২০ মে সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। 'নদী দখল করে বাড়ি' শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ঢাকার নবাবগঞ্জের টিকারপুর এলাকায় একটি ঘাটলা ও ইছামতী নদী দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হিসাবমতে, সারাদেশে নদী দখলদারের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার। দখলবাজির কী বিস্ময়কর তথ্য! সারাদেশে নদী দখল ও দূষণের এমন চিত্র জীবন ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত। নদী ও খাল অবৈধভাবে দখল হওয়ার কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে মানুষের জীবনও। জীবনের প্রয়োজনেই নদী বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের দেশে অসংখ্য কলকারখানা গড়ে উঠেছে। পণ্য পরিবহনে নৌপথের ভূমিকা অপরিসীম। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই নদীপথ যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

কেননা সড়ক ও রেলপথের তুলনায় নদীপথে পণ্য পরিবহন অনেক সাশ্রয়ী। কৃষি ও কৃষকের ক্ষেত্রে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। যেমন- পণ্য পরিবহন, বাজারজাত ও সেচের জন্য নদীর ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নদী দূষণ ও ভরাটের কারণে মৎস্য প্রজনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পাশাপাশি কৃষকের সেচব্যবস্থাও দুরূহ হয়ে পড়ছে। নদীর সঙ্গে জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক সুনিবিড়। উন্নত বিশ্বে আমরা দেখেছি নদী খনন করে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের দেশে নদনদী বিপন্ন অনেকাংশেই মনুষ্যসৃষ্ট কারণে। আমরা নদী দখলের বিভিন্ন নগ্ন চিত্র অবলোকন করছি। এমনকি নদীকে দ্বিখণ্ডিত করে সেখানে রাস্তা বানানোর চিত্রও আমরা দেখেছি। বলবান ও প্রভাবশালী চক্রের হোতারা নদনদী দখল-দূষণের মতো নানারকম দুস্কর্মের হোতা। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদনদীর এমন বিপন্ন দশা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও দায়িত্বশীলদের আরও কঠোর ও অগ্রণী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতে হবে। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হয়ে নদী রক্ষায় যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও নিজ নিজ জায়গা থেকে নদীর প্রবাহ চলমান রাখার জন্য অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হবে। জীবন ও পরিবেশের প্রয়োজনে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হতেই হবে।
বড়বাড়ী, গাজীপুর
habib.bangla00@gmail.com

বিষয় : জীবনের প্রয়োজনে নদী

মন্তব্য করুন