- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- পাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
পাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি-সংগৃহীত
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও র্যাগিংয়ের শিকার কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিকেল ৫টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে. এম. সালাহ উদ্দীনসহ ছাত্র উপদেষ্টা, সহকারী ছাত্র উপদেষ্টারা, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, সহকারী প্রক্টররা ও সব বিভাগের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
একই সঙ্গে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য ডিন ড. রাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি ৬ সদস্য বিশিষ্ট অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নাম না জানালেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রোকাইয়া ইসলাম। আর ভুক্তভোগী ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিমু রানী তালুকদার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. নাজমুল হোসেন সমকালকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের পরপরই এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে একজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টির্যাগিং কমিটি রয়েছে। তাদেরকে ঘটনা তদন্ত করে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী রাজাপুরের ৫ তলা বিশিষ্ট রব্বেজ টাওয়ারে অনেক ছাত্রী ভাড়া থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থীর কয়েকজন বন্ধু জানান, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে প্রথম বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিজেদের রুমে ডেকে নেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিমু রানী তালুকদার নিজেকে অসুস্থ দাবি করে যেতে রাজি হননি। পরে পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী রুকাইয়া ইসলাম, সাদিয়া পারভিন সোমা, তাসলিমা, গুলনাহার, সুমাইয়া, সাকিলা, সুমাইয়া, লোক প্রশাসন বিভাগের সায়েদা সুলতানা শাওন, ইংরেজি বিভাগের ইসরাত জাহান ইমুসহ মেসের কয়েকজন ইমিডিয়েট সিনিয়র শিমু রানী তালুকদারকে মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। তখন ওই সিনিয়ররা তাকে ম্যানার শেখানোর নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। এভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত কথিত ম্যানার শেখানোয় মেয়েটি অসুস্থ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছেন মেসের মালিক আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী শিমু রানী তালুদকার সমকালকে বলেন, আমি অনেকদিন থেকে অসুস্থ। কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরে সিনিয়র আপুরা বিভিন্নভাবে আমার দোষ ধরে যাচ্ছেন। আমার ব্যবহার ভালো না, সালাম দেই না, সম্মান করি না এভাবে নানা বিষয়ে দোষ ধরতে থাকেন। শনিবার রাতে আমাকে উনারা মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে ম্যানার শেখানোর নামে বকাঝকা করতে থাকেন। এরপর আমার শরীর খারাপ লাগলে আমি ওয়াশরুমে যাই কিন্তু উনারা আমাকে ওয়াশরুমে থেকে আবার ছাদে নিয়ে যান। তখন আমি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ি পরে আমার বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুকাইয়া ইসলাম সমকালকে বলেন, তাকে মানসিকভাবে কোনো হেনস্থা করা হয়নি। আমরা শুধুমাত্র মেসের নিয়ম জানানোর জন্য সব জুনিয়রকে ডেকেছিলাম। অভিযোগকারী মেয়েটির অসুস্থতার ব্যাপারে আমরা জানতাম না।
মন্তব্য করুন