
শামসুল হক (১৯১৮-১৯৬৫)
আজ ১ ফেব্রুয়ারি, আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মহান ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ও টাঙ্গাইলের গর্ব জননেতা শামসুল হকের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। জননেতা শামসুল হক ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল বিভাগ-পূর্ব ভারতবর্ষে। পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের পূর্বসূরি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এর পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানের গণপরিষদের সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫০ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে সংগ্রাম করেছেন।
জননেতা শামসুল হক আওয়ামী লীগের প্রথম এবং তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সরকারবিরোধী রাজনীতিতে তিনি ছিলেন প্রথম সারির নেতা। তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৩ সালে কারামুক্তির পর ঘরোয়া ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে আওয়ামী লীগ তাকে বহিস্কার করে, যার ফলে তিনি চিরকালের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এতে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এই বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতার নাম।
১৯৬৪ সালে শামসুল হক হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন এবং ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ইন্তেকাল করেন। শামসুল হক গবেষণা পরিষদ অনেক খুঁজে মৃত্যুর ৪২ বছর পর ২০০৭ সালে কালিহাতি উপজেলার কদিম হামজানিতে মরহুমের কবর আবিস্কার করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিস্কার, তার মস্তিস্ক বিকৃতি, নিখোঁজ হওয়া এবং অকাল মৃত্যুর রহস্য দীর্ঘকাল পরে আজও উন্মোচিত হয়নি।
১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন জননেতা শামসুল হক। সেই সময় তিনি প্রথম ব্যক্তি ছিলেন, যিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও সাধারণ নির্বাচনে বিখ্যাত এবং উঁচু পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের জমিদার খুররুম খান পন্নীকে নির্বাচনে পরাজিত করায় সমগ্র ভারতে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারণা ছিল, রাজনীতি কেবল উচ্চ বংশ মর্যাদার অধিকারীদের জন্যই প্রযোজ্য। তার জয়ের মধ্য দিয়ে সেই ধারণার অবসান ঘটে। তারই পরিক্রমায় সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে সারাজীবন রাজনীতি করে গেছেন শামসুল হক। কারাবরণ করেছেন দেশের অন্য ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে। কিন্তু আমরা অন্যদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করলেও ভুলে গেছি শামসুল হককে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আজ তাকে চেনেন না। তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না কোনো পরিসরে। এককথায় আমরা ভুলে গেছি এই মহান নেতাকে, আমরা ভুলে গেছি এই মহান নেতার অবদানকে।
আজ শামসুল হকের ১০৩ তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তার বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
শামসুল হকের দৌহিত্র
মন্তব্য করুন