নিশিকুটুম্ব নাকি?

.
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৬ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০৬
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার রাত্রির অন্ধকারে যেই প্রকারে শতাধিক বৃক্ষ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাইতেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘আইবিএ’ তথা ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নূতন ভবন নির্মাণের জন্য বৃক্ষগুলি কর্তন করা হইয়াছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষ কাটিবার পূর্বে প্রক্টরের অনুমতি লইতে হয়। তিনি সমকালকে প্রাঞ্জল ভাষায় বলিয়াছেন, এইরূপ কোনো অনুমতি তাঁহার দপ্তর হইতে প্রদান করা হয় নাই। পাশাপাশি কর্তিত বৃক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়কে অনতিবিলম্বে বুঝাইয়া দিবার যেই নিয়ম রহিয়াছে, উহাও এই ক্ষেত্রে স্পষ্টত লঙ্ঘিত হইয়াছে। আমরা মনে করি, কেবল প্রক্রিয়াজনিত কারণেই এই অঘটনে সংশ্লিষ্টদের অপরাধপ্রবণতা স্পষ্ট হইয়াছে। উদ্দেশ্য যদি ‘মহৎ’ হইবে, তাহা হইলে নিশিকুটুম্বের ন্যায় দিবালোককে ভয় পাইবে কেন? আর এই প্রকারে নির্বিচার বৃক্ষ নিধন করিয়া ‘উন্নয়ন’ কতটা টেকসই হইবে– সেই প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ বটে।
আমরা ইহাও স্মরণ করাইয়া দিতে চাহি, বিশ্ববিদ্যালয়টির যেই স্থানের শতাধিক বৃক্ষ কাটিয়া ফেলা হইয়াছে, উহা জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকা। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের উদ্ধৃত করিয়া ইতোপূর্বে সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছিল, তথায় রহিয়াছে দেড় শতাধিক প্রজাতির বৃক্ষ এবং বিপুলসংখ্যক গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। যেই কারণে এলাকাটি ইতোমধ্যে ‘জাবি সুন্দরবন’রূপে পরিচিতি পাইয়াছে। এইরূপ সংবেদনশীল এলাকায় সবুজ ধ্বংস করিবার অর্থ ধূসর ভবিষ্যৎ ডাকিয়া আনা। এই অবিমৃষ্যকারিতা অবিলম্বে বন্ধ করিতে হইবে। কারণ শিক্ষায়তনের উৎকর্ষের ক্ষেত্রে উহার অবকাঠামোগত পরিস্থিতির সহিত প্রাকৃতিক পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্য উন্নত বিশ্বে উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করা হইয়া থাকে।
‘চুরি’ করিয়া বৃক্ষ নিধনের অঘটনটিকে বিচ্ছিন্ন হিসাবে দেখিবারও অবকাশ নাই। আমরা দেখিয়া আসিতেছি, মহাপরিকল্পনা ছাড়াই সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়টির যত্রতত্র কংক্রিটের ভবন নির্মাণের ধুম চলিতেছে। গত জুন মাসে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গিয়াছিল, এক দশকেরও কম সময়ে প্রায় ৮৫ একর সবুজ ভূমি অবকাঠামো নির্মাণে চলিয়া গিয়াছে। ইহা দিয়াই অর্ধশতাব্দীপ্রাচীন উচ্চ শিক্ষায়তনে প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মাত্রা বোঝা যায়। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নহি; কিন্তু উহা হইতে হইবে পরিবেশসম্মত ও টেকসই।