ঢাকা সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিদারুণ অবহেলা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিদারুণ অবহেলা

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

ডে  ঙ্গুর জীবাণুবাহী মশককুল যখন অবাধে দেশের প্রায় সর্বত্র হুল ফুটাইতেছে; সংকটাপন্ন রোগীর ভিড়ে হাসপাতালসমূহ উপচাইয়া পড়িতেছে; মৃতের সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করিয়াছে, তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ডেঙ্গু প্রতিরোধ বটিকার অনুসন্ধানে আমরা হাসিব না কাঁদিব, বুঝিতে পারিতেছি না। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই মন্ত্রণালয়ের অধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ তথা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের রাষ্ট্র-নির্ধারিত দায়িত্ব সম্পর্কে সকলেই অবগত। তদনুযায়ী মশক নিধনের দায়িত্বও প্রধানত উহাদের। সম্ভবত সেই কারণেই ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর চণ্ড রূপের পুনরাবৃত্তি প্রতিহতে মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে ‘ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা’ প্রস্তুত করে। কিন্তু শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অদ্যাবধি মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি জানেনই না এই নির্দেশিকার কথা। মধ্যখানে ২০২২ সালে প্রাণঘাতী এই রোগে মৃত্যু নূতন রেকর্ড করিলেও নির্দেশিকাটির খোঁজ পড়ে নাই। ঐ বৎসর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল ২৮১; ২০১৯ সালে ১৭৯; এই বৎসর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উহা ৯০০-প্রায়। অবাক কাণ্ড, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ গত জানুয়ারিতেই উক্ত নির্দেশিকা মাঠ পর্যায়ে প্রেরণের দাবি করিলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার নিকটবর্তী একটি জেলার উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার শাখা) সমকালকে জানাইয়াছেন, তাহারা জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী গত বৎসর কোনো কর্মপরিকল্পনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রেরণ করেন নাই; মন্ত্রণালয়ও কোনো তাগিদ প্রদান করে নাই। আমাদের নীতিনির্ধারকগণের কী অপূর্ব দায়িত্ববোধ!

‘জানুয়ারি হইতে ডিসেম্বর, মশক নিধন বছরভর’ স্লোগান-সংবলিত উক্ত নির্দেশিকায় বলা হইয়াছে– ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কমিটি থাকিবে। প্রতি বৎসর ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটিসমূহের নিকট হইতে পরিকল্পনা লইয়া স্থানীয় সরকার বিভাগ জানুয়ারির মধ্যে মাঠ পর্যায়ে চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রেরণ করিবে। উপরন্তু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হইতে সংগ্রহপূর্বক ঐ রোগীর আশপাশের অন্তত ৫০টি বাড়িতে এডিস মশা নিধনে অভিযান চালাইবে সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। নিঃসন্দেহে, যদি আন্তরিকতার সহিত নির্দেশিকাটি প্রতিপালিত হইত, এই বৎসরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এত ভয়াবহ রূপ লইত না। প্রতিদিন দুই-তিন সহস্র ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাপ্রার্থী হইত না। আর বেসামাল চিকিৎসাব্যবস্থার শিকার মফস্বলের রোগীদের ঢাকামুখী স্রোত আটকাইবার ব্যর্থ চেষ্টাস্বরূপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জেলা হইতে কোনো ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকায় না পাঠাইবার নির্দেশনা জারি করিতে হইত না।

যাহা হউক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ধন্যবাদার্হ অন্তত এই কথা স্বীকারের জন্য, জাতীয় নির্দেশিকাটি প্রণয়নের পর যেই গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাহা হয় নাই। আমাদের প্রত্যাশা, বিলম্বে হইলেও শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগ নহে, সংশ্লিষ্ট সকলেরই বোধোদয় ঘটুক; ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রশমন, তৎসহিত সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হউক।


আরও পড়ুন