ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হামলার বিপরীতে এখন আক্রান্ত হচ্ছে রাশিয়াও। এরই মধ্যে নাটকীয়ভাবে তিন দফা হামলার শিকার হয়েছে দেশটির সীমান্ত এলাকা বেলগোরোদ। সবশেষ  বুধবার বড় ধরনের হামলা হয়েছে। এ সময় ড্রোন বিধ্বস্ত এবং তেল শোধনাগারে আগুন ধরে যায়। অবশ্য, অঞ্চলটির গভর্নরের দাবি ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। এই হামলার জন্য মস্কো ইউক্রেনকে দায়ী করলেও কিয়েভ এখনও তা স্বীকার করেনি। এছাড়া, সীমান্তের অভ্যন্তরে রুশ গোলাবারুদ ও রকেট লঞ্চারে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংসের দাবি করেছে রুশ প্রেসিডেন্টবিরোধী বিদ্রোহী একটি সশস্ত্র গ্রুপ। খবর সিএনএনের।

বেলগোরোদ ক্রমশই ভয়ংকর হামলার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছেন অঞ্চলটির গভর্নর ভ্যাচেস্লাভ গ্লাদকভ। তিনি বলেন, বুধবারের হামলায় শেবেকিনো শহরে ৮টি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ৪টি বাড়ি, একটি স্কুল এবং দুটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের কাছে একটি শিল্প কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে। এখানের পরিস্থিতি ভালো নেই।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে গ্লাদকভ জানান, একটি অস্থায়ী আবাসন কেন্দ্রে হামলায় একজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। ক্রিমিয়ার সংযুক্ত অঞ্চলের পূর্বের ক্রিসনোদার অঞ্চলের ইলস্কি তেল শোধনাগারে একটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার ভোরে সেখানে আগুন ধরে যায়।

এছাড়া, রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলেও বুধবার একটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি জানায়, অন্তত ১০টি ড্রোন ক্লিমোভস্কি জেলায় হামলার চেষ্টা করলে ভূপাতিত করা হয়। মূলত ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর ১৫ মাস পর ইউক্রেন এখন পাল্টা হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার অভ্যন্তরে। এটিকে যুদ্ধের নতুন মোড় বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনবিরোধী ভিন্নমতাবলম্বী যোদ্ধাদের দল দ্য ফ্রিডম ফর রাশিয়া লিজিয়ন বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, তারা বেলগোরোদ অঞ্চলের ভেতরে রুশ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে রুশ গোলাবারুদ ও রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে। সেখানে বিস্ফোরণের দুটি ভিডিও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে যোদ্ধাদের বলতে শোনা যায়, ‘রাশিয়ান স্বেচ্ছাসেবক কর্পসের (আরভিসি) ভাইদের সঙ্গে আমরা পুতিনের সেনাবাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণে কাজ করছি।’

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, বৃহস্পতিবার ‘ইউক্রেনীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তিনটি হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। এতে অন্তত ৩০ ইউক্রেনীয় যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
কিয়েভে বুধবার রাতে উৎক্ষেপণ করা ১০টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের সবক’টিই ধ্বংস করেছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ঘটনায় মা-শিশুসহ নিহত হয়েছে তিনজন। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ৪৮৪ শিশু নিহত আর ৯৯২ জন আহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় এ তথ্য জানায়।

এদিকে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দরকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মালদোভায় ইউরোপীয় নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন। এ বিষয়ে ন্যাটোর প্রধান বলেন, জোটের সকল সদস্যই ইউক্রেনের সদস্য প্রাপ্তির বিষয়ে একমত। তবে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, যুদ্ধে থাকা অবস্থায় নতুন সদস্যদের গ্রহণ করতে পারে না ন্যাটো।

এদিকে, রাশিয়ার ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা চীন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে বেইজিং। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শু জুয়েটিং বলেন, একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেন তাঁরা। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।