কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক নারীকে হত্যার ১৪ মাস পর এর রহস্য বের করেছে পিবিআই। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর উপজেলার বারপাড়া এলাকার মানিককান্দি ভূঁইয়া বাড়ির কবরস্থান থেকে রুমা বেগম (৩২) নামে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। শুরুতে ওই নারীর পরিচয় না থাকায় এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে তার স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করেন। তিনি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে এবং একই উপজেলার ভিটি চারীপাড়া গ্রামের প্রয়াত মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী।

ওই নারীর সিয়াম হোসেন নামে ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। সোমবার ভোরে ওই নারীর ভাসুর জীবন মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারকে গ্রেপ্তার করার পর রহস্য বের হতে থাকে। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশসহ পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

পিবিআই জানায়, ঘটনার পর থেকেই নিহতের বাবার পরিবারের সন্দেহ- শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাকে খুন করে পরিচয় যেন না মেলে এজন্য অনেক দূরে নিয়ে মরদেহ ফেলে এসেছে। মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন আগে ২১ নভেম্বর সকালে ওই নারীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে। এরপর দিনভর লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে ওই দিন রাতে মানিককান্দি ভূঁইয়া বাড়ির কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসে মরদেহ। সোমবার ভোরে বিধবা নারীর ভাসুর জীবন মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারকে গ্রেপ্তার করার পর রহস্য বের হতে থাকে। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে থাকা জ্যোৎস্না গত রোববার রাতে গোপনে বাড়িতে আসলে সোমবার ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের পুরো বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জ্যোৎস্না। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সকালে ডাল রান্না না করায় ছেলে সিয়াম তাঁর মা রুমা আক্তারের সঙ্গে রাগ করে চিৎকার করে। এতে বিরক্ত হয়ে মা তাঁর ছেলেকে একটি চড় দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাশুড়ি পুত্রবধূ রুমাকে চড় দেন। একপর্যায়ে রুমাও উত্তেজিত হয়ে শাশুড়িকে লাথি মারেন।

ঘটনার সময় ভাসুর সাফায়েত হোসেন, তাঁর মা রূপসী বেগম, পুত্রবধূ জ্যোৎস্না, কহিনুর আক্তার, সুমি আক্তার আর সাফায়েতের ভাগিনা আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাফায়েত রুমাকে মারধর করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। রাতে সাফায়েত ও ভাগিনা আল-আমিন লাশ ফেলে আসেন কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের কুমিল্লার উপ-পরিদর্শক সাফায়েত আহাম্মদ বলেন, প্রায় ১১ বছর আগে রুমার স্বামী মারা গেছেন। সিয়াম হোসেন নামে ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে তাঁর। সন্তানের কথা ভেবে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। ভাসুর সাফায়েতই ছিল মূল হত্যাকারী। সাফায়েত আর তার ভাগিনা আল-আমিন রাতে গিয়ে ওই কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে লাশ ফেলে আসে।

গ্রেপ্তার জ্যোৎনাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সাফায়েত কিছুদিন জেলে থেকে বর্তমানে জামিনে আছেন।