এবারের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের ৫০তম বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। আমরা জানি, বাংলাদেশের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। ১৯৭১ সালে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত ও পেশাদার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিকামী সংগ্রামী জনতার কাছে হার মেনেছিল। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিস্মিত চোখের সামনে আমরা অনেক ত্যাগে বিজয় অর্জন করেছিলাম। পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশক বাংলাদেশ একের পর এক আরও বিস্ময় সৃষ্টি করে চলছে। এরই মধ্যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। একদা বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ ছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অকল্পনীয় ছিল। এখন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো মেগা প্রকল্পও প্রমত্ত পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। পদ্মা সেতু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা আমাদের স্বপ্ন ছিল নিঃসন্দেহে, কিন্তু একই সঙ্গে প্রত্যয় ছিল সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ারও। এ বছরের মহান বিজয় দিবস এমন সময়ে এসেছে, যখন আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তা বিশ্বের বিস্ময় বৈকি। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাঙালির সংগ্রাম যেমন স্বাধীনতার সংগ্রাম, তেমনি মুক্তিরও সংগ্রাম। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো যেমন বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনি সংস্থাটি বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদানেরও ঘোষণা দিয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তা দৃষ্টান্তযোগ্য। বাংলাদেশ এখন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে। এ বছর বিজয় দিবস এসেছে বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার মধ্যে। আমরা দেখেছি, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সফলভাবেই মোকাবিলা করেছে। এ দুর্যোগ অন্য দেশে যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, যেভাবে লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রভাব আমরা কমই দেখছি। আমরা দেখেছি, করোনা সময়কার অর্থনৈতিক সংকটও সরকার কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনাসহ নানা বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার পরও এ দুর্যোগ থেকে আমরা এখনও মুক্ত নই। শীতের এ সময়ে করোনাভাইরাস যাতে বেশি ছড়াতে না পারে, সেদিকে নজর দেওয়া চাই। পাঁচ দশকে আমাদের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাওয়া, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অসামান্য। আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় কমবেশি এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন বাংলাদেশ নিজেই ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয়, খাদ্য ও অভয় দিতে সক্ষম হয়েছে। এসব অর্জন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের মাথা উঁচু করলেও দুর্নীতি নির্মূল এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়ও যে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তা সাম্প্রতিক এক সূচকে স্পষ্ট হয়েছে। বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না; বরং সব সংকট ও সমস্যা মোকাবিলায় আমরা কীভাবে কাঙ্ক্ষিত সুখী, সমৃদ্ধশালী ও বৈষম্যমুক্ত কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে পারি- এটি আমাদের সবার চিন্তায় জাগ্রত করতে হবে। বিজয়ের এ দিনে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে নাম জানা-না জানা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মী জাতীয় নেতাদের। মহান বিজয় দিবসে আমরা সমকালের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা।
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০ । ০০:০০ । প্রিন্ট সংস্করণ
মন্তব্য করুন