- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- ডিআইটি পুকুর উদ্ধারের বার্তা
ডিআইটি পুকুর উদ্ধারের বার্তা
রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার শতবর্ষী ডিআইটি পুকুর উদ্ধার করিবার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউকের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পুকুরটি উদ্ধারে স্থানীয়দের আন্দোলন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার আইনি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র যেইভাবে আগাইয়া আসিয়াছেন, উহাও প্রশংসনীয়। পুনরায় প্রমাণিত হইল, দীর্ঘকাল বেদখলে থাকিলেও সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা সম্ভব। ডিআইটি পুকুরের দৃষ্টান্ত সম্মুখে রাখিয়া প্রশাসন চাহিলে অন্যান্য জলাধারও দখলমুক্ত করিতে পারে।
আমরা জানি, রাজধানীতে পুকুর-খালসহ অধিকাংশ জলাধারই বেদখল হইয়া রহিয়াছে। ইহার মধ্যে বেশ কিছু ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হইয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডের অঘটন ঘটিলে তাহা নিভাইতে পুকুরের পানি কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করিয়া থাকে। পানির উৎসের অভাবে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনিতে সংশ্লিষ্টদের অনেক বেগ পাইতে হইয়াছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ সালে যেইখানে একশত পুকুর ছিল, বর্তমানে তাহা কমিয়া ত্রিশের নিচে নামিয়াছে। এইভাবে পুকুর ও জলাধার কমিতে থাকিলে তাহা নগরবাসীর জন্য কতটা সংকটের কারণ হইবে তাহা বলাই বাহুল্য। এমতাবস্থায় ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে রাজউকের তৎপরতা আমাদের আশান্বিত করিয়াছে। ডিআইটি পুকুরের ক্ষেত্রে যাহা হইয়াছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বক্তব্য থেকে তাহা অনুমেয়। পর্চা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করিয়া অন্যান্য জলাধার উচ্ছেদেও রাজউকের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হউক। মনে রাখিতে হইবে, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি যে-ই দখল করুক, এমনকি সরকারি কোনো সংস্থার অবৈধ দখলে থাকিলেও উহাকে মুক্ত করিতে হইবে।
ডিআইটি পুকুর উদ্ধারের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষ, পরিবেশকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যেই পরিমাণ উৎসাহ দেখাইয়াছে, তাহা কেবল একটি পুকুর দখলমুক্ত করিয়া থামিলে চলিবে না। পানির উৎসের জন্য রাজধানীর জলাধারগুলি রক্ষা করা জরুরি। বর্তমানে যেইভাবে ভূগর্ভের পানির উপর রাজধানীবাসী নির্ভর করিতেছে, সেই কারণে পানির স্তর নিম্নে নামিয়া যাইতেছে। এমন অবস্থা চলিতে থাকিলে এক সময় হয়তো গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাইবে না। সেই জন্য বিদ্যমান পুকুর এবং খালের পানি উত্তম বিকল্প হইতে পারে। এই কারণেই এই সকল জলাধার সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হইবে। এইবার ঢাকায় যে তাপদাহ চলিতেছে, ইহাতেও জলাধার ভরাট করিবার প্রভাব রহিয়াছে। এমনকি বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে ঢাকা যেইভাবে পানিতে তলাইয়া যায়, ইহার কারণও জলাধারগুলি বেদখল হওয়া। বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশনে সরকারি হিসাবে যত পুকুর ও খাল রহিয়াছে, সেইগুলি উদ্ধারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা লইতে হইবে। ইহার পর বেদখল হওয়া অন্য জলাধারগুলিও উদ্ধার করা সম্ভব হইবে।
আমরা মনে করি, ইহাই ডিআইটি পুকুরের অবৈধ দখল উচ্ছেদের বার্তা।
মন্তব্য করুন