- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- এলডিসি উত্তরণ ঘটলে বিশ্বমোড়লদের খবরদারি কমে যাবে
সাক্ষাৎকার: ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
এলডিসি উত্তরণ ঘটলে বিশ্বমোড়লদের খবরদারি কমে যাবে

বীর মুক্তিযোদ্ধা, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছাড়াও তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শেষ ও ষাটের দশকের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) থেকে। তিনি ২০০৯ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে একুশে পদক লাভ করেন এবং ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।
সমকাল: প্রধানমন্ত্রী কাতার থেকে এসে বললেন, বাংলাদেশ এ বছরই শেষবারের মতো এলডিসি সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। তাহলে ২০২৬ সালেই বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ অনিবার্য? কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: হ্যাঁ, তাই হওয়ার কথা। কারণ, তিন বছর পরপর এলডিসি সম্মেলন হয়। তিনটি দিক তারা দেখে থাকে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা বা ঝুঁকি। এ তিনটিতেই বাংলাদেশের দু’বার উত্তরণ ঘটেছে। এর আগে যারা এলডিসি থেকে বেরিয়েছে, তারা তিনটিতেই এভাবে সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে এই মান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৪-এ হওয়ার কথা ছিল। দুই বছর পেছানো হয়েছে। চাইলে হয়তো আরও পেছানো যেতে পারে। আমি মনে করি, এটা ঠিক নয়।
সমকাল: তারপরও পেছানো হয়েছিল কেন?
খলীকুজ্জমান আহমদ: আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ২০২১ সাল। ওই বছর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে এলডিসি থেকে বের হওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়। সেটি হয়নি, কারণ একটি প্রক্রিয়া আছে। তবে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ চাইলে যে কোনো সময় বেরিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশও চাইলে ২০২১ সালে বের হয়ে আসতে পারত। সমস্যা হলো, এখন আমরা বাণিজ্যে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাই। ঋণ পাই সহজ শর্তে; কারিগরি কিছু সহযোগিতা পাই। বের হয়ে এলে আমরা এগুলো পাব না। কিন্তু দেখুন, এক সময় কোটা পদ্ধতি ছিল। সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তখন অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল– বাংলাদেশের রপ্তানি ধসে যাবে। এর পরও বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। উৎপাদনের খরচ বা মানের দিকটিও আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে।
সমকাল: তাহলে কি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অপ্রয়োজনীয়?
খলীকুজ্জমান আহমদ: সেভাবে বলা ঠিক হবে না। তবে এলডিসি থেকে বের হলে অর্থের হিসাবে সব মিলিয়ে ৬-৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুযোগ-সুবিধা আমাদের কমে যাবে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়ে যাবে।
সমকাল: কীভাবে সুযোগ বাড়বে?
খলীকুজ্জমান আহমদ: এখন আমাদের অবস্থান স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। আমাদের যেসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, সেগুলো এলডিসি ব্লক হিসেবে করতে হয়। অনেকে এ অবস্থায় চুক্তিও করতে চায় না। যেসব সুবিধা আমরা পেতে পারি, তাতে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে এসব ঝামেলা নেই বলে ব্যবসার ব্যাপক সম্প্রসারণ সম্ভব। কিন্তু সেখানে আবার প্রস্তুতি দরকার। সেই প্রস্তুতি আমাদের নেই। আমাদের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এফটিএ নেই বললেই চলে। দু-একটা আছে হয়তো।
সমকাল: কী কী প্রস্তুতি দরকার?
খলীকুজ্জমান আহমদ: একটি প্রস্তুতি হলো, দক্ষতা বৃদ্ধি। ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল এসব কাজ তদারকির জন্য। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, বিষয়টি অগ্রসর হয়নি বললেই চলে। এখন কমিটি আছে কিনা, জানি না। এখনও প্রস্তুতির সেই তোড়জোড় দেখছি না। অথচ আমাদের তো এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। কারণ, এটি মর্যাদার ব্যাপার।
সমকাল: মর্যাদার বিষয় আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
খলীকুজ্জমান আহমদ: এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের অবস্থান মর্যাদপূর্ণ হবে। যেমন আইএমএফ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক শর্ত মানতে হয়। সব শর্তই যে খারাপ, তা নয়। যেমন ব্যাংকে অব্যবস্থাপনা দূর করার কথা ওরা বলছে। আমরাও জানি, এটা দূর করা জরুরি। কিন্তু কিছু ভর্তুকির কথা বলা হয়। এসব শর্ত পূরণের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী কিস্তি পাবে কিনা। শুধু ঋণ নয়; অনুদানের ক্ষেত্রেও অনেক শর্ত মানতে হয়। কিন্তু এসব শর্ত সব সময় মানা সম্ভব হয় না এবং দেশের স্বার্থে মানা উচিতও না। যেমন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে চুরির কথা, ষড়যন্ত্রের কথা বলেছে। অথচ এ ক্ষেত্রে চুরি হয়নি; চুরির ষড়যন্ত্রও হয়নি। এলডিসিভুক্ত দেশে আন্তর্জাতিক মোড়লদের পক্ষ থেকে এ ধরনের খবরদারি বেশি থাকে। এলডিসিভুক্ত হলে রাজনৈতিক চাপ বেশি থাকে। আপনি দেখবেন, আন্তর্জাতিক মোড়লরা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে প্রায়ই হস্তক্ষেপ করতে চায়। অথচ ভারতে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কারণ তারা এলডিসিভুক্ত নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশেও বিশ্বমোড়লদের খবরদারি কমে যাবে।
সমকাল: নাগরিকদের মর্যাদার ক্ষেত্রে এলডিসির প্রভাব আছে কি?
খলীকুজ্জমান আহমদ: বিদেশের বিমানবন্দরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। একবার বিদেশে ভ্রমণ করছিলাম। আমি তখন সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এসআইডির ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমার সঙ্গে ছিলেন একজন মধ্যম সারির কর্মকর্তা। তিনি ইউরোপিয়ান দেখে তাঁর পাসপোর্ট দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হলো। আর আমারটা আটকে রাখা হলো। কারণ আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশি। তখন ওই কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলেন– তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্টকে দেরি করানো হচ্ছে কেন? স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে এলে এসব সংকট একেবারে চলে যাবে, তা বলছি না। তবে এখনকার মতো থাকবে না। যেমন আমাদের এখানে বিদেশিরা রাজনীতি নিয়ে যেভাবে হইচই করে; ভারতে সেটা পারে না। এমনকি পাকিস্তানেও পারে না।
সমকাল: আপনি বলছেন, এলডিসিভুক্ত থাকা একটা কারণ।
খলীকুজ্জমান আহমদ: হ্যাঁ, এলডিসি একটা কারণ। পাকিস্তানের অবস্থা এখন দুর্দশাগ্রস্ত। তবু তারা এলডিসিতে নেই। কিন্তু এলডিসিভুক্ত হলেও আমাদের অবস্থা ভালো। ওরা আইএমএফের কাছ থেকে অর্থ চেয়ে পাচ্ছে না। আর আমাদের আইএমএফ আগ্রহ করে অর্থ দিয়েছে। বর্তমানে এলডিসিতে থাকলেও মধ্যম আয়ের অনেক দেশ থেকে আমাদের অবস্থান ভালো। সে জন্যই আমাদের উত্তরণটা জরুরি। এলডিসিতে না থাকলে আমাদের সম্মান আরও বেড়ে যেত। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি তারা দিচ্ছে, সেটা হতো না।
সমকাল: সরকারের তরফ থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি কেমন দেখছেন?
খলীকুজ্জমান আহমদ: প্রস্তুতির কথা পাবলিকলি বলা হচ্ছে না। প্রস্তুতি নিশ্চয় নেওয়া হচ্ছে। ২০২৬ সাল থেকে যদি উত্তরণ হয়, তার প্রস্তুতি তো এখন থেকেই নিতে হবে।
সমকাল: জাতিসংঘ মহাসচিব কাতারে বক্তৃতায় বলেছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন রিওয়ার্ডিং হওয়া উচিত; পানিশমেন্ট নয়। প্রস্তুতি পর্ব বা উত্তরণের পর জাতিসংঘের দিক থেকে আমরা কি বিশেষ সুবিধা পেতে পারি?
খলীকুজ্জমান আহমদ: আমি বলি, এখানে চিন্তা পদ্ধতির একটু সমস্যা আছে। আমরা তো এগিয়ে যাচ্ছি; জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের এগিয়ে দিচ্ছেন না বা অন্য কোনো দেশ এগিয়ে দিতে আসছে না। এ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে আমাদের সরকার, আমাদের শ্রমিক, আমাদের মানুষ। হ্যাঁ, ঋণ নিচ্ছি। আরও অনেকেই ঋণ নেয়; আমেরিকা, জাপানও নেয়। এলডিসির ক্ষেত্রে জাতিসংঘ যেটা করছে, সেটা কেরানিগিরির কাজ। ওরা হিসাব করে দেখছে, বাংলাদেশ এগিয়েছে। জাতিসংঘ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের কিছু দেবে না। আমাদের যোগ্যতায়ই আমরা এগিয়েছি। অনেকে হয়তো না জানার কারণে গর্ব করে বলে– আমরা সনদ পেয়ে গেছি। আমাদের সনদ পাওয়ার দরকার কী? আমাদের কৃষি শ্রমিকের শ্রম, শিল্প শ্রমিকের শ্রম, সাধারণ মানুষ, উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারকদের শ্রমেই আমরা এগিয়েছি।
সমকাল: মর্যাদা রক্ষায় এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। অনেক সময় মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমন দেখা যায়; মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বাজার করার টাকা নেই।
খলীকুজ্জমান আহমদ: না, আমাদের অবস্থানে থেকে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমাদের সমস্যা হলো বাস্তবায়ন। আমাদের সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে বা করবে, তা বাস্তবায়ন হলে সংকট থাকবে না। আমাদের আরেকটি বড় অসুবিধা হচ্ছে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও। এটি খুব কম– ৭.৭। ফলে সরকারের অর্থনৈতিক সামর্থ্য কম। সরকারকে বড় কোনো প্রকল্প করতে হলে ঋণ নিতে হয় দেশ বা বিদেশ থেকে। এটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমেরিকা বা জাপানের মতো দেশও অনেক ঋণ নেয়।
সমকাল: এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য বিভিন্ন খাতে সংস্কারও তো প্রয়োজন হবে।
খলীকুজ্জমান আহমদ: সংস্কারের কোনো শর্ত নেই। তিনটা যে শর্ত রয়েছে, তা তো বাংলাদেশ পূরণ করেছেই।
সমকাল: ব্যাংক খাতে সংস্কার জরুরি নয়? খেলাপি ঋণ বাড়ছে; পাচার বাড়ছে।
খলীকুজ্জমান আহমদ: ঠিকই বলেছেন, ব্যাংক খাতে সংকট রয়েছে। দেশি ঋণ বৃদ্ধিও একটি সংকট। দেশি ঋণ বাড়লে বাজেটের একটা বড় অংশ তা শোধ করতেই চলে যায়। আমাদের ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ এত বেশি হলে ব্যাংক খাত ঝুঁকিতে পড়ে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে, এসব সংস্কারের সঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সংস্কার করতে হবে আমাদের প্রয়োজনে; এলডিসি থেকে আমাদের উত্তরণ হোক বা না হোক। তারপর দুর্নীতি, অর্থ পাচার– এগুলো বন্ধ করতে পারলে; যে অর্থনেতিক সংকটের কথা আমরা শুনি, সেগুলো থাকবে না। উন্নয়ন সুষম ও ত্বরান্বিত করতে হলে এসব সংস্কার করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, আমদের সামনে কয়কটি লক্ষ্য রয়েছে।
সমকাল: কী কী লক্ষ্য?
খলীকুজ্জমান আহমদ: একটা হলো, ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি আমরা। ২০৩০ সালে এসডিজি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন। সেখানে অগ্রাধিকারগুলোর লক্ষ্য আমরা বাস্তবায়ন করব। আর ২০৪১ সালে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হওয়া। এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে আমাদের অগ্রগতি সুসংহত করতে হবে। সুসংহত করতে হলে দুর্নীতি নির্মূলে শূন্য সহিষ্ণুতা, পাচার রোধ, সুশাসনের ঘাটতি দূর করতে হবে। তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে হবে। গ্রাম-শহরের বৈষম্য দূর, নারীর উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
সমকাল: এসডিজির কথা বললেন। সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কি সঠিক পথে আছে?
খলীকুজ্জমান আহমদ: আমাদের পরিকল্পনা ঠিক আছে। আমাদের যে হিসাব করা হয়েছে, সেই অর্থের সংস্থানে সংকট আছে। আমাদের অনেক টাকা লাগবে। প্রতি বছর ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাগবে। মোট ৯২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থ আমরা জোগাড় করতে পারছি না। এসডিজি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি রয়েছে। তারাই অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছে এবং মন্ত্রণালয় অনুসারে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় ঘাটতি থাকলেও সার্বিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যেমন দারিদ্র্য বিমোচনে এগিয়ে যাচ্ছি। ক্ষুধা মোকাবিলায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ হলেও আমরা খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। অবশ্য বৈষম্যও বাড়ছে।
সমকাল: আর বেড়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতি না কমাতে পারলে তো সকলই গরল ভেল!
খলীকুজ্জমান আহমদ: এটা বলা যায়। কারণ, আমাদের যে সম্পদ আছে, সেটি আমরা ভালোভাবে ব্যবহার করলে আরও অনেক দূর যেতে পারতাম। সেটা পারছি না। কারণ, এক দল কাজে গাফিলতি করে, আরেক দল চুরি ও পাচার করে। এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং এদের হাত অনেক লম্বা।
সমকাল: এ পরিস্থিতিতে করণীয়?
খলীকুজ্জমান আহমদ: জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে– এদের বিচার করা যাবে না; এরা অনেক শক্তিশালী। আমি যেটা সব সময়ই বলে আসছি, কিছু মানুষ যাদের শক্তিশালী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তাদের বিচার হলে এবং আইনানুগ শাস্তি হলে অন্যরা সতর্ক হবে। যে কোনো কারণেই হোক, সেটা ঘটছে না। সেটা ঘটলে সব মানুষের জন্য একটা সুস্থ সমাজ ও সুস্থ অর্থনীতি নিশ্চিত হতে পারে। এটা এলডিসি থাকুক না থাকুক, আইএমএফ বলুক না বলুক, আমাদের করতে হবে।
সমকাল: বৈষম্য দূর করব কীভাবে?
খলীকুজ্জমান আহমদ: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবেই। কিন্তু সামাজিক ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সুশাসন দিয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে আগেই যেগুলো বললাম– দুর্নীতি, গাফিলতি, চুরি রোধ করতে হবে। আরেকটা বিষয় এর সঙ্গে জড়িত– মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভোগবাদ। এগুলো থেকে দূরে রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে সততা, নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
সমকাল: এলডিসি থেকে উত্তরণে আঞ্চলিকভাবে কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে?
খলীকুজ্জমান আহমদ: আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। আমাদের এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য বেশি হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে। আমাদের নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের ৫-৬ শতাংশের মধ্যে পড়ে আছে। এটা বাড়ছে না। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন পোশাক। এটা তো ভারত নেবে না। বাংলাদেশের মতো তারাও এগুলো রপ্তানি করে। অন্য বস্তু হলে সম্ভব হতো। যেমন ভারতের অন্য পণ্য আছে, তারা রপ্তানি করছে। আমাদের মাছ, ওষুধ যাচ্ছে। তারপরও ৮০-৮২ শতাংশ হলো তৈরি পোশাক ও হোসিয়ারি। সুতরাং এদিকে নজর দেওয়া দরকার।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
খলীকুজ্জামান আহমদ : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন