করোনা থেকে সুরক্ষায় প্রবীণদের করণীয়

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রকোপ দিনে দিনে প্রকটতর হচ্ছে। আক্রান্তের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক তাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে। এই মহামারির ভয়াবহতায় প্রবীণ জনগোষ্ঠী আছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। হ্যাঁ, আমি আজকের এই মহামারি দুর্যোগে প্রবীণদের স্বাস্থ্য ও সচেতনতার কথাই বলছি।
আমি প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় ২৫ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছি। তাদেরকে আমার খুব নিকট থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা বলে আপনাদেরকে ভারী করতে চাই না, তবে প্রবীণ জীবনের উপলব্ধিতা শুধু তারাই বুঝবেন, যাদের আর (জীবনে) ফিরে আসার কোনো পথ নেই। তখন আর বুঝেই বা কী হবে?
প্রবীণ হাসপাতালে প্রবীণসহ সব বয়সী রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। ১৯৬০ সাল থেকে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের এই হাসপাতাল যত্নের সঙ্গে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে তেমন সচ্ছল না, আছে অনেক সীমাবদ্ধতা। স্পেশালাইজড ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরও অভাব রয়েছে। দেশে প্রবীণদের জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত থাকলে আরও গতিশীল ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব বলে আমি আশাবাদী।
আমাদের হাসপাতালের সঙ্গেই রয়েছে একটি প্রবীণ নিবাস, এখানে বাস করেন প্রায় ৫০ জন সম্মানীত প্রবীণ ব্যক্তি। আপনারা জানেন, প্রবীণ বয়সে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় তারা থাকেন একাধিক রোগে আক্রান্ত। এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে তাদের সতর্ক করা, দূরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এমতাবস্থায় প্রবীণদের যা করণীয়
১. যতটুকু সম্ভব কক্ষে অবস্থান করুন।
২. মাস্ক ব্যবহার করুন, হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন।
৩. অন্য কারও হাত বা গায়ের সংস্পর্শে যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৪. স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রাখুন।
৫. হাঁচি-কাশির সময় কাপড়, টিস্যু বা বাহু ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে সেখানে থুথু, কফ বা সর্দি ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
৭. বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাতায়াত থেকে বিরত থাকুন।
৮. খালি পায়ে হাঁটবেন না; স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। বাইরে ব্যবহার করা স্যান্ডেল কোনো
অবস্থাতেই ঘরের ভেতরে আনবেন না।
৯. গরম পানি ব্যবহার করুন ও গরম পানির সঙ্গে অল্প লবণ ও লেবু দিয়ে তিন-চারবার পান করুন।
১০. বেশি করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খান।
আপনারা যারা প্রবীণ, শহরে, উপশহরে অথবা গ্রামে- অনেকে আছেন কর্মঠ ও কর্মক্ষম, সারাজীবন কাজ করেছেন, এখনও কাজ করে যাচ্ছেন। অনেক পরিবারে দেখা যায়, প্রবীণরা হাটবাজার করছেন, বাসাবাড়ির বিল পরিশোধের জন্য ব্যাংকে যাতায়াত করছেন। ঘরে বসে থাকতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে আমার অনুরোধ, চায়ের দোকানে যাওয়া অথবা অন্য কোনো অজুহাতে বা কৌতূহলী হয়ে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সবার প্রতি আহ্বান- সম্মানের সঙ্গে প্রবীণদের সেবা দিন ও নিজের বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন।
প্রবীণরা থাকুন সুস্থ, সুন্দর, রোগমুক্ত এবং আপনাদের জীবন কাটুক সুখে, শান্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে- এই কামনা।
উপপরিচালক ও হাসপাতাল ইনচার্জ, বাংলাদেশ প্রবীণ হাসপাতাল, ঢাকা