চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড় জয় পেলেও তাদের ভোট কমে গেছে। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপির সঙ্গে লড়ে যে সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন, এবারের প্রার্থী তার চেয়ে ২০ হাজার ৪১ ভোট কম পেয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার এক মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো এ আসনে উপনির্বাচন হয়। এতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট। এ হিসাবে নোমান বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তবে আগেরবার বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদ পেয়েছিলেন ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। অবশ্য এবার ভোটও পড়েছে কম। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭৫ হাজার ৩০৫ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের হার ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত উপনির্বাচনে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

যদিও আওয়ামী লীগের ভোট কমে যাওয়ার বিষয়ে নোমান আল মাহমুদ মাথা ঘামাতে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, জয়লাভ করায় পূর্বসূরি মইন উদ্দীন খান বাদল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদের ধারাবাহিকতায় কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণই তাঁর প্রধান ও প্রথম কাজ। এ জন্য সংসদ এবং সংসদের বাইরে কাজ করবেন তিনি।

নগরী ও জেলার দুটি অংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে অতীতে শহরের অংশে ভোট বেশি পড়লেও গ্রামাঞ্চলে এবার পড়েছে বেশি। গ্রামাঞ্চলে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশের বিপরীতে শহরে পড়েছে ৯ শতাংশের কিছু বেশি। নগরীর ১২২টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৯ হাজার ৮৪৩টি। আর জেলার বোয়ালখালী উপজেলার ৭৮ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৪৫ হাজার ৪৬২টি।

নির্বাচনে নোমানের পক্ষে বোয়ালখালীতে প্রচারণা চালানো বাংলাদেশ অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের মহাসচিব মুহাম্মদ এয়াকুব সমকালকে বলেন, ‘বোয়ালখালীতে ইসলামী ফ্রন্টের বিপুল সমর্থক রয়েছে। উপজেলার প্রতি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিশেষ মনোযোগ। সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা এখানে বেশি সময় দেন। এ জন্য শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি ভোট পড়েছে।’

জামানত হারালেন চার প্রার্থী

নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রার্থীর চারজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, মোট বৈধ ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট বৈধ ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ৯ হাজার ৪১৩টি। কিন্তু ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন ৫ হাজার ৮৭, ইসলামিক ফ্রন্টের এস এম ফরিদ উদ্দীন ১ হাজার ৮৬০, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কামাল পাশা ৬৭৩ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী পেয়েছেন ৪৮০ ভোট।

ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন বলেন, ‘১৯০ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৭০টি থেকে আমাদের এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটের ফল অন্য রকম হতো।’

এদিকে, নোমান আল মাহমুদকে বিজয়ী করায় ভোটার এবং নেতাকর্মীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে নৌকা ও সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে।