
এক সময় ক্লাব বা বিভিন্ন জায়গায় যে জুয়া খেলা হতো, সময়ের পরিবর্তনে সেটিই ইন্টারনেটে ঢুকে পড়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে দিব্যি জুয়াড়িরা ক্যাসিনো খেলছে। তারা মজার জোকও তৈরি করেছে– ‘লাইভ ও অনলাইন ক্যাসিনোর মধ্যে পার্থক্য হলো, অনলাইন ক্যাসিনোতে আপনি একটি বাজি হারার পরে কাঁদতে পারেন, অথচ কেউ আপনাকে নিয়ে হাসবে না।’ কেউ না হাসলেও আপনারই হাসা উচিত নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে। ন্যাড়া নাকি একবারই বেলতলায় যায়। কিন্তু জুয়াড়িরা এতটাই অধম যে, বারবার হেরেও তাদের শিক্ষা হয় না।
সরকার চার বছর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল, যাকে বলা যায় সাঁড়াশি অভিযান। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়। ক্লাবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। দৃশ্যত অফলাইন জুয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও অনলাইনে এ কারবার যেভাবে প্রসারিত হয়েছে, তা বিস্মিত হওয়ার মতো। বলাবাহুল্য, সরকার অনলাইন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধেও অনমনীয়। সে জন্য দেখা গেছে, গত মাসেও অনলাইন জুয়ার অ্যাপ ডেভেলপারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যাসিনোর কয়েকশ ওয়েবসাইট। তারপরও অনলাইন জুয়া বন্ধ হচ্ছে না কেন?
কারণ এ লক্ষ্যে পদক্ষেপ অনেকটা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো।
দেশের আইনে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও বেআইনি এই কাজে কীভাবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কিংবা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা যাচ্ছে? আবার স্পোর্টসসহ অনেক ওয়েবসাইটে প্রকাশ্যে বাজি ধরার বিজ্ঞাপন আসছে। সেখানে ক্লিক করে কৌতূহলী অনেকেই হারিয়ে যেতে পারে এই অন্ধকার জগতে। এগুলো চলতে দিয়ে অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণ করা কীভাবে সম্ভব? এটা সত্য, কিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে ক্যাসিনোর অ্যাপ ডাউনলোড করা যায় না। কিন্তু অন্যভাবে সেগুলো ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়ার প্রচারণা চালানো কয়েকটি অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হয়েছে। এর মাধ্যমেও ক্যাসিনো বন্ধ হয়নি।
যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলা হচ্ছে, প্রথমত সেগুলোর প্রবেশ দেশে বন্ধ রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশের যে চক্র তাদের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছে, সেই চক্রকে ধরা প্রয়োজন। এর সঙ্গে অবশ্যই আর্থিক লেনদেন বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা প্রচলিত ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাসিনো সংক্রান্ত কোনো ওয়েবসাইটে যেন লেনদেন করা না যায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। যেহেতু অর্থ দিয়েই এসব ওয়েবসাইটে খেলতে হয়, সে জন্য অর্থ লেনদেনের পথ বন্ধ করার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন তো বটেই, সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলোর সদিচ্ছাও থাকা চাই। অনলাইনে জুয়া খেলার মাধ্যমে দেশ থেকে কত টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই। সংশ্লিষ্টরা চাইলে নিশ্চয় তা বের করতে পারেন।
বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়মিত নজরদারি করছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সমন্বয় করে বিষয়টিতে জোর দিলে কিছুটা সুফল নিশ্চয় পাওয়া যাবে। অনলাইন এক বিশাল জগৎ। এর অনেক কিছুই হয়তো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কিন্তু সদিচ্ছা ও নিয়মিত নজরদারির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিলে এর নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়।
সরকার ২০১৯ সালে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে যেভাবে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, সেই সদিচ্ছায় অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। বেশি দেরি হওয়ার আগেই এটা করা প্রয়োজন।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com
মন্তব্য করুন