- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- নামের সঙ্গে মিল থাকায় হাজতবাস কৃষকের
নামের সঙ্গে মিল থাকায় হাজতবাস কৃষকের

২০২০ সালের ১০ এপ্রিল জুরাছড়ির বনযোগীছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হেমন্ত চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁর বাবা লোক বিদু চাকমা ১৭ জনের নাম উল্লেখ ও ছয়-সাতজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার ১৬ নম্বর আসামি চিক্কা চাকমা। তবে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ ছিল না।
মামলার সাক্ষী এরাইছড়ি মৌজার পানছড়ির কার্বারি রাজেশ চাকমা বলেন, ১৬ নম্বর অভিযুক্ত যে চিক্কার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি এ চিক্কা চাকমা নন। যিনি জেলহাজতে রয়েছেন, তিনি তাঁর আত্মীয় হন। আপসনামা দাখিলের বিষয়টি জানিয়ে মামলার বাদী লোক বিদু চাকমা বলেন, আদালতের কাছে অনুরোধ, গ্রেপ্তারকৃত চিক্কা চাকমাকে বিনা শর্তে যেন অব্যাহতি ও মুক্তি দেওয়া হয়।
চিক্কার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলা চলাকালীন একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়েছে। গত বছরের ২৬ এপ্রিল পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। গত ১৯ মে পুলিশ চিক্কা চাকমাকে ধরতে বালুখালী মুখ গ্রামে যায়। তবে তিনি ধর্মীয় কাজে বাইরে থাকায় তাঁর খোঁজ পায়নি।
এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কার্বারিদের পুলিশ সদস্যরা জানান, চিক্কার নামে হত্যা মামলা রয়েছে। থানায় যোগাযোগ করতে বলেন তাঁরা। পরে চিক্কা চাকমা স্থানীয়দের পরামর্শে ২২ মে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
চিক্কা চাকমার স্ত্রী শ্যামলিকা চাকমা বলেন, তাঁর স্বামী দিনমজুর। জমি চাষ করে কোনো রকমে জীবনযাপন করেন। তাঁর স্বামী জড়িত না হলেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। চিক্কা চাকমার শ্যালক পাথর চাকমা বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি জেলে যাওয়ার পর বোন পাঁচ দিন ধরে খাবার মুখে তোলেননি। স্বামীর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।
বালুখালী মুখ গ্রামের কার্বারি সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, চিক্কা চাকমা সহজ-সরল মানুষ। তিন কোনো হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না। ভুক্তভোগী চিক্কা চাকমা পরিচিত জানিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রবর্তক চাকমা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। তবে নিরীহ ব্যক্তির তথ্য মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা দুঃখজনক। আর চিক্কা চাকমাকে মামলার আসামি করায় এলাকায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা।
জুরাছড়ি থানার ওসি আলমগীর হাসান বলেন, এটি অনেক আগের ঘটনা। আগে যাঁরা থানায় দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা তদন্ত করেছেন। এ জন্য তাঁর কিছু করার ও বলার নেই।
জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বিপ্লব চাকমার ফোনে কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোষণ চাকমা বলেন, তাঁকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি প্রকৃত ব্যক্তি নন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে ইউপি চেয়ারম্যান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে লিখিত আনতে হবে। অধিকতর তদন্তের জন্য আদালতে অবেদনও করতে পারেন।
মন্তব্য করুন