ঢাকা বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

হাল ছাড়িও না, ইসি!

হাল ছাড়িও না, ইসি!

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন তথা ইসি কি হাল ছাড়িয়া দিয়াছে? বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই লক্ষণই স্পষ্ট। এতে বলা হইতেছে– আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করিবার বিষয়টি ধরিয়া লইয়াই ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ ভোটের প্রস্তুতি শুরু করিয়া দিয়াছে নির্বাচন কমিশন। ঐদিকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ হইতেও ইতোমধ্যে ‘সংবিধান নির্ধারিত সময়েই’ নির্বাচন করিবার বার্তা পৌঁছাইয়া দেওয়া হইয়াছে।

আমাদের প্রশ্ন, দায়িত্ব গ্রহণের পর দেড় বৎসরের অধিক সময়ে ইসি তাহা হইলে কী করিল? একজন নির্বাচন কমিশনার যদিও নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূক্ত আখ্যা দিয়াছেন; উহা অনেকের নিকট দায়িত্ব এড়াইবার অজুহাত মনে হইবে।

আমরা দেখিয়াছি, বর্তমান কমিশন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলির সহিত একাধিক দফা সংলাপ সম্পন্ন করিয়াছে। গত সপ্তাহে শুরু হইয়াছে আরেক দফা আলোচনা। গত দেড় বৎসরে সিইসি ও ইসিগণ সংবাদমাধ্যমেও পুনঃপুন প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়াছিলেন, তাহারা প্রধান বিরোধী দলগুলির আস্থা অর্জনে সক্ষম হইবেন।

গত মাসের প্রথমেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহিত বৈঠকের পর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অভিন্ন টেবিলে বসিয়া চা পান করিতে করিতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের পরামর্শ দিয়াছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ঐ সকল তৎপরতা দেখিয়া আমরাও আশান্বিত হইয়াছিলাম। এখন দেখা যাইতেছে, সকলই গরল ভেল!

স্বীকার্য, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হইয়া যাইতেছে ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী উহার পূর্বেকার ৯০ দিনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে হইবে। প্রায় ১২ কোটি ভোটারের ভোট গ্রহণের দাপ্তরিক ও সরঞ্জামগত প্রস্তুতিও সহজসাধ্য নহে। নভেম্বরে তপশিল ঘোষণা করিতে হইলে ইহার পূর্বে অক্টোবর হইতে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও কেহ অস্বীকার করিবে না। কিন্তু ভোটারই যদি উৎসাহ না পায়, তাহা হইলে এত আয়োজন কাহার জন্য? আর সকল দল বিশেষত প্রধান প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না আসিলে ভোটারগণ বিলক্ষণ উৎসাহ হারাইয়া ফেলিবে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ব্যতীত এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরাও যে ভোটকেন্দ্রে যাইতে উৎসাহ পান না– সেই প্রমাণ আমরা সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলিতেও প্রত্যক্ষ করিয়াছি। প্রতিপক্ষবিহীন উপনির্বাচনগুলিও ছিল তথৈবচ।

আমরা মনে করি, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় এখনও ফুরাইয়া যায় নাই। জনপ্রিয় বাংলা সংগীতে হাল না ছাড়িয়া কণ্ঠ জোরে ছাড়িবার তাগিদ দেওয়া হইয়াছে। ইসির ক্ষেত্রেও আমরা অভিন্ন তাগিদ দিতে চাহি। সংবিধান যেই কণ্ঠ ও শক্তি নির্বাচন কমিশনকে দিয়াছে, উহা সংলাপ ও আলোচনাকার্যে ব্যবহৃত হউক।

আরও পড়ুন