ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নিঃশর্ত সংলাপই সম্মানজনক শর্ত

নিঃশর্ত সংলাপই সম্মানজনক শর্ত

.

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ১৮:০৭ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ | ০০:০৭

জাতীয় জীবনের সন্ধিক্ষণ এই নভেম্বর মাস। ২০২৪ সালের শুরুতেই যেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করিতে হইবে, তাহার তপশিলের ঘোষণা এই মাসেই হইতে হইবে। তপশিল ঘোষণার ৯০ দিবসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। কিন্তু গত অক্টোবরের শেষ লগ্নে জাতি দেখিল ভয়াবহ সংঘাত। নভেম্বর মাসের সূচনায় দেখিল হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হইয়া কারান্তরীণ। পুলিশ বনাম বিএনপি কর্মীদের সংঘাতে উত্তপ্ত রাজপথ। পরিস্থিতি যখন চূড়ান্ত বিরোধপূর্ণ, সেই অবস্থায় সংলাপের ডাক বেমানান শোনাইতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সংকটের সময়েই তো সমাধানের জরুরত বেশি।

এই দফায় সংলাপের আহ্বান আসিয়াছে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ হইতে। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত মহাসমাবেশ পুলিশের হামলায় ভণ্ডুল হইবার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আহ্বানটি ছিল সংলাপ প্রসঙ্গে। ১ নভেম্বরে প্রকাশিত সমকালের সংবাদ জানাইয়াছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বাংলাদেশবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বলিয়াছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করিতে হইলে রাজনীতির শরিকদের মধ্যে সংলাপ যে হইতে হইবে, ইহা স্বীকৃত সত্য। ইহা বলিবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরকার পড়ে না। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলকে পূর্বের ন্যায় বাংলাদেশের পক্ষে পাইতে হইলে এই জাতীয় সুপরামর্শ উপেক্ষা করা ঠিক হয় না। এই দিকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংলাপের আবশ্যকতার কথা স্বীকার করিয়াছেন।

সংলাপের পূর্ববর্তী আহ্বানসমূহের ব্যর্থতার পরে এইবার নূতন হইল নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান। তাহা ব্যাখ্যা করিলে এই দাঁড়ায় যে, বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি মানিয়া লওয়ার শর্ত এবং সরকারের তরফে সংবিধান মানিয়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের শর্ত আপাতত উহ্য থাকিবে। সংলাপের শর্তের তালিকা হইতে সেইগুলি আলোচনার এজেন্ডার মধ্যে পাঠাইয়া দিবে। এই দিক হইতে দেখিলে নিঃশর্ত সংলাপের ডাক নিজেই উভয় পক্ষের জন্য সম্মানজনক শর্ত হাজির করিয়াছে। বাকিটা দুই প্রতিপক্ষের দরকষাকষির ব্যাপার। 

একটি গ্রহণযোগ্য আহ্বান দেখিয়াই আমরা আকাশকুসুম ভাবিয়া আশাবাদী হইতে পারিতেছি না। বাস্তবে বিরোধী দল চূড়ান্ত আন্দোলনে এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় হইতে নমনীয়তার সামান্যতম ইঙ্গিতও দেখা যাইতেছে না। এই অবস্থায় তপশিল ঘোষিত হইলে সংঘাত আরও বাড়িবে। প্রধান বিরোধী দল এবং তাহার সমর্থক কোটি কোটি ভোটারের দাবি উপেক্ষা করিয়া হয়তো নির্বাচনও অনুষ্ঠান করা যাইবে। কিন্তু তাহা কেবল সংঘাতকে আরও দীর্ঘই করিবে। কেননা, একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন যতদিন না অনুষ্ঠিত হইবে ততদিন দেশের শাসনভার কাহার হাতে থাকা উচিত, তাহা লইয়া বিবাদ ও বিতর্কের অবসান হইবে না। একটি সত্যিকার জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হইলে আন্তর্জাতিক স্তরেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করা কঠিন হইবে। সুতরাং যাহা পরে হইলেও করিতেই হইবে, তাহা আগাম হওয়াই শ্রেয়। তাই সংলাপে আসুন।  

আরও পড়ুন