একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। গ্যাসের সিলিন্ডারের ত্রুটি, পাইপের লিকেজ, স্যুয়ারেজ লাইনে জমে থাকা গ্যাস অথবা শর্টসার্কিট থেকে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ভবন নির্মাণে নীতিমালা না মানা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে বাড়ছে এমন দুর্ঘটনা।

গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে একটি তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুনে তিনজন নিহত হয়েছেন। স্যুয়ারেজ লাইনে জমে থাকা গ্যাস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) বিস্ফোরণ অথবা ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ ছাড়া গুলশানের একটি ভবনে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে মারা গেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ভাটারার একটি বাসায় রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক দম্পতির মৃত্যু হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণজনিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জান ও মালের ক্ষতি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পরিকল্পনা অনুসারে ভবন নির্মিত হচ্ছে না। ভবন নির্মাণে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের স্বাভাবিক চলাচলের দিকে নজর নেই। ফলে ঢাকার অধিকাংশ ভবনে এসির ব্যবহার জরুরি হয়ে উঠছে। আলো-বাতাসহীন আবদ্ধ ভবনগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি।

ভবন নির্মাণ নীতিমালা যুগোপযোগী নয় জানিয়ে তিনি বলেন, নগর সম্প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু ইউটিলিটি সার্ভিসের প্রসার নেই; পরিকল্পনা মেনে হচ্ছে না। ঢাকার গ্যাস লাইনগুলো জরাজীর্ণ। এর সঙ্গে রয়েছে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, যা মাটির নিচের লাইনগুলোকে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। নগর কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকিও নেই। এতে ঝুঁকি রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

জ্বালানির সঠিক ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা সিদ্দিক জুবায়ের বলেন, বর্তমানে এসির দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ– সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। শীতে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন গরম পড়ায় সার্ভিস না করে এসি চালাতে গিয়ে জমে থাকা গ্যাসে বিস্ফোরণ হচ্ছে। তিনি বলেন, পয়সা বাঁচাতে ভবনগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগে মানহীন কেবল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে বৈদ্যুতিক সংযোগের কাজ করানো হয়। এসব কারণে ভবনগুলোতে শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটে।

এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, পাইপলাইনে গ্যাসের সংকটের কারণে সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সিলিন্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবহনে যথাযথ নিয়ম মানা হয় না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার জন্য ব্যবহারকারীদের অসচেতনতাকেও দায়ী করেন তিনি।  

বিশেষজ্ঞরা এসব দুর্ঘটনা রোধে পরিকল্পিত নগরায়ণ, নীতিমালা মেনে ভবন নির্মাণ, মানসম্মত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের কাজ করানোর ওপর জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে ঢাকায় গ্যাস লাইনের লিকেজ বন্ধে তিতাসকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা রোধে বিএসটিআই, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি।