নারীকে যৌনকাজে লিপ্ত করার জন্য নারী পাচার হয়। এর দুটি দিকই আছে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ। বাংলাদেশ থেকে নারীদের বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আবার দেশের অভ্যন্তরে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় তাঁদের এ কাজে পাঠানো হচ্ছে।  ‘পতিতাবৃত্তি’ শব্দটিও এ ক্ষেত্রে আমি ব্যবহার করার পক্ষে নই। কারণ পতিতা তাঁরা, যাঁরা সমাজে পতিত হয়েছে। এটি একটি আরোপিত শব্দ। তাঁরা তো কেউ নিজ থেকে পতিতা হতে চাননি। এটি আমরা বানাই। বাজার অর্থনীতিতে এর একটি চাহিদা ও জোগান রয়েছে। এটি যুগ যুগ ধরে ছিল। এখনও আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নারী পাচার বন্ধ করতে, তাঁদের জোর করে দেহব্যবসায় যুক্ত করার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একটি কনভেনশন হয়েছিল। নারী অধিকারের প্রথম ধাপেই আলোচ্য বিষয় হিসেবে এসেছে নারী পাচারের বিষয়টি। দাবি ছিল– নারী পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। তবে তা সম্ভব হয়নি। কারণ এটি বাজার অর্থনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিকভাবে যে অবস্থান বাংলাদেশের, সেখানে ভারতই এ পাচারের মূল রুট। সেখান থেকে অন্য কোথায় পাচার করা হয়। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের শতশত নারী ভারত থেকে পাচার হয়ে পাকিস্তানে গিয়ে আটক হয়ে কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অর্থের লোভে মা-বাবা, ভাই, স্বামী বা এমন কোনো নিকটাত্মীয় তাঁকে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে নারী পাচার করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন এর সঙ্গে যুক্ত। মাদক বা ইয়াবা ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন বিশাল এক সিন্ডিকেট লক্ষ্য করা যায়, তেমনি নারী পাচারের পরিসরও বিশাল ও শক্তিশালী। এখানে একটা লাভের ব্যাপার আছে বলেই বিভিন্ন স্তরের মানুষের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়। একসময় ছিল ‘গলাকাটা পাসপোর্ট’, এখন তার অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তবে তা দিয়ে নারী পাচার ঠেকানো যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, সীমান্ত এলাকার কোনো কোনো গ্রাম দিনে ঘুমায়, রাতে সচল হয়। একসময় গরু পাচার হয়ে দেশে আসত।

এখন দেশ থেকে নারী পাচার হচ্ছে। দিনের বেলায়ও নারীদের গ্রামের অনেক ঘরে আটকে রাখা হয়। রাতে পাচার করা হয়। আবার পাচার হওয়া নারীরা যখন ফিরে আসছেন, তখন সমাজ তাদের গ্রহণ করছে না। এক পর্যায়ে অনেকে আগের সেই পথই বেছে নেন। এটি একট রিসাইকেলের মতো বারবার হচ্ছে। এই নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে আমাদের দেশের আইন প্রয়োগ ও তদারকিতেই শুধু সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি দরকার সীমান্তবর্তী দেশ ও যেসব দেশে ওই নারীরা পাচার হচ্ছেন, তার যৌথ প্রয়াস।