- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- সেবা আরও সহজ করবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক
সাক্ষাৎকার
সেবা আরও সহজ করবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক

কামরুল ইসলাম চৌধুরী
আগামী ২ জুন বেসরকারি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী এ উপলক্ষে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
সমকাল: ২৫ বছরে পদার্পণ করছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এ সময়ে আপনাদের অর্জন নিয়ে কিছু বলুন।
কামরুল ইসলাম: ১৯৯৯ সালের ২ জুন যাত্রা শুরু করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল জলিলের নেতৃত্বে শুরু থেকেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ বছরে এ ব্যাংকের আর্থিক সূচকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমানত বেড়ে গত ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম ২৮ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। গত বছর ২৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার আমদানি হয়েছে। ২০ হাজার ৯২২ কোটি টাকার রপ্তানি এবং ৬ হাজার ৮২৭ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে। পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১৩ কোটি টাকার।
সমকাল: চলতি বছরে আপনাদের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাই।
কামরুল ইসলাম: ব্যাংককে আরও এগিয়ে নিতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা হবে। ঋণ বিতরণে কৃষি ও এসএমই খাতকে অগ্রাধিকার, প্রান্তিক এলাকায় সেবা দিতে নতুন নতুন উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং খোলা হবে। অত্যাধুনিক ডিজিটাল পণ্য ও সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা আরও সহজ করা হবে।
সমকাল: ঋণ বিতরণে আপনারা কোন খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন?
কামরুল ইসলাম: বৃহৎ খাতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কৃষিপ্রধান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক ধরনের পণ্য চালু করা হয়েছে। চাকা, অনন্যা, সমৃদ্ধি, মৌসুমি, সঞ্চালক, উন্মেষ, উদয়ন, নবান্ন– এ রকম বিভিন্ন ঋণ কর্মসূচি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থানের প্রধান খাত তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন ঋণ সুবিধা রয়েছে।
সমকাল: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আপনারা কোন ধরনের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন?
কামরুল ইসলাম: বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা ব্যাংকের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করেছি। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসার গতি সচল রাখতে পেরেছি। ফলে আমানত ও ঋণ দুটোই বেড়েছে। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতে এলসি খোলা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দক্ষ কর্মী বাহিনী সচেষ্ট। ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ও সব শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার জন্য মোবাইল অ্যাপ ‘রেইনবো’ এবং কোর ব্যাংকিংয় সফটওয়্যার ‘টেমোনাস টি২৪’র সর্বশেষ ভার্সন আর’১৯ চালু করা হয়েছে।
সমকাল: উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সামগ্রিকভাবে সঞ্চয় প্রবণতার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। আমানত পেতে কোনো সমস্যায় পড়ছেন কি?
কামরুল ইসলাম: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ব্যাংক খাতে আমানত কমার মূল কারণ। এতে করে কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটেও পড়েছে। তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ২০২২ সালে আমাদের আমানতে প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে।
সমকাল: এখন বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে সংকট রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করছেন?
কামরুল ইসলাম: প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আনার বিষয়টি জোরদার করা হয়েছে। রপ্তানি আয় যথাসময়ে দেশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নীতিনির্ধারক ও ব্যাংকারের সমন্বয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
সমকাল: জুলাই থেকে নতুন সুদহার ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যবসা-বাণিজ্যে এর কোনো প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?
কামরুল ইসলাম: আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটা করিডোর ব্যবস্থা চালু করা হবে। যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুদহারের সীমা নির্ধারিত হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো কৃষি, সিএমএসএমইর মতো খাতে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত হবে। বর্তমানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকঋণের প্রায় ৬০ শতাংশই বড়দের নিয়ন্ত্রণে। আবার মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে চলেছে। ঋণের চাহিদার তুলনায় আমানত প্রবৃদ্ধি কমছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থাই হতে পারে চাহিদা ও জোগানের অসামঞ্জস্য দূর করার সমাধান।
মন্তব্য করুন