিশালী হবে বিনিয়োগকারীদের অর্থে, ব্যাংকের ঋণে নয়। শেয়ারবাজারের উন্নতির লক্ষ্যে, স্থিতিশীল করার স্বার্থে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক ফলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; শেয়ারবাজার, ব্যাংক ও বীমা খাত বিশ্নেষক
মন্তব্য করুন