- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- উপনির্বাচন লাগবে ঢাকা-১৭ আসনে
চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যু
উপনির্বাচন লাগবে ঢাকা-১৭ আসনে

আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি পূর্ণ হবে বর্তমান সংসদের মেয়াদ। সংসদের মেয়াদ আট মাসের বেশি বাকি থাকায় উপনির্বাচন লাগবে ঢাকা-১৭ আসনে। সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
সংবিধানের ১২৩ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ৯০ দিনেও উপনির্বাচন সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতেই হবে। গত সোমবার মারা গেছেন চিত্রনায়ক ফারুক। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর আসন শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে সংসদ সচিবালয়। এর পর শুরু হবে উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া।
দশম সংসদে কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এমপি এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ২০১৮ সালের ১১ মে মারা যান। ওই বছরের ১০ জুন উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণ করা হয় ২৫ জুলাই। ছয় মাসের জন্য এমপি হন জাতীয় পার্টির ডা. আক্কাস আলী।
আরও কম সময়ের জন্য উপনির্বাচন আয়োজনের নজির আছে। ২০১৩ সালের ২৬ জুলাই মারা যান নবম সংসদের বরগুনা-২ আসনের এমপি গোলাম সবুর। ওই বছরের ৩ অক্টোবর উপনির্বাচন হয় আসনটিতে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি নবম সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হয়। চার মাসেরও কম সময়ের জন্য এমপি হন আওয়ামী লীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর দশম সংসদের তপশিল ঘোষিত হওয়ায় আদতে তিনি দেড় মাসের জন্য এমপি হয়েছিলেন।
নির্বাচনবিষয়ক বইয়ের লেখক অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার সমকালকে বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সংসদের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি অবশিষ্ট না থাকলে উপনির্বাচন না করার রেওয়াজ আছে।
অষ্টম সংসদে দিনাজপুর-৩ আসনের এমপি খুরশীদ জাহান হক ২০০৬ সালের ১৪ জুন মারা যান। কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীরপ্রতীকের মৃত্যু হয় একই বছরের ২৫ জুন। তাঁদের আসনে উপনির্বাচনে ভোটের তারিখ ছিল ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশে ভোট হয়নি। অষ্টম সংসদের মেয়াদ শেষ হয় ওই বছরের ২৯ অক্টোবর। উপনির্বাচন হলেও নির্বাচিতরা মাত্র ৫২ দিনের জন্য এমপি হতেন।
তবে পুরো পাঁচ বছরেও উপনির্বাচন না হওয়ার নজির আছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ এবং ভোলা-২ আসন থেকে জয়ী হন আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভোলা-২ আসনের এমপি হিসেবে শপথ নিলে শূন্য হয় ভোলা-১। কিন্তু আইনি জটিলতায় সপ্তম সংসদের পুরো মেয়াদ আসনটি শূন্য থাকে।
ঢাকা-১৭ থেকে নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি হন জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। জেপি প্রার্থী আবদুল লতিফ মল্লিককে ২১ হাজার ৫৩৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি হন বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন না আসনটিতে।
দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে ফের প্রার্থী হন এরশাদ। কিন্তু ভোটের সপ্তাহখানেক আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফারুককে সমর্থন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে ১ লাখ ২৬ হাজার ভোটে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন ফারুক। তবে জীবনের শেষ চার বছর চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ সময় ছিলেন সিঙ্গাপুরে।
উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এবং বিএনপির বর্জন নিশ্চিত। জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, সব নির্বাচনে অংশ নেবে তাঁর দল। বক্তব্য জানা যায়নি আন্দালিভ রহমান পার্থের। আর সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হতে চান তিনি। নইলে দলের প্রতীকে ভোট করবেন।
মন্তব্য করুন