
ডা. কামরুল হাসান খান
চিকিৎসকের কাছে মানুষ সর্বাগ্রে প্রত্যাশা করে মানবিকতার আলো। একজন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দানের পাশাপাশি মানবিকতার ছোঁয়ায় রোগীকে আরোগ্যের পথে নিয়ে যেতে কতটা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে আছে অনেক। ডা. কামরুল হাসান খান তেমনই একজন। আর্তমানবতার সেবায় তিনি বরাবরই পালন করে আসছেন অনন্য ভূমিকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ১৯৫৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা এই চিকিৎসক দেশের চিকিৎসকদের অধিকার আদায়ের সব আন্দোলন, পেশাজীবী আন্দোলন, নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সক্রিয় অংশীজন। তিনি ১৯৮৪ থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর তিনি দেশের সব প্রগতিশীল পেশাজীবী সংগঠন নিয়ে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ গড়ে তোলেন এবং পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে তিনি নেতৃত্বদানে আপসহীন ভূমিকা পালন করেন। প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শিক্ষক দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, আইপিজিএমআর, বিএসএমএমইউতে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকাকালে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৬তে সেভেন এশিয়া এডুকেশন এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। তিনি ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে '৯০-এর গণভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ডা. কামরুল ১৯৯০-এ বিএমএর কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ডা. মাজেদ-ডা. জালালের নেতৃত্বে সারাদেশ সফর করে চিকিৎসকদের সংগঠিত করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
তিনি তখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে উগ্রজনদের সঙ্গে শুধু গুরুদায়িত্বই পালন করেননি, একই সঙ্গে আন্দোলনের রূপরেখা নির্ণয়েও রাখেন অনন্য ভূমিকা। তিনি বিসিএস কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব এবং বিএমডিসি, বিএমআরসির কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্যও ছিলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। তিনি বর্তমানে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রাবস্থায় তিনি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সম্পাদক, সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির দু'বার সভাপতি ছিলেন। তিনি পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সংগঠন আইপিপিএনডব্লিউ (১৯৮৫) এবং আইসিএএনের (২০১৭) দক্ষিণ এশিয়ার সহসভাপতির দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি নরওয়ের অসলোতে বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। বর্তমানে আইপিপিএনডব্লিউর নির্বাচিত ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এই কর্ম অধ্যায়ই স্পষ্ট করে বলে দেয় তিনি শুধু পেশার গণ্ডিতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, সামাজিক দায়বোধ থেকে কাজের পরিসর বিস্তৃত করেছেন দেশ-বিদেশের নানা ক্ষেত্রে। ডা. কামরুল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার প্রায় ৩০টি প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়ন এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই মানুষটি পেশার প্রতি বরাবরই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে চেয়েছেন। তার 'বাঙালির মুক্তির ইতিহাস :বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা', 'করোনাভাইরাস :প্রতিরোধ এবং ভ্যাকসিন' ও '৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. মিলন' গ্রন্থগুলো উল্লেখযোগ্য। জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা।
মাহমুদ হাসান: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী
মন্তব্য করুন