দুদকের প্রশংসনীয় গণশুনানি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উদ্যোগে বাগেরহাটে সম্প্রতি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সেবা লইয়া যেই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হইয়াছে, উহা ইতিবাচক এবং আশাজাগানিয়া। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণশুনানিতে ২০ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৭১টি ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ আসিয়াছে। সংখ্যাটি হয়তো বাস্তবতার নিরিখে নিমজ্জিত হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তবে শুনানিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকিয়া যেইভাবে তৎক্ষণাৎ সমাধান দিবার চেষ্টা করিয়াছেন, উহা প্রশংসনীয়।
দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে দুদকের প্রতিষ্ঠা হইলেও প্রতিষ্ঠানকে অনেকেই অকার্যকর মনে করেন। এমনকি, প্রতিষ্ঠান হইতে বিদায়কালে উহার এক চেয়ারম্যানই দুদককে নখদন্তহীন ব্যাঘ্র বলিয়া অভিহিত করিয়াছিলেন। অথচ আমরা জানি, প্রতিষ্ঠানটির হস্তে নাই নাই করিয়াও যতটা ক্ষমতা বিদ্যমান, উহা দুর্নীতিবাজদের হৃৎপিণ্ডে কাঁপন ধরাইবার জন্য যথেষ্ট। তৎসত্ত্বেও দুদক মেরুদণ্ড ঋজু করিয়া দাঁড়াইতে পারিতেছে বলিয়া অন্তত সচেতন মহলের নিকট অনুমিত নহে।
বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণান্তেও এমন হইবার হেতু কী? ইতোপূর্বে সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে, সরকারি অনেক দপ্তরে ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ লেখা থাকা সত্ত্বেও বহু দপ্তর দুর্নীতি ও অনিয়মে নিমজ্জিত। বাগেরহাটের অনুরূপ দেশব্যাপী নিয়মিত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হইলে হয়তো এহেন পরিস্থিতির কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটিবে। অনিয়ম-দুর্নীতিকে বলা হয় দেশের উন্নয়নের নীরব ঘাতক। এ কারণেই একাধিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণে অন্তত বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির ২ শতাংশ কম হইবার বিষয়টি ইতোপূর্বে উঠিয়া আসিয়াছে। অধিকন্তু দেশে অদ্য যে ধনবৈষম্য উদ্বেগজনক হারে প্রসারমাণ, উহার পশ্চাতে প্রধান ভূমিকা দুর্নীতির– কে না জানে! দুর্নীতি একদিকে ক্ষমতাধরদের ক্ষমতার অপব্যবহারের নগ্ন প্রকাশ, অন্যদিকে সম্পদ একই শ্রেণির হস্তে পুঞ্জীভূত হইতে সহায়তা করে। ইহার সামাজিক বিপদ সম্পর্কেও কেহ অজ্ঞাত নহে। অতএব যে কোনো মূল্যে যদ্রূপ দুর্নীতি দমন করিতে হইবে, তদ্রূপ এ কাজে দুদককে রাজনৈতিক-সামাজিক সকল প্রকার প্রভাবমুক্ত থাকিয়া সক্রিয় থাকিতে হইবে।