১৯৭১ সাল, তখন আমি শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ মাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করার সুদৃঢ় প্রত্যয়ে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (বিএলএফ)।

আমার নাম মো. আবু সাঈদ, পিতার নাম মরহুম আহমদ আলী প্রধান, মাতার নাম মরহুমা দয়া বেগম, স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম সুজাতপুর, ডাকঘর জয়নগর, থানা শিবপুর, জেলা নরসিংদী। জাতীয় পরিচয়পত্র নং ২৬৯৫৪৩৫৯৫১৪৮৭, মোবাইল ০১৭১৫০১০৮৮৯, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানী স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা যুদ্ধের সনদপত্র (যার মূলকপি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত) ক্রমিক নং ১৪৭২২৫। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাকরির জন্য সুপারিশপত্র নং : মুক্তি/ স১০৭৬১/ ৩২২৬/ ৮০/ ৮১/ ৮২, তাং-১৯/০২/১৯৮২ইং। যার প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদ কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত সনদপত্র। ২২/১২/১৯৮৬ ইং তারিখে দৈনিক জনতা পত্রিকায় শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের খসড়া তালিকায় প্রকাশিত আমার নাম মো. আবু সাঈদ, ক্রমিক নং ৫৩ (শিবপুর উপজেলা)। মুক্তিবার্তা নং ০১০৫০২০৬১৬, তাং ০২/১২/১৯৯৯ ইং। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সাময়িক সনদপত্র নং ম-৩৯৩০৪, তাং : ১৪/১০/২০০৩ইং। গেজেট নং-১৭৯৯, তাং ১৭/০৪/২০০৫ ইং। মুহাম্মদ ইমাম উদ্দিন রচিত নরসিংদী জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থে আমার নাম মো. আবু সাঈদ, ক্রমিক নং ১৬৯, শিবপুর উপজেলা উল্লিখিত। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনলাইনে প্রকাশিত জাতীয় তালিকা নং ০৩১২০৩০৭৮০। আমার দুটি কথিকা ১৩/০২/২০১৩ ইং তারিখে 'মুক্তিযোদ্ধার চোখে শাহবাগ' এবং ২৩/০৮/২০১৫ ইং তারিখে 'একজন মুক্তিযোদ্ধার চোখে বঙ্গবন্ধু' দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত।

ভারতে যাওয়া কেন সম্ভব হয়নি আমাদের নরসিংদী তথা আশপাশ জেলার লোকজনকে যোশর বাজার-সংলগ্ন লেটারব বাজার থেকে নদীপথে ভারত যেতে হতো। প্রথমবার আমি যখন সবার সঙ্গে নৌকায় উঠলাম, নৌকা ছেড়ে দেবে, এই মুহূর্তে আব্বার মুখ থেকে মা মৃত্যুশয্যায় শুনে সতীর্থরা আমাকে জোর করে নৌকা থেকে নামিয়ে দেয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার নদীর মাঝপথ থেকে পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড বাধার মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হই।

পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর সুবেদার মো. মুসলে উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতোমধ্যে ভারত থেকে প্রশিক্ষিত একটি গ্রুপের সেকশন কমান্ডার মাজহারুল আলম ভূঞা এবং কোম্পানি কমান্ডার, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং নরসিংদী মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি মরহুম ফজলুর রহমান (ফটিক মাস্টার) বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) একটি চৌকস দলের সঙ্গে একান্ত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

'লাল বইয়ে' নাম থাকাই যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিরূপণের সঠিক পদ্ধতি হয়, তাহলে আমরা স্বদেশে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় ভারতে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিলাম। তাই তাদের আরও দক্ষ এবং পারদর্শী করে তুলতে অতি সংগোপনে একটি আলাদা গ্রুপ তৈরি করেছিলাম। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষিত এই গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন মরহুম মো. নুরুল আমিন (রুহুল) এবং ডেপুটি কমান্ডার ছিলাম আমি। এখানে অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের অধীনে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ করে- ১. মো. জহিরুল হক, জাতীয় তালিকা নং ০৩১২০৩০৮২০, ২. আ. জলিল, জাতীয় তালিকা নং ০৩১২০৩০৮২৪। ওই দু'জনের নাম যদি লাল বইয়ে স্থান পেয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, তাহলে এত সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও আমাকে কেন বারবার তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের সম্মুখীন হতে হবে?

বীর মুক্তিযোদ্ধা