- সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়
- ফিরাইয়া দাও স্বাধীন কৈশোর
ফিরাইয়া দাও স্বাধীন কৈশোর

দেশের ৭১ শতাংশ কিশোরী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার কারণে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করিতে পারে না বলিয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এডুকো’ পরিচালিত গবেষণায় যেই চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই পরিসংখ্যানও সভ্য সমাজে মানিয়া লওয়া কঠিন– ৮৭ শতাংশ কিশোরী হেনস্তা, মৌখিক হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকার এবং ৫৫ শতাংশই ভয়ের অনুভূতির মধ্যে সময় অতিবাহিত করিয়া থাকে। স্বীকার্য, আমাদের সমাজে কিশোরীর জন্য উপদ্রব ও নিপীড়ন নূতন নহে। প্রতিকার না পাইয়া যেই ২৬ শতাংশ আত্মহত্যার পথ বাছিয়া লয়, তাহারা প্রায়শ সংবাদমাধ্যমের ‘খবর’ হইয়া থাকে। কিন্তু কিশোরী হেনস্তা ৭১ শতাংশে পৌঁছাইবার চিত্র প্রমাণ করিতেছে, প্রতিদিন কাগজের পাতা ভরিয়া আসা খবরের বাহিরেও জীবনপাতার কত খবর অগোচরে রহিয়া যাইতেছে। দুখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষীয়মাণ কত সুকোমল ও সম্ভাবনাময় প্রাণ!
আমরা জানি, কৈশোর তথা বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের সর্বাধিক নাজুক ও ভঙ্গুর সময়। আপাত তুচ্ছ বিষয়েও চরম অভিমান হইতে পারে। কিন্তু খোদ পরিবারও কি এই বিষয়ে সচেতন? নুন আনিতে যাহাদের পান্তা ফুরায়; টিকিয়া থাকিবার কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত, সেই সকল পরিবারের কথা থাকুক; শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত পরিবারও কি কিশোরীর স্বাধীনতা কিংবা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন? ভাবিতে হইবে কিশোরীর পুষ্টির কথাও। ২০১৮ সালের এক জরিপে আমরা দেখিয়াছিলাম, দেশের এক-তৃতীয়াংশ কিশোরী রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টিতে ভুগিতেছে।
দেশের কিশোরী প্রজন্মের এই পরিস্থিতি বেদনা ও বিক্ষোভজাগানিয়া বটে। আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বিবর্তন ও বাস্তবতায় ‘রোদেলা দুপুরে মধ্য পুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার’ কাটিবার অবকাশ ফিরাইয়া আনা কঠিন; সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের কিশোরীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরাও করিতে পারিবে না? স্মর্তব্য, কিশোরীদের এহেন পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন অঘটন নহে। পারিবারিক, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা ও সুশাসনের যেই ঘাটতি প্রকট হইয়া উঠিয়াছে, সমাজের নাজুকতর অংশগুলি উহার দহন ও দংশন সর্বাধিক ভোগ করিতেছে। নীতিনির্ধারকদের জন্য স্মর্তব্য, একটি জাতির কৈশোর প্রজন্মের উন্নয়ন যদি ব্যাহত হয়, তবে উহার সম্মুখে অপেক্ষা করে স্বাস্থ্যগত, বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক বিরানকাল।
মন্তব্য করুন