- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- মন্দ কাজ প্রতিহত করা
মন্দ কাজ প্রতিহত করা

ইসলামে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকা ও মন্দ থেকে নিজেকে ও অন্যকে বিরত রাখা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মন্দ কাজ হচ্ছে, যে কাজগুলো মানুষের অকল্যাণ ও অমঙ্গল বয়ে আনে। যেমন : ধোঁকা দেওয়া, ওজনে কম দেওয়া, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ করা, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, প্রতারণা করা, মাদকাসক্ত হওয়া, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হত্যা-খুন, গুম, ধর্ষণ ইত্যাদি। এসব মন্দ কাজই মানবজীবনে অকল্যাণ ও অমঙ্গল বয়ে আনে। মুসলিম শরিফে বর্ণিত- রাসুলে পাক (সা.) একদিন এক বিক্রেতার খাদ্যের স্তূপের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাঁর হাত ওই খাদ্যের স্তূপে প্রবেশ করান, এতে তাঁর হাত ভিজে গেল এবং অনুপযুক্ত খাদ্যের সন্ধান পেলেন। তখন রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, 'হে খাদ্য বিক্রেতা! এগুলো কী?' তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! খাদ্যগুলো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, 'তুমি এ ভেজা খাদ্যগুলো ওপরে রাখোনি কেন, যাতে সবাই তা দেখে নিতে পারে? যে ব্যক্তি কাউকে ধোঁকা দেবে সে আমার উম্মত নয়।' ব্যবসা করা ইসলামে সুন্নত ও সৎকর্ম বলে গণ্য হলেও সব ধরনের ব্যবসা ইসলামে বৈধ নয়। যে ব্যবসায়ে জুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, ঠকবাজি, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি এবং হারাম জিনিস যেমন- মাদকদ্রব্য, শূকর, মূর্তি, প্রতিকৃতি ইত্যাদির ব্যবসা ইসলামে হারাম। নবী করিম (সা.) একদিন সালাতের জন্য বের হয়ে দেখতে পেলেন, লোকজন কেনাবেচা করছে। তখন তিনি তাদের ডেকে বলেন, 'হে ব্যবসায়ী লোকেরা! কিয়ামতের দিন কিছু ব্যবসায়ী মহা পাপীরূপে উঠবে; তবে তারা নয়, যারা আল্লাহকে ভয় করবে, সততা, বিশ্বস্ততা সহকারে ব্যবসা করবে।' রাসুলে পাক (সা.) আরও ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি কাউকে ধোঁকা দেবে সে আমার উম্মত নয়।' (বুখারি ও মুসলিম)।
বর্তমান পৃথিবীতে যত জটিল ও মারাত্মক সমস্যা রয়েছে, তন্মধ্যে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তি হলো সবকিছুর শীর্ষে। যুদ্ধবিগ্রহের চেয়েও এটা ভয়ংকর। কারণ কোনো যুদ্ধের মাধ্যমে একটি জাতি-গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে চাইলেও একেবারে তা নির্মূল করা সম্ভব নয়; যা কিনা মাদকদ্রব্যের মাধ্যমে সম্ভব। ইসলামে মাদককে হারাম করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, সব ধরনের নেশাজাতীয় বস্তুই নিষিদ্ধ। কোরআন ও হাদিসে মদকে (খামার) বলা হয়েছে। এই (খামার) শব্দের অর্থ হলো, আবৃত করা, ঢেকে দেওয়া, গোপন করা, আচ্ছন্ন করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে 'খামার' হলো সেই বস্তু, যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে লোপ করে দেয়। হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন, 'মদ তাই, যা মানুষের বিবেককে আচ্ছন্ন করে।'
যারা অন্যায় দেখেও তার প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা ফিকির করে না, তারা কালিমায়ে তাওহিদের হকের অবমাননা করে। তারা সারাজীবন এ কালিমা পাঠ করলেও তা তাদের আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচাতে যথেষ্ট হবে না। হাদিসে বর্ণিত- রাসুলে পাক (সা.) বলেন, কালিমায়ে তাওহিদ লা ইলাহা ইলল্গালল্গাহ তার পাঠকারীকে সর্বদা উপকার করতে থাকে এবং তার ওপর হতে আজাব ও বালা-মুসিবত দূর করতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত এর হকের অবমাননা না করা হয়। সাহাবিগণ (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, কালিমায়ে তাওহিদের হকের অবমাননা করার অর্থ কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানি করা হয় আর তা বন্ধ করার জন্য কোনো চেষ্টা করা হয় না।
অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা অন্যায় কাজে বাধা দেয় না, তাদের জন্য পরকালের কঠিন শাস্তি ছাড়াও এ দুনিয়াতেও আল্লাহর আজাবে পাকড়াও হবে। এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত- রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যদি কোনো কোনো কওমের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় এবং ওই কওমের মধ্যে শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে ওই গুনাহ থেকে বাধা না দেয়, তবে মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই তাদের ওপর আল্লাহর আজাব নাজিল হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের যাবতীয় মন্দ কর্ম থেকে বিরত থেকে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভের তৌফিক দান করুন।
বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
মন্তব্য করুন