রমজান উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারি উদ্যোগে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ২০টি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এ কার্যক্রম চালানো এসব গাড়ি থেকে দুধ, ডিম ও মাংস কিনলে একজন ক্রেতার ১১০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হয়। বিক্রি কার্যক্রমের প্রথম দিন বেশ সাড়াও মেলে। বিপুলসংখ্যক ক্রেতা সারিবদ্ধ হয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে গরু ও খাসির মাংসের পাশাপাশি মুরগি, দুধ ও ডিম কেনেন। কিন্তু প্রথম দিনই পুলিশি বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন খামারিরা।

২৬ মার্চ সমকালে ‘পুলিশি বাধায় ব্যাহত সুলভ মূল্যে বিক্রি কার্যক্রম’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ ভাষ্য অনুযায়ী, ২৩ মার্চ নয়াবাজারে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি শেষে সন্ধ্যার দিকে একটি গাড়ি খামারবাড়ি গেলে পুলিশ আটকে দেয়। বিআরটিএর অনুমতি না নিয়ে রেন্ট-এ-কারের গাড়ি দিয়ে পণ্য বিক্রি করার অভিযোগে ট্রাফিক সার্জেন্ট মিজানুর রহমান ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

সুলভ মূল্যে এসব পণ্য বিক্রির উদ্যোক্তা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিক্রি কার্যক্রম সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করেছেন বলে সংবাদে উল্লেখ রয়েছে। এ অবস্থায় এসব গাড়িকে মামলা দিয়ে হয়রানি করার হেতু কী হতে পারে?

মামলাকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট মিজানের বিরুদ্ধে গাড়িচালকের কাছ থেকে প্রথমে টাকা, পরে ১০ কেজি গরুর মাংস দাবি করার যে অভিযোগ চালক সাগর করেছেন, তার নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদন্ত করে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে এ পুলিশ সদস্যকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যেন তাঁকে দেখে অন্য সার্জেন্টরা সতর্ক হন। ব্যক্তির অপকর্মে কোনোভাবেই বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া যায় না।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ কর্তা হিসেবে তিনি নিশ্চয় এমন ব্যবস্থা নেবেন, যাতে তাঁর অধীনস্থ কেউ এহেন অপরাধে যুক্ত হতে অন্তত কয়েকবার ভাবেন। ট্রাফিক বিভাগের পাশাপাশি অপরাধ বিভাগের সদস্যদের বিরুদ্ধেও সুলভ মূল্যের গাড়িকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সামনে সুলভ মূল্যের একটি গাড়ি গেলে তা সরিয়ে দেন একজন এসআই। পরে গাড়িটি আবার ওই স্থানে এলে পুলিশের এ সদস্য অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে থাকেন বলে অভিযোগ এসেছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এসআই মামুনের বিরুদ্ধেও তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

ডিএমপির দায়িত্ব ঢাকা মহানগরীর প্রায় দুই কোটি বাসিন্দার নিরাপত্তা বিধান করা। সরকারের একটি দপ্তর যখন সাধারণ ক্রেতার স্বার্থে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাকে সহায়তা করাও ডিএমপির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যদি পণ্য বিক্রির বিষয়টি ডিএমপিকে অবহিত না-ও করে থাকে, তাহলেও এসব গাড়ি থেকে চাঁদা চাওয়ার সুযোগ তো দূরস্থান, এদেরকে আইনি মারপ্যাঁচ দেখিয়ে হয়রানি করার অধিকার কোনো পুলিশ সদস্যের নেই। নিয়মিত বাজারের পণ্য বিক্রেতারা যখন সরকারের অনুরোধ-উপরোধ গায়ে না মেখে এমনকি ধর্মীয় মূল্যবোধও জলাঞ্জলি দিয়ে রোজার উছিলায় মানুষের পকেট কাটছে, তখন ভ্রাম্যমান এ বিক্রেতারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করছেন। তাঁদের হয়রানি করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা বড়মাপের নৈতিক অপরাধ করেছেন। আইনগতভাবেও তাঁরা তা করতে পারেন না, যেহেতু জনকল্যাণকর এসব উদ্যোগের পেছনে আছে সরকার। জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কতিপয় ব্যবসায়ীর স্বার্থ দেখভালের দায়িত্ব পুলিশকে কে দিয়েছে?

আমরা মনে করি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচিত এ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা। শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। কারণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এ কার্যক্রম ছড়ালে তার প্রভাব সাধারণ ভোক্তা-বাজারেও পড়তে বাধ্য।

মিজান শাজাহান: সহ-সম্পাদক, সমকাল
mizanshajahan@gmail.com