- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- ‘আদর্শ’ নহে
‘আদর্শ’ নহে
রাজধানীর মতিঝিল ‘আইডিয়াল’ স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনৈক ছাত্রীর সহিত পরিচালনা পর্ষদের প্রবীণ এক সদস্যের যেই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, উহা সামাজিক ও নৈতিক মানদণ্ডে ‘আদর্শ’ হইতে পারে না। খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অর্জিত ভাবমূর্তির সহিতও সংগতিপূর্ণ নহে। একাদশ শ্রেণির ঐ শিক্ষার্থী ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ এবং তাহার পরিবারের পক্ষেও কোনো অভিযোগ নাই– অভিযুক্তের এইরূপ যুক্তি নেহাত খোঁড়া বলিয়া বিবেচিত হইবে। বয়সের ব্যবধান কিংবা সীমা হৃদয়ঘটিত বিষয়ে সীমানাপ্রাচীর হিসাবে না দাঁড়াইলেও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘অভিভাবক’রূপে তিনি পদোচিত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেন নাই। তিনি যে অবস্থানগত প্রভাব কিংবা আনুষঙ্গিক প্রলোভন দেখাইয়া কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাহার পরিবারকে ফাঁদে ফেলেন নাই– উহার নিশ্চয়তা কী?
উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষও কোনো প্রকারে পরিহার করিতে পারেন না। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে প্রকাশ, তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তির একদা সহপাঠী। বিদ্যা গ্রহণসূত্রে কাহারও সতীর্থ হইতে বাধা নাই। কিন্তু তিনি যখন কাহারও বাগানবাড়িতে শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা সফরে’ লইয়া যান, তখন তাহা নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। এই অভিযোগ অমূলক নহে, তিনি ‘বন্ধুকৃত্য’ করিতে গিয়া আলোচ্য শিক্ষার্থী ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্যের নৈকট্যের সুযোগ দিয়াছেন। এই অভিযোগও রহিয়াছে, একদা ঢাকা বোর্ডের সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা এই বিদ্যায়তনে পড়াশোনার মানও এখন নিম্নমুখী। যেই শিক্ষায়তনের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এইরূপ কীর্তিমতী ও কীর্তিমান; ঊর্ধ্বমুখী থাকিবে অটুট কী কারণে সেই প্রতিষ্ঠান?
আমরা মনে করি, ঐ ভিডিওচিত্র লইয়া অভিভাবকগণের ক্ষোভ ন্যায়সংগত। ঘটনার তদন্তে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দিয়া গঠিত তদন্ত কমিটি যাহাতে নির্ধারিত সময়েই প্রতিবেদন জমা দেয়, আমরা সেইদিকে শ্যেনদৃষ্টি রাখিব। এখন উচিত হইবে পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও অধ্যক্ষকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান, যাহাতে তদন্তকর্ম প্রভাবমুক্ত রাখা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উত্থিত অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগও এই সুযোগে খতাইয়া দেখা যাইতে পারে বৈকি।
মন্তব্য করুন