এ বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ইতোমধ্যে করোনার টিকা দেওয়াও শুরু হয়েছে দেশে। বাংলাদেশের মানুষ করোনা কমে যাওয়ায় ও টিকা নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে আছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যারা এক কোটি রেমিট্যান্স যোদ্ধা দেশের বাইরে আছি, তারা নানারকম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করছি। আমাদের আত্মীয়স্বজন নিশ্চয় কম-বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন; ঠিক তেমনি আমরা পৃথিবীর যে যে প্রান্তেই থাকি বা যেমনই থাকি না কেন, সব সময় দেশ নিয়ে উৎকণ্ঠা হয়।
জাপানে অন্য যে কোনো শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় করোনাভাইরাস নিয়ে কখনোই বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি না হলেও এ বছরের প্রথম দিকে দিনকয়েক করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এক দিনে টোকিওতে আড়াই হাজারসহ জাপানে প্রায় আট হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জাপান সরকার যেখানে এ বছর টোকিও অলিম্পিক আয়োজন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল, তখন করোনার এই পরিস্থিতিও ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক। বলাবাহুল্য, টোকিও অলিম্পিক আয়োজনে খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার। এখন এই অলিম্পিক আয়োজন বাতিল হলে বাড়তি দুই বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। জাপান সরকার তৎক্ষণিকভাবে এক মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। পরে এই জরুরি অবস্থা আর এক মাস বাড়িয়ে মার্চ মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত করা হয়। এখন অবশ্য করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। জাতীয় ইস্যুতে জাপানিদের মধ্যে বড় কোনো দ্বিধাবিভক্তি না থাকা ও সহজেই একমত হওয়ার কারণে সরকার কোনো কাজে তাড়াহুড়া করে না। অন্যকে অনুকরণ করা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর ধীরস্থির পদক্ষেপ নেয়। যেমন- জাপানের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে হোক্কাইডো দ্বীপে সমুদ্রের নিচ দিয়ে ৫৩.৮৫ কিলোমিটার ট্রেনলাইন করতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই দশক। খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১২ গুণ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, জাপানের নদীকেন্দ্রিক ধানচাষ করার এক প্রজেক্ট ১৫৯০ সালে, অর্থাৎ ৪৩১ বছর আগে শুরু হয়ে এখনও চলছে। নদীকে বহমান রাখা ও সংস্কার করে ধানচাষ করা, যা কোনো বিমূর্ত পরিকল্পনা ছাড়া হয় না। করোনার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জাপানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ অনেকটা শেষ হওয়ার পথে।
জাপানের জনগণ সব সময় সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। এ কারণে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম আগেকার মতো নিয়মিত সাহিত্যসভা করতে পারছে না। গত বছর বইমেলার আয়োজন করাও সম্ভব হয়নি। শুধু সাংবাদিক, লেখক নয়, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যপ্রেমী যারা সদিচ্ছায় সভায় উপস্থিত হয়ে কিছু বলা ও শোনার আগ্রহ দেখাতেন, এখন আর সেটা হয় না। ইদানীং দেশের বাইরেও অনেক দেশেই বইমেলা হয় এবং এ মেলার পরিসর দিন দিন বাড়ছে। মেলাকে ব্যবহার করে দেশ থেকে লোক নেওয়ার বাণিজ্য হয়। লোকজন দল বেঁধে মেলায় যায়। বই নেড়েচেড়ে দেখে আনন্দ পায়। কেউ কেউ একসঙ্গে অনেক বই কিনেও ফেলে।
জাপানে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরামের কাজকর্ম এখন চলছে ভার্চুয়াল আলোচনার মধ্য দিয়ে। গত ৩০ জানুয়ারি সবাই তেমনই এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মিলিত হন। আলোচনায় বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক, কাজী ইনসান, মোতালেব শাহ আয়ুব, আনিসুর রহমান, মইনুল শাওন, দেলোয়ার হোসেন, ফেরদৌস স্বাধীন, মোতাহের হোসেনসহ দেশ থেকে বদরুল বোরহান ও কবি মিল্টন অংশগ্রহণ করেন। ওই দিনের আলোচনায় লেখকদের কবিতা আবৃত্তি, লেখা পাঠ ও করোনায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া গুণীজনদের নিয়ে আলোচনা হয়। সবাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামীতে বইমেলার আয়োজনসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
টোকিও, জাপান
hm.motahar@yahoo.co

বিষয় : ভার্চুয়াল সাহিত্যচর্চা

মন্তব্য করুন