গত ৮ ফেব্রুয়ারি সমকালে অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। 'অপরিকল্পিত নগরায়ণ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে' শিরোনামে সাক্ষাৎকারে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এনেছেন। সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্প সারাবিশ্বের মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে এর ব্যাপকতা। নিমেষেই শেষ হয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। পৃথিবীতে যত রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তার মধ্যে ভূমিকম্প সবচেয়ে অল্প সময়ে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে। যেহেতু ভূমিকম্পের ব্যাপারে আগাম কোনো সতর্ক সংকেত দেওয়া যায় না, তাই সবসময় সতর্ক থাকা জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষের ভূমিকম্প সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞান নেই। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির মাত্রা কমাতে অর্থাৎ ভূমিকম্প চলাকালে, আগে ও পরে কী করতে হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই আমাদের। এটা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ ঝুঁকি বেশি। অন্যান্য এলাকাতে যে ভূমিকম্পের আশঙ্কা নেই, তা নয়। তাই ভূমিকম্পবিষয়ক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা জরুরি। ভূমিকম্পের ফলে দালানকোঠার নিচে পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। তাই সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হলে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে জনসাধারণের করণীয় কী, অর্থাৎ এর আগে, ভূমিকম্পের সময় ও পরে কী করা উচিত; এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। টিভি, সংবাদপত্রসহ সব ধরনের মিডিয়ায় এ নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা প্রয়োজন। এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য সম্ভাব্য ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। প্রথমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া; দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ; তৃতীয়ত, ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ ও পুনর্গঠন কর্মসূচি বিষয়ে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ সব প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মসূচি নিশ্চিত করতে হবে। উদ্ধার কর্মসূচির অভাবে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে। প্রস্তুতি, দক্ষ প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উদ্ধার কর্মকাণ্ডের মূল চাবিকাঠি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। ভূমিকম্প সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। অনেক উন্নত দেশও ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে আমাদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ