মমহান আল্লাহ মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য দুনিয়াতে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা সবাই সহজ-সরল জীবনযাপন করেছেন। নবী-রাসুলদের জীবন কত সহজ-সরল ছিল তা আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর কর্মময় জীবন থেকে খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারি।
আল্লাহতায়ালা যার জন্য যতটুকু হায়াত বরাদ্দ করেন, সে ততটুকু সময়ই পৃথিবীতে থাকতে পারে। এর বেশি এক মুহূর্তও থাকার কোনো সুযোগ নেই।

এ আয়াতে স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহ্‌তায়ালা মানুষের পার্থিব জীবনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দেন। সুরা আল ইমরানের ১৪০ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কারও মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু তার মেয়াদকাল অবধারিত।’
তাকওয়ার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জানতে গিয়ে হজরত ওমর ফারুক (রা.) বিশিষ্ট সাহাবী হজরত উবায় ইবনে কাব (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাকওয়া’ কী? উত্তরে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আপনি কি কখনও কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছেন? হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। হজরত উবায় ইবনে কাব (রা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি সে কণ্টকাকীর্ণ পথ কীভাবে অতিক্রম করেছিলেন? হজরত ওমর (রা.) বললেন, ‘আমি সাবধানতা অবলম্বন করে দ্রুতগতিতে ওই পথ অতিক্রম করেছিলাম।’ তখন হজরত উবায় ইবনে কাব (রা.) বললেন, এটাই তাকওয়া।

যারা পার্থিব জীবনে সংযমী, যা বৈধ তা গ্রহণ করে এবং যা অবৈধ তা বর্জন করে, যা ন্যায় তা করে, যা অন্যায় তা থেকে দূরে থাকে, সৎ কাজে আদেশ করে এবং অসৎ কাজ করতে নিষেধ করে, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে, ছোট-বড় গোনাহ ও সন্দেহযুক্ত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে, তাঁরাই মুত্তাকিদের অন্তর্ভুক্ত।
দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সহজ-সরলভাবে নির্বাহ করা, সৎচিন্তা ও সৎকর্মের দ্বারা পরিচালনা করার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের সার্থকতা। একজন সত্যনিষ্ঠ, প্রজ্ঞাবান ও কঠোর সংযমী মানুষের কাছে পার্থিব জীবনে বিলাস-ব্যসন, ঐশ্বর্য, বিত্তবৈভব আকর্ষণীয় হতে পারে না।

দুনিয়ার জীবনে জীবিকা নির্বাহের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, তার অতিরিক্ত সবটুকু অন্যের প্রয়োজন পূরণে দান করে দেওয়ার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ জাকাত দ্বারা বিত্তবানদের ধনসম্পদ বিত্তহীন, সর্বহারা ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার বিধান এবং এর দ্বারা গরিব-মিসকিনদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ আয়াত করিমার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং সহজ-সরল জীবনযাপনের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা বলা, পরনিন্দা চর্চা, উপহাস করা, ক্ষমতা জাহির করা, গালমন্দ করা তাকওয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত।

মহানবীর (সা.) বিছানাপত্রও ছিল নিতান্ত অনাড়ম্বর। সাধারণত একটি চামড়া কিংবা উটের পশম দিয়ে তৈরি একটি কাপড়।

খাবার গ্রহণের ব্যাপারেও বিশ্বনবী (সা.) অত্যন্ত সহজ-সরল ছিলেন। খাবারের মধ্যে লবণ বেশি-কম কিংবা রান্নায় সমস্যা হলে এসব নিয়ে তিনি কখনও তিরস্কার করা বা অন্য কিছু বলতেন না। এমনকি অসন্তোষ প্রকাশও করতেন না।
বরং খাবার সুস্বাদু না হলেও তা বুঝতে দিতেন না। এ ধরনের খাবার খেয়ে যথাসম্ভব তিনি রাঁধুনির মনোকষ্ট দূর করার চেষ্টা করতেন।

হাদিস শরিফে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলে পাক (সা.) কখনও একাধারে তিন দিন পেটভরে খাবার খাননি। প্রতিটি পরিবারে তখনই জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে, যখন আমরা বিশ্বনবীর (সা.) আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করব। যেই আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণে পরিবার, সমাজ ও দেশের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সুতরাং, আমাদের উচিত দুনিয়ার অস্থায়ী ভোগবিলাসী জীবন পরিহার করে রাসুলে পাকের (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করা।

ড. মো. শাহজাহান কবীর: চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি