- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- রাজস্ব সংগ্রহে বিকল্প নেই অটোমেশনের
সাক্ষাৎকার
রাজস্ব সংগ্রহে বিকল্প নেই অটোমেশনের

ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার
ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সভাপতি। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট কেমন হওয়া উচিত– সে বিষয়ে সমকালের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির হোসেন
সমকাল : আপনার মতে কোন কোন বিষয়ে বাজেটে অগ্রাধিকার থাকা উচিত?
সামীর সাত্তার : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। পাশাপাশি নির্বাচনী বছর হওয়ায় এ বছরের বাজেট তুলনামূলকভাবে একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রণয়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার ও ঋণদাতা সংস্থার প্রস্তাব অনুযায়ী জিডিপিতে কর রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানোর চাপ তো আছেই। অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হওয়ার ফলে চলতি বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। এভাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়বে। এতে করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমবে। সে কারণে আমি মনে করি, অর্থনীতির এই ট্রানজিশনাল সময়ে করজাল বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পায়ন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অটোমেশন, সহজ ও ব্যবসাবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
সমকাল : ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন বাজেটে প্রধান প্রধান পদক্ষেপ কী থাকা উচিত?
সামীর সাত্তার : আসছে বাজেটে শিল্পায়ন সহায়ক আমদানি সহজীকরণ, স্থানীয় শিল্পায়ন শক্তিশালীকরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসনে বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি ব্যয়ের যৌক্তিক সংস্থান, করজাল ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানি সংকট নিরসন– ইত্যাদি বিষয়ে পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হবে এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ নির্দেশনা থাকবে। পাশাপাশি, তালিকভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার করহারের ব্যবধান কমাতে ২.৫ শতাংশ কর কমানো হবে। এ ছাড়া উভয় ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে ক্যাশ লেনদেনের সবোর্চ্চ সীমা ৩৬ লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক টার্নওভারের ভিত্তিতে নির্ধারণ করার একটি নির্দেশনা আসবে। ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরিতে এই সীমা প্রতি বছর আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
সমকাল : ভ্যাট সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হলে ব্যবসা ও পণ্যমূল্যের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে?
সামীর সাত্তার : বাড়তি মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হলে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। তাছাড়া, পণ্য ও সেবার সব পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যালু এডিশন সম্ভবও নয়। সে কারণে বর্তমানে যেমন বিভিন্ন খাতে ০.৫, ৪.৫, ৭.৫ এবং ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কাটার বিধান রয়েছে, তা থাকাই যুক্তিযুক্ত। আসলে ভ্যাট আদায় নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছে না এবং ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভ্যাট আদায় বাড়াতে ও ভ্যাটের হারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ইএফডি মেশিনের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে শতভাগ অটোমেশন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। একটি বিপণিবিতানের ১০০টি দোকানের ১০টি দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। ভ্যাট এড়াতে ক্রেতারা ওই ১০টি দোকানে কেনাকাটা করছেন না। এভাবে বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্তে ১৫ শতাংশ কেন, আরও বেশি ভ্যাট আরোপ করা হলেও রাজস্ব আদায় তেমন বাড়বে বলে মনে হয় না।
সমকাল : সার্বিকভাবে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ দরকার?
সামীর সাত্তার : বাংলাদেশের জিডিপিতে কর রাজস্বের পরিমাণ ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম। বর্তমানে মাত্র ২৮ থেকে ৩০ লাখ করদাতা তাঁদের রিটার্ন জমা দেন, যা জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। কর রাজস্বের পরিমাণ বাড়াতে আগামী ১০ বছরে করদাতার সংখ্যা ২ কোটিতে নিয়ে আসা প্রয়োজন। তাছাড়া, অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ৪৮ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কিন্তু ৯০ শতাংশ রাজস্ব এই দুই অঞ্চল থেকে আসায় রাজস্ব আহরণের চাপও এ দুই অঞ্চলে বেশি। করজাল বাড়াতে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। করজাল বাড়াতে শুধু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব সংগ্রহের প্রথাগত প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে অটোমেশনের বিকল্প নেই। যতদিন পর্যন্ত কর প্রশাসন শতভাগ অটোমেটেড না হতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং দ্রুততম সময়ে শতভাগ অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন