- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- র্যাঙ্কিং নিয়ে চিন্তা দুশ্চিন্তা
অন্যদৃষ্টি
র্যাঙ্কিং নিয়ে চিন্তা দুশ্চিন্তা

কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস যা সংক্ষেপে কিউএস সম্প্রতি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে। যেখানে টপ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি; যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৯টি এবং পাকিস্তানের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে স্থান করে নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়- ভারত এবং পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেলেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কেন এতে স্থান পেল না! এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সোজাসাপটা কোনো পথও নেই। তবে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের প্রথমেই আলোকপাত করতে হবে উচ্চশিক্ষার পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আশার চেয়ে হতাশা বেশি ঘুরপাক খায়; নিরাপত্তার চেয়ে শঙ্কা বেশি কাজ করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার চেয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির চর্চা ঢের বেশি হয়। একটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মানদণ্ডকে ভেঙে ফেলার জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র দ্বিতীয়টা আর কী বা হতে পারে!
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির ধরন নিয়ে সবার চিন্তা করা উচিত। আগামীতে আমরা কোন পথে হাঁটব, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের স্নাতক-কর্ম বাজারে সরবরাহ করছে, তাও গবেষণার দাবি রাখে। তবে আমি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাবলিক এবং বেসরকারি উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অস্বীকার করছি না। আমার আসল প্রশ্ন হলো গুণগত মান ও গুণগত মানের উন্নয়ন নিয়ে; উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে। আমি এটাও প্রত্যাশা করছি না, রাতারাতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমেরিকা বা ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়ে যাবে।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজগুলোর তালিকায় পরে (১) কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান এবং এভাবে চাকরির বাজারে সুনাম অর্জন করা; (২) গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি এবং তা প্রকাশনার মাধ্যমে বিতরণ করে একাডেমিক খ্যাতি আহরণ; (৩) বর্তমান জ্ঞানের ক্রমাগত উন্নয়ন সাধন এবং (৪) নতুন কিছুর উদ্ভাবন। এ ছাড়া এই বিশ্বায়নের যুগে আরও কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রে; আর তা হলো, বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অনুপাত, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে। আরও দেখতে হবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং বিদেশি বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা। কিউএস যে সূচকগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে, তা উল্লিখিত সূচকগুলোর অনুরূপ। সুতরাং, উল্লিখিত সূচকগুলোয় উন্নয়ন ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ে উন্নয়ন কিন্তু সম্ভব না। এটা এখন ভাবার সময় এসেছে, আমরা কীভাবে এগুলোতে উন্নয়ন সাধন করব।
গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজ উদ্যোগে সমাজের বিত্তবান এবং তাঁদের স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে গবেষণা তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনের প্রতিনিধির (ব্যবসা মালিক সমিতি) মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে পাঠ্যক্রমে কর্মজীবনের প্রয়োজন প্রতিফলিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেকহোল্ডাররা একসঙ্গে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মজীবনে বেশি সমাদৃত হবে। ব্যাচেলর এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। অন্যথায়, স্নাতকরা অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে শিখবে না। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিদেশি প্রশিক্ষক আর খেলোয়াড়ের কমতি নেই। ঠিক তেমনি এখন দেখা উচিত, কীভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী বেশি বেশি আকর্ষণ করা যায়।
এই বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ; সমস্যা নয়। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব গঠিত হোক দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ কমিটি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন হোক আগামীর মেগা প্রজেক্ট। এভাবে শুধু কিউএস নয়; আমাদের লক্ষ্য হবে বিশ্বের যে কোনো সেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ের সম্মুখ সারিতে থাকার।
ড. কাজী ছাইদুল হালিম: শিক্ষক ও গবেষক
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির ধরন নিয়ে সবার চিন্তা করা উচিত। আগামীতে আমরা কোন পথে হাঁটব, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের স্নাতক-কর্ম বাজারে সরবরাহ করছে, তাও গবেষণার দাবি রাখে। তবে আমি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাবলিক এবং বেসরকারি উভয় ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অস্বীকার করছি না। আমার আসল প্রশ্ন হলো গুণগত মান ও গুণগত মানের উন্নয়ন নিয়ে; উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে। আমি এটাও প্রত্যাশা করছি না, রাতারাতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমেরিকা বা ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়ে যাবে।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজগুলোর তালিকায় পরে (১) কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান এবং এভাবে চাকরির বাজারে সুনাম অর্জন করা; (২) গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি এবং তা প্রকাশনার মাধ্যমে বিতরণ করে একাডেমিক খ্যাতি আহরণ; (৩) বর্তমান জ্ঞানের ক্রমাগত উন্নয়ন সাধন এবং (৪) নতুন কিছুর উদ্ভাবন। এ ছাড়া এই বিশ্বায়নের যুগে আরও কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রে; আর তা হলো, বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অনুপাত, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে। আরও দেখতে হবে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং বিদেশি বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা। কিউএস যে সূচকগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে, তা উল্লিখিত সূচকগুলোর অনুরূপ। সুতরাং, উল্লিখিত সূচকগুলোয় উন্নয়ন ছাড়া র্যাঙ্কিংয়ে উন্নয়ন কিন্তু সম্ভব না। এটা এখন ভাবার সময় এসেছে, আমরা কীভাবে এগুলোতে উন্নয়ন সাধন করব।
গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজ উদ্যোগে সমাজের বিত্তবান এবং তাঁদের স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে গবেষণা তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনের প্রতিনিধির (ব্যবসা মালিক সমিতি) মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে পাঠ্যক্রমে কর্মজীবনের প্রয়োজন প্রতিফলিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেকহোল্ডাররা একসঙ্গে পাঠ্যক্রম তৈরি করতে পারে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মজীবনে বেশি সমাদৃত হবে। ব্যাচেলর এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। অন্যথায়, স্নাতকরা অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে শিখবে না। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিদেশি প্রশিক্ষক আর খেলোয়াড়ের কমতি নেই। ঠিক তেমনি এখন দেখা উচিত, কীভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী বেশি বেশি আকর্ষণ করা যায়।
এই বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ; সমস্যা নয়। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। যত দ্রুত সম্ভব গঠিত হোক দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ কমিটি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন হোক আগামীর মেগা প্রজেক্ট। এভাবে শুধু কিউএস নয়; আমাদের লক্ষ্য হবে বিশ্বের যে কোনো সেরা বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ের সম্মুখ সারিতে থাকার।
ড. কাজী ছাইদুল হালিম: শিক্ষক ও গবেষক
মন্তব্য করুন