মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি বরাদ্দে কলাপাড়া ইউএনওর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অতিরিক্ত ৪২ জনের নামে প্রায় ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় মামলাটি করেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসীম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় ইউএনওর স্বাক্ষরিত মূল নথি গোপন করে ৪২টি কবুলিয়ত খেপুপাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সার্ভেয়ার হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার হুমায়ুন কর্মস্থলে অনুপস্থিত।

ইউএনওর কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকার যেখানে প্রত্যেক ভূমিহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর দিচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত ওই ৪২ জনের মধ্যে কারও নামে দুই একর, কারও নামে দেড় একর এবং কারও নামে তিন একর করে জমি সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। যাদের নামে অতিরিক্ত ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমি রেজিস্ট্রি করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি টাকা। যাদের জমি দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের চূড়ান্ত নামের তালিকায় স্বাক্ষর করে ওই তালিকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হুমায়ুনকে নির্দেশ দেন ইউএনও। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সার্ভেয়ারকে ক্ষমতাও দেন তিনি। এ সুযোগে চূড়ান্ত তালিকা পাল্টে নিজের পছন্দের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন সার্ভেয়ার। যাতে তিনি অতিরিক্ত ৪২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। পাল্টে দেওয়া তালিকায় ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে সুকৌশলে বসিয়ে দেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন। পরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাঁদের অনুকূলে খাসজমি রেজিস্ট্রিও করে দেন।

ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গত ২৮ মার্চ ইস্যুকৃত এক নম্বর স্মারকে ২২ ভূমিহীনের স্থলে ৩১ জন, ২৪ এপ্রিল দুই নম্বর স্মারকে ১২০ জনের পরিবর্তে ১৩২ এবং ৯ মে তিন নম্বর স্মারকে ৫৩ জনের স্থলে ৭৪ জন ভূমিহীন দেখিয়ে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। ১৯৫ জনের পরিবর্তে ২৩৭ জনকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া সাব-রেজিস্ট্রার রেহেনা পারভীন সমকালকে বলেন, ভূমিহীনদের চূড়ান্ত তালিকায় ইউএনওর স্বাক্ষর থাকায় তিনি সব পাতা যাচাই করেননি এবং বিষয়টি এমন হবে, তা গভীরভাবে ভাবেনওনি। ওই সময় সার্ভেয়ার ভূমিহীনদের বরাদ্দকৃত জমির নামজারির জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন। বিষয়টিতে তাঁর আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ওই ৪২ জনের কারও নামে কোনো খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার তালিকা দেখে রেজিস্ট্রি করে দেবেন, এটাই ছিল নিয়ম। তিনিও তালিকা যাচাই না করে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম জানান, আসামি হুমায়ুন পলাতক। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।