
প্রথমেই জ্ঞান প্রসঙ্গে বলা যায়, কোনো কিছু সম্পর্কে সম্যক ধারণা করার শক্তিই হলো জ্ঞান। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের ভালো-মন্দ ও গুণাগুণ জানাটাই হলো জ্ঞান। আবার সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক গৃহীত সিদ্ধান্তকেও জ্ঞান বলা যায়। তবে বিশাল তথ্যভান্ডার গড়ে তোলাটাই জ্ঞান নয়। কারণ তথ্য জ্ঞান বিনির্মাণ কার্যক্রমে সহায়তা করে মাত্র। সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণ করে মস্তিস্ক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তখন তা জ্ঞানে পরিণত হয়। জ্ঞানীকে নিশ্চিতভাবেই তথ্যসমৃদ্ধ হতে হয়। আমরা অনেকে অনেক সময় প্রখর স্মৃতিশক্তির বদৌলতে মস্তিস্কের মাঝে বিশাল তথ্যভান্ডার গড়তে সক্ষম হয়ে নিজেকে বড় মাপের জ্ঞানী মনে করি। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করা ও জ্ঞান বিনির্মাণ করা যে এক বিষয় নয়, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। আমরা সংগ্রহ করে বিশাল তথ্যের পাহাড় গড়তে পারি; তাকে কাজে লাগিয়ে একটু একটু করে জ্ঞান বিনির্মাণ কার্যক্রমে অগ্রসর হওয়া ও সে ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনই যথার্থ জ্ঞানীর কাজ। প্রজ্ঞা হলো অর্জিত জ্ঞানকে নিজের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতায় শানিত করতে পারা এবং তার সুফলকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সামঞ্জস্য বিধানের সক্ষমতা অর্জন করতে পারা।
আবার অন্যভাবে বলা যায়, প্রজ্ঞা হলো সেই জ্ঞান যে জ্ঞান কর্ষিত ও চর্চিত হয়েছে, কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে এবং যার দ্বারা মানুষের মঙ্গল সাধিত হয়ে থাকে বা তার সঙ্গে মানুষের কল্যাণ সাধনের যোগসূত্র রয়েছে। প্রজ্ঞাবান অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্যের অনুপস্থিতিতে নিজ যোগ্যতাবলে মানুষের কল্যাণে বিশেষ মুহূর্তে সঠিক ও উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একজন প্রজ্ঞাবানকে অবশ্যই জ্ঞানী হতে হয়; কেননা অর্জিত জ্ঞানই প্রজ্ঞাবানের মূল চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করে। তবে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি সব সময় প্রজ্ঞাবান নাও হতে পারেন।
জ্ঞান পুঁথিগত বিদ্যা থেকে অর্জন করা সম্ভব। জ্ঞানের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রজ্ঞা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মানুষ প্রাপ্ত হয়। গণিতের পরিভাষায় জ্ঞানকে প্রবাহ আর প্রজ্ঞাকে মজুদ (স্টক) ধারণা বিবেচনা করা যায়। জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই প্রজ্ঞা অর্জনের পথে আমাদের অগ্রসর হতে হয়। মানুষের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার আলোকে কোনো কিছু নতুন করে তৈরি করাকে এবং কোনো বিষয়কে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চিন্তাকে সৃজনশীলতা বলা যায়। যখন মানুষের কাজের মাধ্যমে নবতর কিছু সৃষ্টি হয় বা কোনো সমস্যা সমাধানের নতুন পথনির্দেশনা পাওয়া যায় কিংবা কোনো বিষয়ের নতুন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদানের সক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়, তখন ওইসব গুণাবলিসম্পন্ন মানুষদের সৃজনশীল মানুষ বলা হয়। সাধারণভাবে আমরা কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সৃজনশীল মানুষ বিবেচনা করে থাকি। তবে সৃজনশীল হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে ওই শৈল্পিক গুণ থাকতেই হবে এমনটা নয়। সৃজনশীলতা কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা, কারিগরি সৃজনশীলতা, সংযোগকারী সৃজনশীলতা ও বিশ্নেষণধর্মী সৃজনশীলতা। সৃজনশীল ব্যক্তি বিরামহীনভাবে কাজ করেন না বরং কাজ সৃষ্টি করে তথা নতুন কাজ আবিস্কার করে অন্যদের শিখিয়ে থাকেন। আমরা আরও বিভ্রান্ত হই এমনটি ভেবে যে, অন্যের সৃষ্টি করা বিষয়কে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া বা তার নতুন ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণ করা কোনো সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে না। কিন্তু একদম শূন্য থেকে সৃষ্টি করার অর্থই যে সৃজনশীলতা নয়, আর মানুষের পক্ষে তা যে অসম্ভব কাজ- তা আমাদের বোধগম্য হয় না। সংগৃহীত তথ্য, অর্জিত জ্ঞান ও উপাদানকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধারণা, সমাধান বা বস্তু তৈরি করাই প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীলতা। ওই কাজটি করতে যারা সক্ষম তারাই প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল মানুষ।
সৃজনশীল হতে হলে শূন্য থেকেই সবকিছু শুরু করতে হবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। গবেষণার জগতে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে বা নিজের কোনো ভাবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ওই বিষয়ের কাছাকাছি অন্যান্য গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত বা ভাবগুলোর সহায়তা গ্রহণ বা সমর্থনপুষ্ট হওয়ার নিয়ম বা রীতি আছে। সে ক্ষেত্রে সৃজনশীল কর্মের মর্যাদাহানি হয় না বরং তাতে সৃজনশীলতা পরিচর্যার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়ে তা আরও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের বিদ্যাদাতা ও বিদ্যাগ্রহীতাদের গভীরভাবে ভাবনা ভাবার মনে হয় সময় হয়েছে, আমাদের অবস্থান কোথায়। আমরা কি কেবল তথ্য আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব? আমরা কি চিন্তাশীল মানুষের আসনে আসীন হয়ে জ্ঞান বিনির্মাণে ব্যাপৃত হতে পেরেছি? প্রজ্ঞা-সৃজনশীলতা পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমরা কতটা পথ অতিক্রম করতে পেরেছি? লক্ষ প্রদীপ জ্বালাতে হলে, বিশ্ব জগৎকে টলাতে হলে আমাদের বিচরণ ক্ষেত্রটি কোথায় এবং কেমন হওয়া উচিত? এসব নিশ্চয়ই চিন্তাশীল গুণীজনের চিন্তার বিষয়।
সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ
আবার অন্যভাবে বলা যায়, প্রজ্ঞা হলো সেই জ্ঞান যে জ্ঞান কর্ষিত ও চর্চিত হয়েছে, কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে এবং যার দ্বারা মানুষের মঙ্গল সাধিত হয়ে থাকে বা তার সঙ্গে মানুষের কল্যাণ সাধনের যোগসূত্র রয়েছে। প্রজ্ঞাবান অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্যের অনুপস্থিতিতে নিজ যোগ্যতাবলে মানুষের কল্যাণে বিশেষ মুহূর্তে সঠিক ও উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একজন প্রজ্ঞাবানকে অবশ্যই জ্ঞানী হতে হয়; কেননা অর্জিত জ্ঞানই প্রজ্ঞাবানের মূল চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করে। তবে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি সব সময় প্রজ্ঞাবান নাও হতে পারেন।
জ্ঞান পুঁথিগত বিদ্যা থেকে অর্জন করা সম্ভব। জ্ঞানের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রজ্ঞা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মানুষ প্রাপ্ত হয়। গণিতের পরিভাষায় জ্ঞানকে প্রবাহ আর প্রজ্ঞাকে মজুদ (স্টক) ধারণা বিবেচনা করা যায়। জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই প্রজ্ঞা অর্জনের পথে আমাদের অগ্রসর হতে হয়। মানুষের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার আলোকে কোনো কিছু নতুন করে তৈরি করাকে এবং কোনো বিষয়কে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চিন্তাকে সৃজনশীলতা বলা যায়। যখন মানুষের কাজের মাধ্যমে নবতর কিছু সৃষ্টি হয় বা কোনো সমস্যা সমাধানের নতুন পথনির্দেশনা পাওয়া যায় কিংবা কোনো বিষয়ের নতুন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদানের সক্ষমতা পরিলক্ষিত হয়, তখন ওইসব গুণাবলিসম্পন্ন মানুষদের সৃজনশীল মানুষ বলা হয়। সাধারণভাবে আমরা কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সৃজনশীল মানুষ বিবেচনা করে থাকি। তবে সৃজনশীল হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে ওই শৈল্পিক গুণ থাকতেই হবে এমনটা নয়। সৃজনশীলতা কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা, কারিগরি সৃজনশীলতা, সংযোগকারী সৃজনশীলতা ও বিশ্নেষণধর্মী সৃজনশীলতা। সৃজনশীল ব্যক্তি বিরামহীনভাবে কাজ করেন না বরং কাজ সৃষ্টি করে তথা নতুন কাজ আবিস্কার করে অন্যদের শিখিয়ে থাকেন। আমরা আরও বিভ্রান্ত হই এমনটি ভেবে যে, অন্যের সৃষ্টি করা বিষয়কে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া বা তার নতুন ব্যাখ্যা-বিশ্নেষণ করা কোনো সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে না। কিন্তু একদম শূন্য থেকে সৃষ্টি করার অর্থই যে সৃজনশীলতা নয়, আর মানুষের পক্ষে তা যে অসম্ভব কাজ- তা আমাদের বোধগম্য হয় না। সংগৃহীত তথ্য, অর্জিত জ্ঞান ও উপাদানকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধারণা, সমাধান বা বস্তু তৈরি করাই প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীলতা। ওই কাজটি করতে যারা সক্ষম তারাই প্রকৃতপক্ষে সৃজনশীল মানুষ।
সৃজনশীল হতে হলে শূন্য থেকেই সবকিছু শুরু করতে হবে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। গবেষণার জগতে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে বা নিজের কোনো ভাবকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ওই বিষয়ের কাছাকাছি অন্যান্য গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত বা ভাবগুলোর সহায়তা গ্রহণ বা সমর্থনপুষ্ট হওয়ার নিয়ম বা রীতি আছে। সে ক্ষেত্রে সৃজনশীল কর্মের মর্যাদাহানি হয় না বরং তাতে সৃজনশীলতা পরিচর্যার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়ে তা আরও মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের বিদ্যাদাতা ও বিদ্যাগ্রহীতাদের গভীরভাবে ভাবনা ভাবার মনে হয় সময় হয়েছে, আমাদের অবস্থান কোথায়। আমরা কি কেবল তথ্য আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব? আমরা কি চিন্তাশীল মানুষের আসনে আসীন হয়ে জ্ঞান বিনির্মাণে ব্যাপৃত হতে পেরেছি? প্রজ্ঞা-সৃজনশীলতা পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমরা কতটা পথ অতিক্রম করতে পেরেছি? লক্ষ প্রদীপ জ্বালাতে হলে, বিশ্ব জগৎকে টলাতে হলে আমাদের বিচরণ ক্ষেত্রটি কোথায় এবং কেমন হওয়া উচিত? এসব নিশ্চয়ই চিন্তাশীল গুণীজনের চিন্তার বিষয়।
সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ
মন্তব্য করুন