
বাল্যবিয়ের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই ঘটছে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- অপরিণত বয়সে একজন মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে, সেখানে আমাদের অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ এশিয়াতেও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আমরা। কিন্তু এ রকম এগিয়ে থাকতে আমরা চাই না। আর চাই না বলেই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বাড়ছে। বাড়ছে আইনের প্রয়োগও। সরকারের আইন, প্রচার-প্রচারণা, গণমাধ্যমের ভূমিকা, বেসরকারি নানা সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে বাল্যবিয়ের প্রবণতায় কিছুটা রাশ টেনে ধরা গেলেও করোনাকালে এর লাগাম যেন আলগা হয়ে গেছে।
একটি পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালে দেশে বাল্যবিয়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮৬টি। যাদের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভ ধারণ করেছে পাঁচ হাজার ৮৯ জন কিশোরী। মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সরকারের সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে এভাবে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে। আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির অনেকটাই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি। এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ২০৪১ সাল। কিন্তু করোনাকালে যেভাবে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়েছে তা রীতিমতো আতঙ্কের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অকালে ঝরে পড়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে না আসার মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অতিমারিকালের অস্বাভাবিকতার মাঝেই অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে স্বামীর ঘরে পাঠানোকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। করোনার কারণে দেশে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ তথ্য একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার, যা গত ২৫ বছরে সর্বোচ্চ।
সরকারের আন্তরিকতা, বেসরকারি নানা সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগ, সামাজিক আন্দোলন- কোনো কিছুই এখন বাল্যবিয়ে রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই না পারার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে দরিদ্রতা। আমরা নানা ক্ষেত্রে উন্নতি করছি; সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতিও চোখে পড়ার মতো। আর অবকাঠামোগত উন্নতির ধারা তো যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্যই ঈর্ষণীয়। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে। আর ব্যক্তি পর্যায়ের উন্নয়নে পিছিয়ে থাকাই বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনার পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। আমরা যদি ব্যক্তি পর্যায়ে দারিদ্র্যহার কমাতে না পারি তাহলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমানো কঠিন। বাল্যবিয়ের যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে; স্থানীয় প্রশাসন এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে যেসব বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়; সাদাচোখে সংবাদ এবং ঘটনাস্থলের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এসব বিয়ের আয়োজনের বেশিরভাগই হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গ্রামীণ জনপদে।
যেসব পরিবারে বাল্যবিয়ের আয়োজন হয়, সেসব পরিবারের অধিকাংশই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অনেক পিছিয়ে। মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো, সংসারের ব্যয় নির্বাহ এবং শেষাবধি মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনা থেকেই এসব পরিবারে বিয়ের আয়োজন হয়। অথচ শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা পরিবারে বাল্যবিয়ের খবর সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই আমাদের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক-রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইনটি প্রণীত হয় ২০১৯ সালে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের আগে বিয়ে পড়ানোর শাস্তি এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকার অর্থদণ্ড। এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কার্যক্রমে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মপরিধি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। বাল্যবিয়ের ঘটনাস্থল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেসব অঞ্চলে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন যেন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের সেই সক্ষমতা দিতে হবে। আর তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্প।
কবি ও সাংবাদিক
একটি পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালে দেশে বাল্যবিয়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮৬টি। যাদের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভ ধারণ করেছে পাঁচ হাজার ৮৯ জন কিশোরী। মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সরকারের সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে এভাবে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলে। আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির অনেকটাই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি। এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ২০৪১ সাল। কিন্তু করোনাকালে যেভাবে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়েছে তা রীতিমতো আতঙ্কের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অকালে ঝরে পড়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে না আসার মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অতিমারিকালের অস্বাভাবিকতার মাঝেই অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে স্বামীর ঘরে পাঠানোকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। করোনার কারণে দেশে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ তথ্য একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার, যা গত ২৫ বছরে সর্বোচ্চ।
সরকারের আন্তরিকতা, বেসরকারি নানা সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগ, সামাজিক আন্দোলন- কোনো কিছুই এখন বাল্যবিয়ে রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই না পারার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে দরিদ্রতা। আমরা নানা ক্ষেত্রে উন্নতি করছি; সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতিও চোখে পড়ার মতো। আর অবকাঠামোগত উন্নতির ধারা তো যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্যই ঈর্ষণীয়। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে। আর ব্যক্তি পর্যায়ের উন্নয়নে পিছিয়ে থাকাই বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনার পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। আমরা যদি ব্যক্তি পর্যায়ে দারিদ্র্যহার কমাতে না পারি তাহলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমানো কঠিন। বাল্যবিয়ের যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে; স্থানীয় প্রশাসন এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে যেসব বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়; সাদাচোখে সংবাদ এবং ঘটনাস্থলের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এসব বিয়ের আয়োজনের বেশিরভাগই হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে, গ্রামীণ জনপদে।
যেসব পরিবারে বাল্যবিয়ের আয়োজন হয়, সেসব পরিবারের অধিকাংশই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অনেক পিছিয়ে। মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানো, সংসারের ব্যয় নির্বাহ এবং শেষাবধি মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনা থেকেই এসব পরিবারে বিয়ের আয়োজন হয়। অথচ শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা পরিবারে বাল্যবিয়ের খবর সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই আমাদের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক-রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ানো যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইনটি প্রণীত হয় ২০১৯ সালে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের আগে বিয়ে পড়ানোর শাস্তি এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকার অর্থদণ্ড। এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কার্যক্রমে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মপরিধি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। বাল্যবিয়ের ঘটনাস্থল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেসব অঞ্চলে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন যেন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, তাদের সেই সক্ষমতা দিতে হবে। আর তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্প।
কবি ও সাংবাদিক
বিষয় : অন্যদৃষ্টি মামুন রশীদ
মন্তব্য করুন