- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- অভিযোগ বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে
অভিযোগ বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে
ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন

প্রতিদিনই নানা অভিযোগ আসছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। অফিসে গিয়ে লিখিতভাবে জানানো ছাড়াও ই-মেইলে ও টেলিফোনে এসব অভিযোগ দিচ্ছেন ভোক্তারা। এর মধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত অভিযোগের হারই বেশি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২৫ হাজার ৩৪৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ২২ হাজার ২২৩টি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অভিযোগ এসেছে ১২ হাজার ৪৬১টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ হাজার ৭১৩টি।
এসব অভিযোগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ই-কমার্স খাত। বেশিরভাগ অভিযোগ নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা, দাম বেশি নেওয়া, প্রতিশ্রুত সেবা না দেওয়া, মানহীন পণ্য বা সেবা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিযোগ দোকানপাট, বিপণি বিতান ও বাজারে পণ্য বিক্রি নিয়ে। এ ছাড়া টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়েও গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে।
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান সমকালকে বলেন, মোট অভিযোগের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশই বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ই-ভ্যালি, আলেশা মার্ট, কিউকম, ধামাকাসহ আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। এর বাইরে ২০ শতাংশের অভিযোগ দোকানপাট, বিপণিবিতান ও বাজারে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির বিষয়ে। পাশাপাশি টেলিকম খাতের সেবা নিয়েও অভিযোগ অনেক। তবে আদালতে মামলা চলমান থাকায় টেলিকম খাতের অভিযোগগুলো আপাতত নিষ্ফ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।
অভিযোগ নেওয়ার পাশাপাশি বাজারে পণ্যের দাম তদারকি করে থাকে ভোক্তা অধিদপ্তর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজারে অভিযানের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে সংস্থাটি। গত অর্থবছরে ২৫ হাজার ৬১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মোবাইলে, ই-মেইলে এবং সরাসরি লিখিত অভিযোগ করতে পারেন ভোক্তারা। প্রতিনিয়ত অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেগুলো নিষ্পত্তিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অভিযোগের তথ্য বিশ্নেষণ করে পর্যায়ক্রমে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। তবে প্রয়োজনীয় প্রমাণ না পাওয়ায় অনেক অভিযোগ বাতিলও করা হয়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স খাতের ব্যবসা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কিছু টাকা ফেরত দিয়েছে। প্রক্রিয়া এখনও চলছে। এ খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আরও নানা অভিযোগ আসছে। কোনো কোনো গ্রাহক ৩ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই হাজার ই-কমার্স সাইট আছে। ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায়িক সাইট রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমালের দাবি, এ খাত সম্পর্কিত অভিযোগ অনেক কমে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) করার পর অভিযোগ অনেক কমেছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে। সতর্ক থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এখন ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। ই-ক্যাবের সদস্য প্রায় ২ হাজারের মতো। তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সেগুলো তাঁরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেন।
সহজে অভিযোগ করার সফটওয়্যার চালু
এদিকে অভিযোগ দায়ের পদ্ধতি আরও সহজ করতে কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস) শীর্ষক সফটওয়্যার এবং ওয়েব পোর্টাল চালু করেছে অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারের অধিদপ্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এর উদ্বোধন করা হয়।
নতুন পদ্ধতিতে যে কেউ সহজে অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগগুলো কোন পর্যায়ে কোন কর্মকর্তার আছে তাও জানা যাবে এর মাধ্যমে। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা বিভাগের জন্য এটি চালু হয়েছে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পোর্টালটির অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে। পাশাপাশি কিউআর কোড ব্যবহার করে অভিযোগ জানানো যাবে।
অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরে ৩ হাজার ৭৪৮টি অভিযোগ অনিষ্পন্ন রয়েছে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে যা নিষ্পত্তি করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আশা করা হচ্ছে, নতুন পদ্ধতিতে দ্রুত এ কাজটি করা যাবে।
মন্তব্য করুন