- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- নির্ভুল হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত তৈরির তাগিদ
নির্ভুল হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত তৈরির তাগিদ
বিবিএসের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক

নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত তৈরি এবং তার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) তাগিদ দিয়েছে ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। অর্থবছরের প্রান্তিকভিত্তিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রতিবেদন প্রকাশ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার বিবিএসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয় ওঠে আসে। এ ছাড়া জিডিপি ও মূল্যস্ম্ফীতি পরিমাপে একই ভিত্তি বছর অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে জিডিপির হিসাব করছে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা বিবিএস। তবে মূল্যস্ম্ফীতির হিসাব এখনও ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তিতেই করা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে প্রতি প্রান্তিক অর্থাৎ তিন মাস পর পর জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশেও এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বিবিএস। এ জন্য মডার্নাইজেশন অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট স্ট্র্যাটিস্টিকস নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় দেড় বছর আগে। আইএমএফ এতে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
শুমারি ও জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার। উন্নয়ন সহযোগীরাও আর্থসামাজিক তথ্য-উপাত্তের জন্য বিবিএসের প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে থাকে। তবে যথাসময়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে পিছিয়ে আছে বিবিএস। প্রতিবেদনের নির্ভুলতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
গতকালের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জিডিপি এবং মূল্যস্ম্ফীতিসহ অন্যান্য প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্যের উৎস আরও সম্প্রসারণের কথা বলেছে আইএমএফ। জলবায়ুর অভিঘাত সম্পর্কিত
তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং এ বিষয়ে কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা নিয়েও কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, আইএমএফের পক্ষ থেকে যথার্থভাবে তথ্য-উপাত্তের দুটি দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশে বিবিএসের দুর্বলতার কথা সিপিডিসহ গবেষণা সংস্থা এবং বিভিন্ন পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে।
সময়মতো তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবিএসের দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের পর আর খানা ও আয় ব্যয় জরিপ নেই। দারিদ্র্যসীমার নিচে এখন কত মানুষের বাস- এ রকম অনেক মৌলিক জাতীয় সূচক জানা যাচ্ছে না। গবেষকসহ অন্য ব্যবহারকারীদের কথা বাদ দিলেও সরকার নিজেও এতে অন্ধকারে রয়েছে। নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত না থাকলে সঠিক নীতিনির্ধারণও সম্ভব নয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোন কার্যক্রম কোন অঞ্চলে কতটুকু প্রয়োজন, তা বোঝা যাচ্ছে না।
বিবিএসের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পভার্টি ম্যাপিং করার পর বিবিএস নিজেই ওই তথ্য আপাতত ব্যবহার না করতে বলছে। বিবিএসে তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অনেক উদাহরণ আছে। এসব দুর্বলতার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ না থাকা, পেশাদারিত্বের অভাব, অর্থ, জনবল ও অবকাঠামোর সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিবিএসকে কাজ করতে হয়। এখন আইএমএফের পরামর্শে বিবিএসের এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে দেশ উপকৃত হবে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, বাজেট সহায়তা ও অবকাঠামো খাতের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি পাঠায় সরকার। এই ঋণের বিষয়ে আলোচনা করতেই আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন ঢাকা সফরে রয়েছে। আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ কর্মকর্তারা। বৈঠকে বাণিজ্য সুবিধা, শুল্ক্কহারের যৌক্তিকতা, মধ্য মেয়াদে পোশাক রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
মন্তব্য করুন