ঢাকায় চলমান 'বঙ্গবন্ধু টি২০ সিরিজ ২০২১' ক্রিকেট খেলায় শুক্রবারের ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে 'সিরিজ জয়' করেছে বললে সবটুকু বলা হয় না। ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে আমাদের ইতিহাস কেবল হেরে যাওয়ারই ইতিহাস বললে অত্যুক্তি হয় না। এ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৬টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে বাংলাদেশ জিতেছিল। দুই দলের মধ্যে যে ২১টি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা 'ওডিআই' অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেও আমরা মাত্র একটিতে জয়লাভ করেছিলাম। অপর একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছিল; বাকি ১৯টিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। এমনকি এর আগে অনুষ্ঠিত ৪টি 'টি২০' ম্যাচেও আমাদের জয়ের ইতিহাস নেই। ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুক্রবারের বিজয় কেবল টি২০ নয়, যে কোনো ফরম্যাটেই প্রথম সিরিজ জয়। করোনা পরিস্থিতিতে ক্রিকেটসহ বিশ্ব-ক্রীড়াঙ্গন যখন প্রায় বিপর্যস্ত, তখন এই অনন্য বিজয় বাংলাদেশকে আরেকবার অদম্য প্রমাণ করেছে।

যদিও এই সিরিজের সব ম্যাচ এখনও শেষ হয়নি; শুক্রবারের ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাকি দুই ম্যাচের জয়-পরাজয় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সমকালের পক্ষ থেকে আমরা অভিনন্দন জানাই। বস্তুত সমকাল পরিবারের পক্ষে আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানাই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক অভিনন্দনবার্তার মধ্য দিয়ে গোটা জাতির উচ্ছ্বাস প্রতিফলিত। আমাদের গর্ব ও আবেগের ক্রিকেট দলের এই সাফল্য গোটা জাতি কীভাবে উদযাপন করছে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে তার প্রতিফলন স্পষ্ট। সন্দেহ নেই, এর আগেও ক্রিকেটের শিরোপা এসেছে বাংলাদেশে। বিশেষত গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে জয়ী হয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল, তা অবিস্মরণীয়।

২০১৮ সালে আমাদের নারী ক্রিকেট দলও এশিয়া কাপ জয় করেছিল। তারও আগে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ তৎকালীন অবস্থানে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে জিতেছিল আইসিসি ট্রফি। কিন্তু তা ছিল মূল বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব এবং আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। বাড়তি পুরস্কার হিসেবে ওই বছরই পূর্ণাঙ্গ ওডিআই দলের মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। সমালোচকের মুখে ছাই দিয়ে তার বছর তিনেকের মাথায় আমরা পেয়েছিলাম টেস্ট দলের মর্যাদা। কিন্তু পরবর্তী দুই দশক যেন কেবলই আশা আর আশাভঙ্গের ইতিহাস। আমাদের জাতীয় দল গত দুই দশকে একবারই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। আর এশিয়া কাপেও রানার্স আপ হয়েছিল অন্তত তিনবার। কিন্তু পরাশক্তি ক্রিকেট দলগুলোর বিপক্ষে বেশিরভাগ দিনই নিজেদের সেরা খেলা দেখাতে পারেনি আমাদের ক্রিকেট দল।

বঙ্গবন্ধু টি২০ সিরিজ যেন সেই খরা কাটিয়ে দিল! আমরা জানি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি সময়ের খেলোয়াড়দের অনেকে অবসরে গেছেন; ফর্মেও নেই অনেকে। কিন্তু তাদের যে যথার্থ উত্তরাধিকার তৈরি হয়েছে- এবারের টি২০ সিরিজ তার প্রমাণ। আমাদের মনে আছে, গত মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিজেদের বদলে দেওয়ার স্বাক্ষর রেখে এসেছে। ওই সফরে স্বাগতিকদের যেমন একমাত্র টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছি, তেমনই তিনটি ওডিআই ম্যাচ জিতেছি। তিনটি টি২০ ম্যাচের মধ্যেও দুটিতে বিজয়ী হয়েছি আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, ক্রিকেটের অপর পরাশক্তি নিউজিল্যান্ডের আসন্ন সফরেও বাংলাদেশ ভালো ফল করবে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দর্শক ও সমর্থকদেরও আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। বিজয়ে যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হই; পরাজয়ে যেন নেতিবাচক অবস্থান না নিই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে কোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয় যে সময়ে এলো, তাও নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। আর কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপ। এই জয়ের ধারা সেখানেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা। এই সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যে আলোক বিচ্ছুরণ আমরা দেখতে পেলাম, তা সামনের দিনগুলোতেও ক্রিকেট দলকে পথ দেখাতে থাকবে।