- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- শেষ তিন দিনে জমজমাট বেচাকেনার আশা
একুশে বইমেলা
শেষ তিন দিনে জমজমাট বেচাকেনার আশা

অমর একুশে বইমেলা দেখতে দেখতে ২৫ দিন পার করে ফেলেছে। প্রকাশকরা বলছেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী নানা সংকটে জর্জরিত মানুষ অর্থ ব্যয়ে সংযমী হয়েছেন। তাই এ বছর বইয়ের বিক্রি নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু গত ২৫ দিনে বইয়ের বিক্রি তাঁদের শঙ্কা দূর করেছে। ক্রেতা-পাঠকদের সরব উপস্থিতির কারণে এবার বিক্রি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো। ফলে মেলার শেষ তিন দিনে বিক্রি আরও বাড়বে বলেই আশা তাঁদের।
গতকাল শনিবার ছিল মেলার শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ দিন মেলায় আসা অধিকাংশ মানুষের হাতেই ছিল বই। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দুই ছেলে রাজ্য ও শিষকে নিয়ে ঘুরছিলেন ফারহানা ইসলাম। তিনজনের হাতেই বইয়ের ব্যাগ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন লেখকের বই কিনেছেন ফারহানা। শিষের হাতে শিশুতোষ এবং রাজ্যের হাতে কয়েকটি গল্পের বই। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজ্য জানায়, আহসান হাবীব, কাজী নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের বই তার প্রিয়। এ বছর নজরুলের কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা' এবং কিছু ভূত ও রূপকথার গল্পের বই কিনেছে সে।
কথা হয় অধ্যাপক কামালউদ্দীনের সঙ্গে। তিনিও তালিকা ধরে স্টলে ঘুরে ঘুরে বই কিনছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে কলকাতায় ভারতীয় লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কথা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ লেখক বাংলাদেশের পক্ষে অনেক লেখালেখি করেছেন। এ বছর ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তাঁর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে 'অন্নদাশঙ্কর রায়ের মুক্তিযুদ্ধ' নামে বই প্রকাশ করেছেন। জার্নিম্যান বুকসের প্যাভিলিয়নে লেখকের হাত থেকে বইটি সংগ্রহ করেছি। বইমেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো এসে তালিকা ধরে বই কিনছি।
প্রকাশকরা জানান, ২৫ দিনের বই বিক্রি নিয়ে তাঁরা খুশি। ২১ ফেব্রুয়ারির পর মেলায় যাঁরা আসেন, তাঁদের বেশিরভাগই বই কেনেন। ইত্যাদি প্রকাশনীর প্রকাশক জহুরুল আবেদিন জুয়েল বলেন, এ বছরের মেলায় পাঠকের উপস্থিতি ভালো। বই বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির দুই বছর একেবারে মেলা জমেনি। সে তুলনায় এ বছর অনেক পাঠক এসেছেন।
প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, মেলায় এবার প্রথম থেকেই ভিড় বেশি। মানুষ মেলায় এসে ঘুরেছেন, অনেকে ছবি তুলেছেন। কিন্তু তাঁরা বই কিনছেন শেষ সময়ে।
অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক জানান, এ বছর বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি। করোনার পরে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম বেশি। সংসারের অন্য খরচ মিটিয়ে বেশি দামে বই কিনতে চান না কেউ। তারপরও মানুষ মেলায় বই কিনেছেন।
সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, মানুষ সংযমী হয়েছেন। তাঁরা মেলায় এসে দেখে দেখে বই কিনছেন। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে বিক্রি আরও বাড়ত।
অন্যধারা প্রকাশনীর সামনে কথা হয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এ বছর বইমেলা সুন্দর হয়েছে। পাঠক আসছেন; পছন্দের লেখকের বই কিনছেন।
এদিকে শেষ সময়েও মেলায় বই আসছে। গতকাল নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামালউদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইনুল ইসলাম প্রমুখ।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল 'কভিড-১৯: ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য' এবং 'কভিড-১৯ :সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাকিম আরিফ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশ নেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী ও আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকউল্লাহ খান। 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সামসাদ সুলতানা খানম, হাসান রাউফুন, বীথি রহমান ও মামুন সারওয়ার।
মন্তব্য করুন