- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ আমরা ইতিবাচকরূপেই দেখিতে চাই। দুঃখজনক, সরকার অনেক দিন ধরিয়া উক্ত ব্যাপারে আগ্রহ দেখাইলেও চিকিৎসকদের একাংশের পক্ষ হইতে আশানুরূপ সহযোগিতা পাইতেছে না। ইহার মধ্যেই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে দেশের উল্লেখযোগ্য জেলা ও উপজেলায় ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করিয়াছেন। আমরা মনে করি, ইহার মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মানুষের অধিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ উন্মুক্ত হইয়াছে। সরকারি হাসপাতালগুলিতে দিবসের প্রথমভাগে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসক দেখাইবার সুযোগ রহিয়াছে বটে, কিন্তু সেবাপ্রার্থীর চাপে অনেক সময় চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত সময় লইয়া রোগী দেখিবার অবকাশ পান না। এতদ্ব্যতীত রোগী চাহিলেও এই সময়ে কাঙ্ক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করিতে পারেন না। যে কারণে তাঁহারা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য হন। পরামর্শ ফি হিসাবেও অনেক টাকা গুনিতে হয়। অথচ সরকারি ব্যবস্থাপনায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী একই সেবা পাইবেন উহার অর্ধেকেরও কম অর্থ ব্যয়ে। তজ্জন্যই আমরা প্রত্যাশা করি, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করিবেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে যেসব আপত্তি উঠিয়াছে তাহা জটিলতর কিছু নহে। চিকিৎসকদের মূল আপত্তি, সরকার পরিকল্পিতভাবে এই সেবা চালু করিতেছে না। অর্থাৎ অবকাঠামো কিংবা জনবলের সংকট যেমন বিদ্যমান; টাকার অংকও পূর্ব হইতে নির্ধারণ করা হয় নাই। আমরা দেখিয়াছি, বৃহস্পতিবার সেবাটি উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকের পরামর্শ ফির বিষয় খোলাসা করিয়াছেন। আর হাসপাতালগুলির বিদ্যমান কাঠামোতেই বৈকালিক সেবা দেওয়া অসম্ভব হইবার কথা নহে। এতদ্ব্যতীত সেবাদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহযোগীরও পৃথক ফি নির্ধারণ করা হইয়াছে। অনেকে বলিয়াছেন, সরকারি হাসপাতালে অর্থের বিনিময়ে রোগীর সেবা সমাজ ভালোভাবে গ্রহণ করিবে না। এই ধারণা অযৌক্তিক। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে একই সেবা পাইতে রোগীর যদি দ্বিগুণেরও অধিক অর্থ ব্যয় হয়; সরকারি বৈকালিক সেবা গ্রহণে তিনি কেন কুণ্ঠিত হইবেন? চিকিৎসকের পরামর্শ ফি, তৎসহিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও রোগীর এস্থলে অনেক সাশ্রয় হইবে। ইহা সত্য, এখনও উল্লিখিত বিষয়ে কোনো নীতিমালা প্রণীত হয় নাই। যেহেতু বৃহস্পতিবার হইতে পাইলট আকারে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হইয়াছে; সমগ্র দেশে এই সেবা চালু করিবার আগেই সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করিতে পারে।
বৈকালিক সেবার ক্ষেত্রে উদাহরণ হইতে পারে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ হাসপাতাল। এক যুগ ধরিয়া তথায় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এই পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসেবা দিতেছেন। এতদ্ব্যতীত নওগাঁর চারটি উপজেলায়ও সরকারিভাবে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু হইয়াছিল। পরে অবশ্য সকল পক্ষের অসহযোগিতায় উহা বন্ধ হইয়া যায়। কিন্তু বিএসএমএমইউ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে এবং দীর্ঘ কালব্যাপী সফলভাবে মানুষের সেবা দিয়া আসিতেছে, উহাই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রেরণা হইয়া থাকিবে। আমরা বিশ্বাস করি, বৃহস্পতিবার চালু হওয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বার কার্যক্রমও সফলতা অর্জন করিবে। বস্তুত এই কার্যক্রমের সফলতার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার পথ সহজ ও সাশ্রয়ী হইবে। জনসেবামূলক এই ব্যবস্থা কার্যকর করিতে হইলে চিকিৎসক হইতে শুরু করিয়া সরকারি হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ও সহযোগিতামূলক মনোভাব সর্বাগ্রে জরুরি। তৎসঙ্গে নূতন এই সেবাটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। অস্বীকার করা যাইবে না, দেশের জনসংখ্যানুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিতান্তই অপ্রতুল। তজ্জন্যই মানুষকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অত্যধিক অর্থ ব্যয় করিয়া স্বাস্থ্যসেবা পাইতে হয়। অনেক সময় অর্থ ব্যয়েও ভালো চিকিৎসা দুর্লভ হইয়া যায়। আমাদের প্রত্যাশা, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার পরিধিতে আরও অধিক সংখ্যক মানুষকে যুক্তকরণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখিবে।
মন্তব্য করুন