বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে। সরকারের চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় যা তিন গুণের বেশি। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের তুলনায় প্রায় ২ দশমিক ৭ গুণ। অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি কালো টাকা উদ্ধার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে ওই পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব বলে মনে করছে সমিতি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেট দিতে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে অর্থনীতি সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত আগামী বাজেট নিয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪ : বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় সহসভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম, মো. মোস্তাফিজুর রহমান সরদার, অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান, কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ১০ বছরে ছয়টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। এগুলো হচ্ছে– ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনিক শ্রেণির সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি ও মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

আবুল বারকাত বলেন, এখন মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ মূল্যস্ফীতি। মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে; ধারদেনা করে চলছে। ভোগ ব্যয় কমিয়েছে অনেকে। বিশেষ করে আমিষ খাওয়া বাদ দিয়েছে অনেক মানুষ। ওষুধপত্র কেনার সামর্থ্যও হারাচ্ছে অনেকে। সব মিলিয়ে নিম্ন-মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, সম্পদ কর আরোপ করে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব। বৈষম্য কমাতে হলে সম্পদের ওপর কর ধার্য করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে করের আয়তার বাইরে রাখতে হবে। বৈষম্য কমাতে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর থেকে রাজস্ব না বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন তিনি।

বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, গত ৫০ বছরে দেশে মোট পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট কালো টাকার মাত্র ২ শতাংশ উদ্ধার করতে পারলে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ সম্ভব। এ ছাড়া গত ৫০ বছরে মোট পুঞ্জীভূত অর্থ পাচারের পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। পাচারের ৫ শতাংশ উদ্ধার করা হলে রাজস্ব আসবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর এবং বিলাসী পণ্য আমদানিতে বেশি পরিমাণে শুল্ক আরোপ করা হলে প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। এভাবে পাঁচটি খাত থেকে রাজস্ব আসবে প্রায় ৭ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সরকার ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থনীতি সমিতি মনে করে, এনবিআরের মাধ্যমে ১১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব। আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর ৫ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যেতে পারে। বর্তমানে প্রায় ১০০ জন ব্যক্তি এক কোটি বা এর বেশি আয়কর দেন। সমিতির মতে, কমপক্ষে ১ কোটি টাকা কর দিতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার।

সমিতির প্রস্তাবে বলা হয়, আগামী ২০২৭-২৮ অর্থবছরের পর কয়েকটি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধ শুরু হলে এ খাতে ব্যয় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাবে। তাই আগামী বাজেটের ঘাটতি মেটাতে কোনো বৈদেশিক ঋণ না নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ জন্য বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল বারকাত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে কার সমস্যা হবে, বুঝতে পারছি না। তবে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের সমস্যা হবে না। কারণ তাদের আমেরিকার ভিসার দরকার নেই।’

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। যদিও সরকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে।