
ইসলামে সফর বা ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। ভ্রমণ মানুষের জ্ঞানের দুয়ার খুলে দেয়। এর মাধ্যমে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধ গড়ে ওঠে। চেনা জগতের ছোট পরিসর থেকে নিয়ে যায় বিশাল ময়দানে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ১৩ বারের বেশি সফর বা ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সফরের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের নানা বৈচিত্র্য বিষয় অবলোকন করে জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করা যায়। আল্লাহতায়ালা সুরা হজ্জ-এর ৪৬ আয়াতে এরশাদ করেন, 'তবে কি তারা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে না, যাতে তাদের অন্তর অনুধাবন করতে পারত এবং তাদের কান সত্য কথা শুনে নিত।'
নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থেকে বের না হলে সৃষ্টিজগতের অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। পৃথিবীর একেক স্থান একেক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি সেসব স্থানে চিন্তাশীলদের জন্যও রয়েছে চিন্তার খোরাক।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা আনকাবুত-এর ২০ আয়াতে এরশাদ করেন, 'বলে দাও, তোমরা ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করো এবং দেখো, কীভাবে আল্লাহ প্রথমবারে সৃষ্টি করেছেন। আবার তিনি শেষবারেও সৃষ্টি করবেন।' অন্যত্র সুরা আর-রুমের ৪২ আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, 'বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, তোমাদের আগের লোকদের কী পরিণাম হয়েছিল! তাদের বেশিরভাগই ছিল মুশরিক।'
বর্তমানে ব্যবসা, শিক্ষা, বিনোদন, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ সফর করে। এসব সফরও যদি কোরআনের নির্দেশের কথা স্মরণ করে ইবাদতের উদ্দেশ্যে করা হয়, তাহলে পার্থিব কল্যাণের পাশাপাশি আখিরাতের জন্যও সওয়াব অর্জিত হবে।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে সফর করা খুবই জরুরি। সফর মানুষের চিন্তার পরিধিকে বিস্তৃত করে। ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য জানায়, আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে যাওয়ায় কল্যাণ ও পুণ্য নিহিত রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে রয়েছে মহান আল্লাহর কুদরতের নানা নিদর্শন। এসব দেখে মানুষ চিন্তা ও গবেষণা করবে। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের ভ্রমণ করতে বলেছেন, যেন তারা সৃষ্টিজগতে বিদ্যমান আল্লাহর অসীম কুদরত দেখতে পারে।
সড়ক বা ভ্রমণ দুর্ঘটনার বাহ্যিক বিভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু ধর্মীয় পণ্ডিতরা এর কিছু ধর্মীয় কারণও উল্লেখ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- প্রথমত, মৃত্যু সৃষ্ট জীবের অনিবার্য নিয়তি ও পরিণতি। ইসলামী বিশ্বাস মতে, নির্দিষ্ট সময়েই মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু পৃথিবী যেহেতু দারুল আসবাব বা কারণ-উপকরণের প্রকাশস্থল, তাই কারও মৃত্যুর জন্য দুর্ঘটনা বাহ্যিক উপলক্ষ ছাড়া আর কিছুই নয়।
দ্বিতীয়ত, পৃথিবীতে যখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না, অপরাধী মানুষ আল্লাহর ভূখণ্ডে অবাধে বিচরণ করে, তখন তারা যে কোনো সময়েই ভয়াবহ আজাবে নিপতিত হতে পারে। আল্লাহর আজাব এলে অপরাধী-নিরপরাধী সবাই আজাবে পতিত হয়। আল্লাহতায়ালা সুরা আন-নাহলের ৪৫-৪৬ আয়াতে এরশাদ করেন, 'যারা পাপাচার ও অপকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়ে গেছে যে আল্লাহ তাদের ভূগর্ভে ধসিয়ে দেবেন না, কিংবা এমন দিক থেকে শাস্তি আসবে না, যা তাদের ধারণাতীত? কিংবা তিনি তাদের পাকড়াও করবেন, যখন তারা চলাফেরা করতে থাকবে।'
তৃতীয়ত, রাসুলে পাক (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, 'যখন সমাজে জেনা-ব্যভিচার বেড়ে যাবে, তখন তাদের মধ্যে মৃত্যু ব্যাপক হয়ে যাবে... যখন বিচারকার্যে অবিচার করা হবে, তখন তাদের মধ্যে খুন-খারাবি ছড়িয়ে পড়বে।' সফরের সবচেয়ে উপকারী দিক হলো অভিজ্ঞতা অর্জন। হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) বলেন, মুমিন এক গর্তে দু'বার দংশিত হয় না। (বুখারি)
ভ্রমণের অনেক নিয়মকানুন আছে, অবস্থান বুঝে নিয়মকানুন ভিন্ন হয়, সেগুলো মেনে চলা। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা। ভ্রমণে বের হওয়ার আগে রাসুলে পাক (সা.) এ দোয়া করতে বলেছেন, 'আল্লাহর নামে বের হচ্ছি, আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় নেই। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তিও নেই।' (তিরমিজি)
ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
বিষয় : ইসলাম ও সমাজ মো. শাহজাহান কবীর
মন্তব্য করুন