- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- বঙ্গবন্ধু সমুজ্জ্বল: সমতল থেকে সমুদ্রে
স্বাধীনতার মাস
বঙ্গবন্ধু সমুজ্জ্বল: সমতল থেকে সমুদ্রে

একজন মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করলেই শ্রেষ্ঠ হয়ে যান না। তাঁর কাজই তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়। জনতা তাঁকেই শ্রদ্ধা ও স্মরণে রাখে, যিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জীবনে গভীর রেখাপাত করেছেন। এর পরিণামেই তিনি ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী আসন পান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমনই একজন নেতা।
বাঙালি জাতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাঁকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। তাঁর কাজ, সাহস, ত্যাগ, মহত্ত্বই তাঁকে এ অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিরাষ্ট্রের যেমন স্রষ্টা, তেমনি একজন আজন্ম ও আকণ্ঠ বিপ্লবপিপাসু। ১৯৩৮ সালে কিশোর মুজিবের ১০ দিনের কারাবাসের আগেই শুরু হয় তাঁর এ লড়াকু জীবন; যার অবসান ঘটে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট–যখন খুনিচক্র শুধু তাঁকে নয়; পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে বর্বরভাবে হত্যা করে। ঘটনাচক্রে সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই সন্তান–আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। তাই খুনিদের বুলেট তাদের স্পর্শ করতে পারেনি।
এ কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই– বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে দুনিয়ায় নিজেদের পরিচিত করেছি। শুধু তাই নয়; ইতিহাস থেকে তাঁর নাম-নিশানা মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টাও হয়েছে ২১ বছর। বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি ম্লান করতে তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাষ্ট্রক্ষমতায় অবৈধভাবে আসীন হয়েছিল, তারা কালো চশমা পরা এক খর্বকায় উর্দিওয়ালাকে বঙ্গবন্ধুর সমান উচ্চতায় নিতে রীতিমতো মহাযজ্ঞ ও নাম জপ শুরু করেছিল।
১৯৭৫-এর পর আমরা হঠাৎ দেখলাম পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধুর অপসারণ। সেখানে জিয়াউর রহমানের জমকালো উপস্থিতি। ইতিহাস এমন করে প্রোথিত করা হচ্ছিল, যেখানে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন নেই; জেল-জুলুম নেই, বৈষম্য নেই। এসবের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন নেই; যেন হঠাৎ একটি সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, যা জিয়াউর রহমানের ঘোষণা ছাড়া সম্ভব ছিল না। যেন ভূমিকম্প বা সুনামির মতো মুক্তিযুদ্ধের হঠাৎ আগমন।
মুক্তিযুদ্ধ বদ্ধ ঘর থেকে দেওয়া এক-দুই মিনিটের রেডিও ভাষণ বা বাঁশি ফুঁ দিয়ে শুরু করার বিষয় নয়। এটি পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। যে লড়াই ছিল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক।
১৯৭৫-এর পর নতুন প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল না। অফিস-আদালত থেকে বঙ্গবন্ধু অপসারিত হন খুনিচক্র ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গের তৎপরতায়। ১৫ আগস্ট, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি সেসব দিবস পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হয়রানি, জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ নিষিদ্ধ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ টেলিভিশনে ফিরে আসেন ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের দিন কয়েক আগে। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও প্রচার হচ্ছিল, যা দেখে তখন স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী তার শিক্ষক ও পিতা-মাতাকে জিজ্ঞেস করেছিল– বইয়ের মধ্যে তো জিয়াউর রহমানের কথা বলা। তাহলে বঙ্গবন্ধু কখন এ ভাষণ দিলেন?
নতুন প্রজন্মের এ বিভ্রান্তি কাটতে সময় লেগেছে; তবে তারা ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছে। তারাই গ্রামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের হাত ধরেই আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বঙ্গবন্ধুর হাজারো ভাস্কর্য। শুধু তাই নয়; নানা প্রতিষ্ঠানের নামকরণও হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামে। এক পর্যায়ে অবশ্য পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, তা সামলাতে বঙ্গবন্ধুর নামে ভাস্কর্য বা তাঁর নামে প্রতিষ্ঠান করার আগে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরোধিতার কথা আমরা জানি। ধর্মের নামে জিকির তুলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার কথা আমাদের অজানা নয়। ভাস্কর্য নির্মাণে যেমন মানুষের ভালোবাসা, আবেগ থাকে; তেমনি এ ভাস্কর্য জাতি ও জনপদের ইতিহাসের সাক্ষ্যও বহন করে। তবে আমাদের দেশের কুলাঙ্গাররা যখন বঙ্গবন্ধুকে ম্লান ও জাতির স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করতে মহাব্যস্ত, তখন বিদেশ-বিভুঁইয়ে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে দেখে মনটা ভরে গেছে। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর সেরা ভাষণগুলোর অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেটিকে বিশ্বঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছ, যা কারও অজানা নয়।
বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক, অ্যাভিনিউ করা হয়েছে। নিউইয়র্কের পার্কে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারা এবং ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ায়; যেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ বহু বরেণ্য ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আমার আগ্রহ ছিল সেটি দেখা ও জানার। সে সুযোগ হয়েছে আমার পুত্র শাশ্বত গৌরব সিদ্ধার্থের সুবাদে। গত ডিসেম্বরে সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গিয়েছিলাম। সিডনিতে যাওয়ার আগে সহপাঠী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. দাউদ হাসানকে বলে রেখেছিলাম, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে যাব। ২৪ ডিসেম্বর তিনি আমাদের ম্যাকুইরি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ম্যাকুইরি পার্ক থেকে নিয়ে যান।
সিডনি শহর সমুদ্রের নীল জলরাশির আছড়ে পড়া ঢেউয়ের দোলায় স্নিগ্ধ সমীরণ নিয়ে বেঁচে আছে। অধ্যাপক দাউদ হাসান অনেক কিছুই দেখাতে নিয়ে যান ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে। ঝকঝকে পরিষ্কার ক্যাম্পাস। প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা করেই সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নানা অবকাঠামো।
তিনি এক পর্যায়ে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল চত্বরে, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করেছে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে।
এটি স্থাপন করতে অধ্যাপক দাউদ হাসানসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আবার এক দল এর বিপুল বিরোধিতাও করে। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বাংলাদেশবিরোধী এক দল কুলাঙ্গার, যারা এখনও বাংলাদেশকে মানে না, তারা এর প্রবল বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য ছিল– পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাস্কর্য ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটিতে নেই। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার জাতিরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদারের ভাস্কর্যও নেই। সেখানে কোন যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মিত হবে? আসলে যুক্তি যা-ই দিক, তাদের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার চিন্তা থেকে আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণ করতে না দেওয়া। তবে তারা সফল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধাদানকারীদের বাধা বা আপত্তি আমলে নেয়নি। তারা ক্যাম্পাসে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রনায়কের ভাস্কর্য আছে বা নেই– এটি বিবেচনায় না নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে যত না জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিবেচনায় নিয়েছে তিনি প্রথম কোনো রাষ্ট্রনায়ক, যিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম মেরিটাইম ল প্রণয়ন করেছেন। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে সমুদ্র আইন যেমন পূর্ণতা পেয়েছে, তেমনি সমুদ্র নিরাপদ হয়েছে। তাঁকেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মেরিটাইম ল-এর পাইওনিয়র বলা হয়। সমুদ্র আইনে তাঁর অবদানকে স্মরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন। বিরোধীদের বিরোধিতা ধোপে টেকেনি।
এই আবক্ষ ভাস্কর্য নিয়ে আপনার, আমার মধ্যে নিম্নমার্গের বচসা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের দেশাত্মবোধে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকেছি। কিন্তু বিশ্ববিবেক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের ইতরামিকে পাত্তা দেয়নি। তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দেখিয়েছেন। যাঁর কারণে বঙ্গবন্ধু বিদেশ- বিভুঁইয়ে আপন মহিমায় প্রতিষ্ঠিত। শুধু তিনিই সম্মানিত হননি, একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিসত্তাকেও সম্মানিত করেছেন।
২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি। অনুষ্ঠানে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর বার্নি গ্লোভার, অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত কাজি ইমতিয়াজ হোসেন, স্কুল অব ল’র শিক্ষক প্রফেসর ড. দাউদ হাসান ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।
নেপথ্যচারী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন ড. দাউদ হাসান, তাঁর কর্মসঙ্গী তদানীন্তন পিএইচডি স্টুডেন্ট ড. এমদাদুল হক এবং রিসার্চ ফেলো ড. নাহিদ হাসান। ছিলেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কাইউম পারভেজ। আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এটি তদারক করেন। এ জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে অভিনন্দিত করেছিল।
আমার জানামতে, বাংলাদেশের বাইরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বঙ্গবন্ধুর এটিই প্রথম কোনো আবক্ষ ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা, যার কারণ জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা অপেক্ষা একজন প্রাজ্ঞ আইনপ্রণেতা। যিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম মেরিটাইম ল প্রণয়ন করে সমুদ্র সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি উন্মুক্ত সমুদ্রে মানুষ ও রাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নাগরিকরাই নন, বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকরাও বঙ্গবন্ধুর এই আবক্ষ ভাস্কর্য দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান। তাঁকে জানতে চেষ্টা করেন। শ্রদ্ধা জানান। আমার মতো ব্রাত্যজনের সৌভাগ্য হয়েছিল সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর। বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন রাষ্ট্রের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন আমার মতো হয়তো অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে।
আমাদের দেশে মৌলবাদীদের থাবা যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে, তখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু মূল্যায়িত হচ্ছেন গভীর শ্রদ্ধায়।
বিদেশ-বিভুঁইয়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে গৌরব বোধ করেছি। আর এটুকু বুঝেছি কুলাঙ্গারেরা মৃত বঙ্গবন্ধুর পাথুরে ভাস্কর্যে যতই আঘাত করুক, বঙ্গবন্ধু আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল সমতট থেকে সমুদ্রে, দেশ থেকে দেশান্তরে।
সদাশয় বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালু করার। সেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু যে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য দর্শন করেন তা নয়, তাঁরা মেরিটাইম ল পড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রণীত সমুদ্র আইনেরও সাক্ষাৎ পান।
অস্ট্রেলিয়া এমন একটি রাষ্ট্র, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম পর্যায়েই আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। কূটনীতিক ও পুনর্বাসন সহযোগিতায় আমাদের দায়বদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসী ওডারল্যান্ড আমাদের দেশের জন্য যুদ্ধ করে বীরপ্রতীক উপাধি পেয়েছিলেন। সেই দেশের ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, যেখানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য রয়েছে, সেখানে বঙ্গবন্ধু চেয়ার হওয়া সময়ের দাবি। সেখানে বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালুর জন্য অস্ট্রেলিয়াস্থ সদ্য সাবেক বাংলাদেশ হাইকমিশনার সূফিউর রহমান (বর্তমানে জাতিসংঘ ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত) বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছেন। সুপারিশটি দ্রুত কার্যকর হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
এসএম আব্রাহাম লিংকন: একুশে পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী, লেখক ও সাবেক রাকসু নেতা
মন্তব্য করুন